বন্ধন কোণের ওপর নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল ও পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাব

নিঃসঙ্গ-ইলেকট্রনযুক্ত যৌগ অণু, AB3L (যেমন- :NH3, :NF3, :PH3) ও AB2L2 (যেমন- H2:O:, H2:S: ) এর বেলায় বন্ধন কোণের ওপর সংশ্লিষ্ট পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাব রয়েছে।

এক্ষেত্রে A = কেন্দ্রীয় পরমাণু, B = বন্ধনযুক্ত প্রান্তীয় পরমাণু ও L = নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল।

উপরোক্ত AB3L ও AB2L2 সংকেত যুক্ত প্রত্যেক যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর মধ্যে sp3 সংকরণ ঘটে; তাই চতুস্তলকীয় গঠন ও বন্ধন কোণ 109.28ˊ হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরমাণুতে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল থাকায় বন্ধন কোণ lp – bp এর বিকর্ষণের কারণে 109°28ˊ থেকে হ্রাস পায়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় পরমাণু ও বন্ধনযুক্ত প্রান্তীয় পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণেও বন্ধন ইলেকট্রন যুগলদ্বয়ের bp – bp মধ্যে বিকর্ষণের মাত্রা কম বেশি হয়ে থাকে।

(i) যৌগ অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা প্রান্তীয় পরমাণুর চেয়ে যত বেশি হয়, বন্ধন ইলেকট্রন যুগল কেন্দ্রীয় পরমাণুর দিকে তত বেশি সরে আসে। ফলে বন্ধন ইলেকট্রন যুগলদ্বয়ের bp – bp মধ্যে বিকর্ষণ বেশি হয় এবং বন্ধন কোণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

(ii) অপরদিকে, কেন্দ্রীয় পরমাণুর চেয়ে প্রান্তীয় পরমাণুর তড়িৎঋণাত্মকতা যত বেশি হয়, বন্ধন ইলেক্ট্রন যুগল কেন্দ্রীয় পরমাণুর চেয়ে প্রান্তীয় পরমাণুর দিকে তত বেশি সরে আসে। ফলে বন্ধন ইলেকট্রন যুগলদ্বয়ের bp – bp মধ্যে বিকর্ষণ কম হয় এবং বন্ধন কোণের পরিমাণ কমে যায়। যেমন:

(১) NH3 এর বন্ধন কোণ 107° হলেও NF3 এর বন্ধন কোণ 102°29′ বা 102.5° হয় কেন?–এর ব্যাখ্যা

NH3 ও NF3 অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণুর এর মধ্যে sp3 সংকরণ ঘটে।

তাই NH3 ও NF3 অণুতে নিঃসঙ্গ-ইলেকট্রন যুগল ও বন্ধন-ইলেকট্রন যুগল চতুস্তলকীয়ভাবে বিন্যস্ত না থেকে ত্রিকোণাকার পিরামিডের আকার ধারণ করে। আবার প্রত্যেক অণুতে উভয় পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে দুটি বন্ধন ইলেকট্রন যুগলের (bp – bp) মধ্যে বিকর্ষণের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন,

NF3 অণুতে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক F পরমাণু N-F বন্ধনের ইলেকট্রন যুগলকে বেশি মাত্রায় নিজের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু NH3 অণুতে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক N পরমাণু NH3 বন্ধনের ইলেকট্রন যুগলকে বেশি মাত্রায় নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে রাখে। তাই bp – bp বিকর্ষণের মাত্রা NF3 এর চেয়ে NH3 এর ক্ষেত্রে বেশি হয়। এছাড়া সংকর অরবিটালের নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল NH3অণুর চেয়ে NF3 অণুর bp এর ওপর বেশি বিকর্ষণ (lp – bp) ঘটিয়ে বন্ধন কোণকে অধিক হ্রাস করতে পারে। এজন্য NH3 অণুর বন্ধন কোণ <HNH এর মান 107° হয় এবং NF3 অণুর বন্ধন। কোণ <FNF এর মান অধিক হ্রাস পেয়ে 102.5° হয়ে থাকে।

(২) NH3 এর বন্ধন কোণ 107° হলেও PH3 এর বন্ধন কোণ 94° হয় কেন?–এর ব্যাখ্যা

NH3  ও PH3 অণু গঠনকালে প্রতি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরমাণু N ও P এর sp সংকরণ ঘটে। যেমন-

NH3 ও PH3 অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণু N ও P এর মধ্যে sp3 সংকরণ ঘটে। তাই NH3 ও PH3 অণুর গঠন চতুস্তলকীয় হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে NH3 ও PH3 অণুতে প্রতিক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরমাণু যেমন: N ও P পরমাণুতে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল থাকায় বন্ধন কোণ 1090 28ˊ থেকে হ্রাস পায়। আবার আমরা জানি, নিঃসঙ্গ ইলেকট্রনযুক্ত যৌগ অণু AB3Lএর বেলায় কেন্দ্রীয় পরমাণু (যেমন- A) এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বেশি এবং আকার ছোট অর্থাৎ ২য় পর্যায়ভুক্ত মৌল হলে এক্ষেত্রে বন্ধন কোণ তুলনামূলকভাবে ৩য় পর্যায়ভূক্ত একই গ্রুপের মৌলের যৌগ থেকে বেশি হয়। এক্ষেত্রে N ও P এর তাড়ৎ ঋণাত্মকতা হলো যথাক্রমে 3.0 ও 2.1।

NH3 অণুতে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক N পরমাণু NH3 বন্ধন ইলেকট্রন যুগলকে নিজের দিকে বেশি আকৃষ্ট করে। PH3 অণুতে কম তড়িৎ ঋণাত্মক P পরমাণু PH3 বন্ধন ইলেকট্রন যুগলকে নিজের দিকে কম আকৃষ্ট করে। তাই PH3 চেয়ে NH3 এর ক্ষেত্রে দুটি বন্ধন ইলেকট্রন যুগল (bp – bp) এর মধ্যে বিকর্ষণের মাত্রা বেশি হয়। এজন্য NH3 এর কোণ <HNH এর মান 107° এবং PH3 এর বন্ধন কোণ <HPH এর মান 94° হয়ে থাকে।

(৩) H2O এর বন্ধন কোণ 104°28ˊ হলেও H2S এর বন্ধন কোণ 90° হয় কেন? এর ব্যাখ্যা।

H2O ও H2S উভয় অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণু O ও S এর মধ্যে sp3 সংকরণ ঘটে এবং উভয় অণুতে দুটি করে নি:সঙ্গ ইলেকট্রন যুগল আছে।

NH3  ও PH3 অণু গঠনকালে প্রতি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরমাণু N ও P এর sp সংকরণ ঘটে। যেমন-

উভয় ক্ষেত্রে sp3 সংকরণ থাকা সত্ত্বেও H2O ও H2S এর প্রত্যেকের বেলায় দুটি করে নিঃসঙ্গ-ইলেকট্রন যুগল ও বন্ধন ইলেকট্রন যুগল lp – bp এর মধ্যে বিকর্ষণের ফলে বন্ধন কোণ 109°28ˊ থেকে হ্রাস পায়। আবার আমরা জানি, নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগলযুক্ত যৌগ অণু AB2L2এ বেলায় কেন্দ্রীয় পরমাণু (যেমন A) এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বেশি ও আকার ছোট অর্থাৎ ২য় পর্যায়ভুক্ত মৌল হলে তখন বন্ধন কোণ তুলনামূলকভাবে ৩য় পর্যায়ভুক্ত একই গ্রুপের মৌলের যৌগ থেকে বেশি হয়। এক্ষেত্রে O ও S এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা হলো যথাক্রমে 3.5 ও 2.5।

H2O অণুতে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক O পরমাণু O-H বন্ধন ইলেকট্রন যুগলকে নিজের দিকে বেশি আকৃষ্ট করে। কিন্তু H2S অণুতে কম তড়িৎ ঋণাত্মক S পরমাণু S-H বন্ধন ইলেকট্রন যুগলকে নিজের দিকে কম আকৃষ্ট করে। তাই H2S চেয়ে H2O এর ক্ষেত্রে দুটি বন্ধন ইলেকট্রন যুগল (bp – bp) এর মধ্যে বিকর্ষণের মাত্রা বেশি হয়। এজন্য H2O এর বন্ধন কোণ <HOH এর মান 104°28ˊ বা, 104.5° হয়; কিন্তু H2S এর বন্ধন কোণ <HSH এর মান হ্রাস পেয়ে 92° হয়ে থাকে।

sp3 সংকরিত কেন্দ্রীয় পরমাণুতে নিঃসঙ্গ-ইলেকট্রন যুগল ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাবে যৌগ অণুর আকৃতি ও বন্ধন কোণের পরিবর্তন :

যৌগ অণুঅরবিটাল সংকরণবন্ধন ইলেকট্রন জোড়নিঃসঙ্গ জোড়তড়িৎ ঋণাত্মকতাবন্ধন কোণঅণুর গঠন আকৃতি
NH3 NF3sp3 sp3৩ জোড়া ৩ জোড়া১ জোড়া ১ জোড়া3.0 – 2.1 3.0 – 4.0107° 102.5°ত্রিকোণাকার পিরামিড ত্রিকোণাকার পিরামিড
NH3 PH3sp3 sp3৩ জোড়া ৩ জোড়া১ জোড়া ১ জোড়া3.0 – 2.1 2.1 – 2.1107° 94°ত্রিকোণাকার পিরামিড ত্রিকোণাকার পিরামিড
H2O H2Ssp3 sp3৩ জোড়া ৩ জোড়া২ জোড়া ২ জোড়া3.5 – 2.1 2.5 – 2.1104.5° 92°বিকৃত চতুস্তলকের V আকৃতি বিকৃত চতুস্তলকের V আকৃতি

Leave a Reply