P- ব্লক মৌলের সকল প্রশ্নের উত্তর সমূহ

প্রশ্ন. P- ব্লক মৌল কী? এদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

উত্তর: যে সব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p অরবিটালে প্রবেশ করে সেগুলোকে p- ব্লক মৌল বলা হয়। পর্যায় সারণির গ্রুপ IIIA, IVA, VA; VIA. VIIA এবং O গ্রুপের He ব্যতীত মৌলসমূহ এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। মৌলের সংখ্যা 36 টি। এদের বহিঃস্তরের সাধারণ ইলেকট্রন বিন্যাস ns2np6 । [n হলো প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা, যা পর্যায় সংখ্যা নির্দেশ করে]। যেমন- Al (13) – 1s2 2s2 2p6 3s2 3p1

  এবং CI (17) –  1s2 2s2 2p6 3s2 3p5

এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ স্তরে p1 থেকৈ p6 ইলেকট্রন থাকে। এ ছাড়াও p-ব্লক মৌলসমূহের (নিষ্ক্রিয় গ্যাস বাদে) কিছু সাধারণ ধর্ম রয়েছে, যা নিম্নরূপ :

(i) অধিকাংশ মৌল ইলেকট্রোনেগেটিভ।

(ii) এরা তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী।

(iii) এরা পরিবর্তনশীল যোজ্যতা প্রদর্শন করে। এদের প্রতিটি গ্রুপের প্রথম মৌলটি বাদে থাকে বাকিগুলো পরিবর্তনশীল জারণ সংখ্যা দেখায় । (iv) এদের জারণ ও বিজারণ ক্ষমতা রয়েছে।

(v) এরা বর্ণহীন ও রঙিন উভয় যৌগ গঠনে সক্ষম হয়ে থাকে।

(vi) এদের মধ্যে ধাতু, অধাতু এবং অপধাতু তিন ধরনের মৌলই রয়েছে ।

(vii) শেষের দিকের p-ব্লক মৌলগুলো তীব্র তড়িৎ ঋণাত্মক। এরা তীব্র জারকরূপে কাজ করে।

(viii) এদের আয়নীকরণ শক্তি বাম হতে ডানে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

(ix) এদের ইলেকট্রন আসক্তিও বাম হতে ডানে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

(x) এই মৌলগুলোর একই গ্রুপে উপর হতে নিচের দিকে ঘনত্ব বাড়তে থাকে ।

(xi) p-ব্লকে মৌলগুলোর প্রতিটি গ্রুপের নিচের দিকের মৌলসমূহের মধ্যে নিস্ক্রিয় যুগল প্রভাব (Innert paireffect) লক্ষ করা যায় ।

(xii) অনেকগুলো p-ব্লক মৌলের মধ্যে বহুরূপতা লক্ষ করা যায়।

(xiii) এদের অক্সাইড সমূহ অম্লধর্মী তবে কিছু কিছু মৌলের অক্সাইড উভধর্মী ।

প্রশ্ন:  আদর্শ মৌল (Ideal elements) কী?

উত্তর:   প্রকৃতিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌল গুলো যতেষ্ঠ পরিমাণে পাওয়া যায়। যেকোনো মৌলকে প্রথম মৌলর ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হলে এ মৌলটির সাথে তৃতীয় পর্যায়ের মৌলটির ধর্মের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবধানে মৌলের ধমের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এজন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌলগুলোকে আদর্শ মৌল বলা হয়।

এছাড়া চতুর্থ পর্যায়ের K(19), Ca(20) এবং Ga(31) থেকে Kr(36) এ 8টি মৌলও আদর্শ মৌল। পঞ্চম পর্যায়ের Rb(37), Sr(38) এবং In(49) থেকে Xe(54) এ 8টি মৌলও আদর্শ মৌল। সপ্তম পর্যায়ের Fr(87) ও Ra(88) মৌলও আদর্শ মৌল।

প্রশ্ন:  প্রতিরূপী বা প্রতিনিধিত্ব মৌল কী?

উত্তর:   (Representative elements) যেসব মৌলের অভ্যন্তরীণ সকল অরবিটাল পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু যোজ্যতা স্তর অপূর্ণ থাকে তারা প্রতিরূপী মৌল বা আদর্শ মৌল । প্রতিরূপী মৌলসমূহের যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাস ns1 হতে ns2np5 হয়ে থাকে ।

প্রশ্ন:  হ্যালোজেন কী ?

উত্তর:  পর্যায় সারণির 17-তম গ্রুপের ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), আয়োডিন (I) ও অ্যাস্টাটিন (At) এ পাঁচটি মৌলকে হ্যালোজেন মৌল বলা হয়। হ্যালোজেন অর্থ সামুদ্রিক লবণ উৎপাদক। সামুদ্রিক লবণের উপাদান হিসেবে এদের পাওয়া যায় বলে এ ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন:  ছদ্ম হ্যালোজেন (Pseudohalogens) কী?

উত্তর:  দুই বা ততোধিক তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু যুক্ত হয়ে একক ঋণাত্মক অজৈব গ্রুপ সৃষ্টি করে যা হ্যালাইড আয়নের মতো সাদৃশ্য দেখায়। এ ধরনের আয়নগুলোকে ছদ্ম হ্যালাইড আয়ন বলে। সায়ানাইড আয়ন (CN), থায়োসায়ানেট আয়ন (SCN), সেলেনো সায়ানেট আয়ন (SeCN), সায়ানেট আয়ন (OCN)  ইত্যাদি। এদের মধ্যে আবার কিছু ডাইমারিক হিসাবে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- সায়ানোজেন [(CN)2] থায়োসায়ানোজেন [(SCN)2], সায়ানোজেন [SeCN)2], অ্যাজিডো কার্বন ডাইসালফাইড [(SCSN3)2] এ অণু হ্যালোজেন অণুর মতো একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে বলে এদেরকে ছদ্ম হ্যালোজেন বলা হয়।

প্রশ্ন:  আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ গঠন কী?

উত্তর:  প্রয়োজনীয় চাপ ও তাপমাত্রায় একটি ভারী হ্যালোজেনের সাথে বিজোড় সংখ্যক হালকা হ্যালোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে দ্বিমৌল যৌগ আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ গঠন করে। A যদি ভারী হ্যালোজেন ও B হালকা হ্যালোজেন পরমাণু হয় তবে এরা পরস্পর যুক্ত হয়ে AB, AB3, AB5 ও AB7 এ চার জাতীয় দ্বিমৌল যৌগ গঠন করে। এ দ্বিমৌল যৌগকে আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ বলা হয়। যেমন- BrF, BrCl, CIF, CIF3, BrF3, BrF5, CIF5, IF5, IF7 ইত্যাদি আন্তঃহ্যালোজেন যৌগের উদাহরণ। মূলত হ্যালোজেনসমূহের মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে এদের মধ্যে এ জাতীয় দ্বিমৌল যৌগ গঠিত হয়। হ্যালোজেনসমূহের মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য কম হওয়ায় এরূপ যৌগের প্রকৃতি হয় সমযোজী । এসব যৌগ উদ্ধায়ী এবং বিস্ফোরক প্রকৃতির। আয়োডিন ভারী হ্যালোজেন বলে বেশি সংখ্যক আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ গঠন করে।

প্রশ্ন: NCl5 এর অস্তিত্ব নেই কিন্তু PCl5 এর অস্তিত্ব আছে ব্যাখ্যা করো?

উত্তর: 

নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায় যে, N এর দ্বিতীয় শক্তিস্তরে (n = 2) d না থাকায়

যোজনী স্তর প্রসারিত হতে পারে না। কাজেই নাইট্রোজেনে সর্বদাই তিনটি অযুগ ইলেকট্রন থাকে। Cl পরমাণুর সাথে সিগমা বন্ধনের মাধ্যমে NCl3  গঠন করে কিন্তু NCl5 গঠন করতে পারে না অপরপক্ষে P এর তৃতীয় শক্তিস্তরে (n.= 3) তিনটি বিজোর ইলেকট্রন থাকায় তিনটি Cl  এর সাথে PCl3 গঠন করে। অবার ফাকা 3d অরবিটাল উপস্থিত থাকায় উত্তেজিত অবস্থায় 3s এর একটি ইলেকট্রন 3d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয়। ফলে পাঁচটি অযুগ্ম ইলেকট্রন সৃষ্টি হয়। এই পাঁচটি  ইলেকট্রন 5টি Cl পরমাণুর সাথে সিগমা বন্ধনের মাধ্যমে PCl5 গঠন করে। অর্থাৎ ফসফরাস সাধারণ অবস্থায় PCl3 গঠন করে এবং  উত্তেজিত অবস্থায় PCl5 গঠন করে।

প্রশ্ন:  SF4 এবং SF6-এর অস্তিত্ব আছে কিন্তু OF4 এবং OF6 এর অস্তিত্ব নেই কেন?

উত্তর: 

 ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায়, অক্সিজেনের দ্বিতীয় শক্তি স্তরে (n = 2) d-অরবিটাল না থাকায় যোজনী স্তর প্রসারিত হতে পারে না। অর্থাৎ অক্সিজেনে সর্বদাই দুটি অযুগ ইলেকট্রন থাকে যা দুটি মাত্র সমযোজী বন্ধন গঠন করতে পারে। এ কারণে অক্সিজেন OF4 ও OF6 গঠন করতে পারে না। অপরদিকে সালফারের তৃতীয় শক্তি স্তরে (n = 3) ফাকা d অরবিটাল উপস্থিত থাকায় উত্তেজিত অবস্থায় প্রথমে 3p অরবিটাল হতে একটি এবং পরে 3s অরবিটাল হতে আরও একটি ইলেকট্রন 3d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয়। ফলে সালফারের যোজনী স্তরে যথাক্রমে চারটি এবং ছয়টি অযুগ্ম ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় যা SF4 এবং SF6 যৌগ গঠনে সহায়ক। অর্থাৎ 3d অরবিটাল উপস্থিতির কারণে অক্সিজেন 2, 4 এবং 6 যোজ্যতা দেখায়।

প্রশ্ন:  স্বাভাবিক অবস্থায় CO2 গ্যাস, কিন্তু SiO2 কঠিন পদার্থ কেন ব্যাখ্যা করো?

উত্তর:   CO2 একটি অনু CO2 এর অণুতে একটি কার্বন পরমাণু দুটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে দুই জোড়া ইলেকট্রন শেয়ার করে দ্বিবন্ধন চাৱা যুক্ত থাকে। CO2 এর আণবিক গঠন সরলরৈখিক। যেমন:  

CO2 অণুসমূহের মধ্যে কেবল দুর্বল ভ্যানডার ওয়ালস বল কার্যকর থাকে। তাই সাধারণ তাপমাত্রায় CO2 হলো গ্যাস। এটি একক সমযোজী যৌগ অণু হওয়ায় এর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম। শুষ্ক বরফ বা কঠিন CO2 এর গলনাঙ্ক হলো  –56 0C।

অপরদিকে সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO2) হলো একটি পলিমার যৌগ (SiO2)n অর্থাৎ অসংখ্য SiO2 অণু পরস্পর যক্ত হয়ে বৃহৎ আকারের সুস্থিত গুচ্ছ অণু সৃষ্টি করে। এরূপ যৌগকে পলিমার যৌগ বা দৈত্যাকার অণু (giant molecule) বলে। SiO2 পলিমার গঠনে প্রতিটি Si পরমাণু চারটি O পরমাণুর সাথে এবং একটি O পরমাণু দুটি Si পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে চতুস্তলকীয় গঠন সৃষ্টি করে। প্রতিটি চতুস্তলক O পরমাণু দ্বারা যুক্ত হয়ে পলিমার শিকল (SiO2)n গঠন করে। এর পলিমার গঠন নিম্নরূপ :

পলিমার যৌগ (SiO2)n -এর গলনকালে বহু সমযোজী বন্ধন ভাঙ্গতে হয় এবং অধিক তাপ শক্তি শোষিত হয়। সুতরাং সিলিকন ডাইঅক্সাইড (SiO2)n  এর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি; যেমন গলনাঙ্ক 1610 0C ও ফুটনাঙ্ক 2230 0C এবং সাধারণ তাপমাত্রায় SiO2 হলো কঠিন কেলাসাকার পদার্থ।

প্রশ্ন:  CCl4 আর্দ্র-বিশ্লেষিত না কিন্তু SiCl4 আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয় কেন?

উত্তর: 

আর্দ্র-বিশ্লেষণের প্রথম শর্ত হলো কেন্দ্রীয় পরমাণুর একটি ফাঁকা d-অরবিটাল থাকা প্রয়োজন। এ ফাকা d -অরবিটালের সাথে পানি অণুর O পরমাণুর নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল একটি সন্নিবেশ বন্ধন যেন করতে পারে । দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত C-পরমাণুতে কোনো d -অরবিটাল থাকে না। তাই CCl4  পানিতে আর্দ্র-বিশ্লেষিত হতে পারে না।

CCl4 +    H2O   → কোনো বিক্রিয়া ঘটে না।

অপরদিকে SiCl4 এর কেন্দ্রীয় পরমাণু Si তৃতীয় পর্যায়ভুক্ত অধাতব মৌল হওয়ায় এবং এর 3d-অরবিটাল খালি থাকায় পানি অণুর O পরমাণুর সাথে সন্নিবেশ বন্ধন গঠনের মাধ্যমে আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়।

SiCl4 + 4H-OH →  4 HCl + Si(OH)4  [সিলিসিক এসিড]

বিকল্প ব্যাখ্যা : SiCl4 এর আর্দ্র বিশ্লেষণ নিম্ন মতে পানির অক্সিজেন পরমাণুর নিঃসঙ্গ ইলেক্ট্রন সহযোগে সন্নিবেশ, অন্তর্বর্তী যৌগ বা বিক্রিয়া-মধ্যক গঠনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এভাবে সৃষ্ট অন্তর্বর্তী-যৌগ থেকে পরবর্তী অপসারিত হয়ে -OHমূলক Si এর সাথে যুক্ত হয়।

এরূপে চার ধাপে পানি অণুর সাথে বিক্রিয়ায় SiCl4 এর চারটি Cl পরমাণু চারটি -OH  মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত থাকে।

SiCl4 + 4H-OH →  4 HCl + Si(OH)4  [সিলিসিক এসিড]

প্রাথমিক অবস্থায় এ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়া-মধ্যকে’ Si পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে ১০টি ইলেকট্রন বিদ্যমান থাকে মধ্যে চারটি Si – Cl বন্ধন থেকে চার জোড়া এবং Si  OH সন্নিবেশ বন্ধন থেকে এক জোড়া ইলেকট্রন রয়েছে। যেহেত সিলিকন তৃতীয় পর্যায়ের মৌল সেহেতু তার শূন্য 3d-অরবিটাল আছে, যেখানে H2O কর্তৃক যোগান ও শেয়ারকৃত ইলেকট্রন যুগল স্থান দেয়া সম্ভব; অন্য কথায় Si এর পক্ষে অষ্টক সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কার্বন দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি মৌল। পরমাণুর দ্বিতীয় শক্তিস্তরে 2d বলে কোনো অরবিটাল নেই। সুতরাং কার্বনের পক্ষে অষ্টক সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। সুতরাং পানির অণু CCl4 এর C পরমাণুর সাথে সন্নিবেশ বন্ধন সৃষ্টি করে বিক্রিয়া-মধ্যক বা অন্তর্বর্তী-যৌগ তৈরি করতে পারে না। এর ফলে CCl4 এর আর্দ্র বিশ্লেষণ হয় না।

প্রশ্ন:  নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পর সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় মৌল হলো N2 গ্যাস ব্যাখ্যা করো।

      অথবা N2 গ্যাস নিষ্ক্রিয় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় কেন?

উত্তর: 

নাইট্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 7N = 1s2 2s2        

থেকে বোঝা যায়, এতে তিনটি অর্ধপূর্ণ 2p অরবিটাল রয়েছে এবং তা সুষম ও অধিক স্থিতিশীল। আবার ২য় শক্তিস্তরে যোজ্যতা স্তর থাকায় পরমাণু আকারে ছোট। তাই দ্বিপরমাণুক (N2) অণু সৃষ্টির কালে নাইট্রোজেন-নাইট্রোজেন সিগমা (6) বন্ধন গঠনের পর উভয় N পরমাণুর 1টি করে 2 টি p অরবিটালের মধ্যে পাশাপাশি সুষ্ঠু অধিক্রমণ দ্বারা 2 টি পাই বন্ধন গঠিত হতে পারে (N=N) । তাই নাইট্রোজেন-নাইট্রোজেন ত্রিবন্ধন (NN) খুবই দৃঢ় হয়। এ ত্রিবন্ধনের বিয়োজন শক্তি 945 kJmol এ দূরত্ব 0.1098 nm হয়। এসব কারণে N2 অণু রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত নিষ্ক্রিয়। বস্তুত নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পর সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় মৌল হলো নাইট্রোজেন। তাই N2 গ্যাস নিষ্ক্রিয় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় যেমন, 3000 0C  NN  ত্রিবন্ধনের এক একটি করে ধাপে ধাপে তিনটি বন্ধন ভাঙ্গনের শেষে পারমাণবিক নাইট্রোজেন সৃষ্টির পর মৌল সক্রিয় হয়।

প্রশ্ন:  নাইট্রোজেন(N)  ও ফসফরাস(P) উভয় মৌল একই গ্রুপের হলেও নাইট্রোজেন গ্যাসীয় কিন্তু ফসফরাস কঠিন কেন?

উত্তর: ফসফরাস অণুর গঠন কাঠামো হতে দেখা যায় প্রতিটি ফসফরাস অণু চারটি ফসফরাস পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। এ চারটি ফসফরাস পরমাণু একটি চতুস্তলকের চারটি কৌণিক বিন্দুতে অবস্থান করে। প্রতিটি ফসফরাস পরমাণু আবার তিনটি ফসফরাস পরমাণুর সাথে সমযোজী একক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এ ধরনের গঠনের কারণে পরমাণুগুলোর মধ্যে একটি আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় এবং এ আকর্ষণ বল ফসফরাস পরমাণুগুলোকে সংযোজিত করে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক গঠনে পরিণত করে। এজন্য ফসফরাস কঠিন আকার ধারণ করে।

নাইট্রোজেন অণুর ক্ষেত্রে দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু সমযজী ত্রিবন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি নাইট্রোজেন অণু গঠন করে। এর গঠন NN  । N2 অণুতে নাইট্রোজেন পরমাণু দুটির মধ্যে আকর্ষণ বল খুব কম। এ কারণে নাইট্রোজেন অণুতে পরমাণু সংযোজিত হয়ে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক গঠন কাঠামো সৃষ্টি করে। এজন্য N2 অণু গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে।

প্রশ্ন: NF3 আর্দ্রবিশ্লেষিত হয় না কেন ?

উত্তর: আর্দ্র বিশ্লেষণকালে প্রথমে ট্রাইহ্যালাইড অণু পানি অণুর সাথে একটি নতুন সন্নিবেশ বন্ধন গঠন করে। তখন গ্রুপ-15 এর মৌল তথা N অথবা সংশ্লিষ্ট হ্যালোজেন পরমাণু-এ দুটির কোনো একটিতে ফাকা d-অরবিটাল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু  NF3 এর N পরমাণু অথবা F পরমাণুর কোনো একটিতেও d -অরবিটাল না থাকায় NF3আর্দ্র বিশ্লেষিত হয় না। যেমন:

NF3   + H2O(1) →  no reaction

প্রশ্ন: NCl3 আর্দ্রবিশ্লেষিত হয় কেন ?

উত্তর: আর্দ্র বিশ্লেষণকালে প্রথমে ট্রাইহ্যালাইড অণু পানি অণুর সাথে একটি নতুন সন্নিবেশ বন্ধন গঠন করে। তখন গ্রুপ-15 এর মৌল তথা N অথবা সংশ্লিষ্ট হ্যালোজেন পরমাণু-এ দুটির কোনো একটিতে ফাকা d-অরবিটাল থাকা প্রয়োজন। NCl3 এর N ফাঁকা d-অরবিটাল না থাকলেও Cl পরমাণুর তৃতীয় শক্তিস্তরে ফাঁকা d-অরবিটাল উপস্থিত। তাই NCl3 অণুর Cl পরমাণুর সাথে H2O এর অক্সিজেন পরমাণুর নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল দ্বারা সন্নিবেশ বন্ধন গঠন করতে পারে। পরে নিম্নমতে বন্ধন বিয়োজন ঘটে এবং NH3 ও HOCl উৎপন্ন হয়। যেমন: বিক্রিয়া কৌশল

NCl3(1)    + 3H2O(1) →  NH3(g)    +  3HOCl(1)

 প্রশ্ন: পানির সংস্পর্শে NCl3 অপেক্ষা PCl3 দ্রুত আর্দ্রবিশ্লেষিত হয় কেন ?

উত্তর:  পানির সংস্পর্শে NCl3 এর বন্ধন বিয়োজন অপেক্ষা PCl3 এর বন্ধন বিয়োজন দ্রুত ঘটে। কারণ N-এর তলনায় P এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা কম এবং Cl এর অধিকতর তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাবে P-Cl এর বন্ধনে পোলারিটির মাত্রা বেশি হয়। ফলে আর্দ্র-বিশ্লেষণের গতিও দ্রুত হয় । PCl3 এর আর্দ্র-বিশ্লেষণে H3PO3 এবং HCl উৎপন্ন হয়।

PCl3(1)     + 3H2O(1)  →  H3PO3(aq) + 3HCl(aq)

PCl3 এর আর্দ্র-বিশ্লেষণকালে P এবং Cl পরমাণু নিজ নিজ d অরবিটাল ব্যবহার করে পানি অণুর সাথে সন্নিবেশ বন্ধন  করতে সক্ষম এবং নিম্নলিখিতভাবে PClএর আর্দ্র-বিশ্লেষণ ঘটায়। ফলে H3PO3 এবং HCl উৎপন্ন হয়।

উল্লেখ্য PClএর আর্দ্র-বিশ্লেষণে H3PO3 এবং HCl  উৎপন্ন হয়। এ আর্দ্র-বিশ্লেষণ দু’ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপে ফসফরাস অক্সিক্লোরাইড (POCl3) ও HCl এবং দ্বিতীয় ধাপে POCl3এর আর্দ্র-বিশ্লেষণে H3PO4ও HCl উৎপন্ন হয়।

PCl5(s)   +  H2O(1)   →   POCl3(aq)    +    2HCl(aq)

POCl3(aq    +   3H2O(1)     →   H3PO4(aq)     +    3HCl(aq)    

Leave a Reply