নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের বিস্তারিত

প্রশ্ন: নাইট্রোজেন ফিক্সেশন কী?

উত্তর: বায়ুস্থ নাইট্রোজেন বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী যৌগে পরিণত করে স্থিরীকৃত করে রাখার পদ্ধতিকেই বলা হয় নাইট্রোজেন ফিক্সেশন।

প্রশ্ন: নাইট্রোজেন ফিক্সেশন পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:

নাইট্রোজেনের সবচেয়ে বড় উৎস বায়ুমণ্ডল। বায়ুমণ্ডলের শতকরা ৭৮% (আয়তনিক) নাইট্রোজেন। বায়ুমণ্ডল থেকে আমরা সরাসরি নাইট্রোজেন নিয়ে ব্যবহার করতে পারি না। তাই ব্যবহারের সুবিধার্থে আমরা সচরাচর নাইট্রোজেনকে কিছু ব্যবহার উপযোগী যৌগে পরিণত করে নেই। আর এই যে নাইট্রোজেন বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী যৌগে পরিণত করে স্থিরীকৃত করে রাখার পদ্ধতিকেই বলা হয় নাইট্রোজেন ফিক্সেশন। নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের দু-ধরনের পদ্ধতি আছে। ১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং ২. সাংশ্লেষণিক পদ্ধতি ।

১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতি আবার ২ প্রকার

i. বজ্রপাতে সংঘটিত বিক্রিয়া ও

ii. সিমবায়োটিক জীবাণু সমৃদ্ধ উদ্ভিদের শিকড় দ্বারা বায়ুর N2 গ্রহণ।

বজ্রপাত : বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে ফিক্স করার একটি অত্যন্ত সাধারণত পদ্ধতি হলো বজ্রপাত। বজ্রপাত-এ প্রায় 3000°C তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। এতে বায়ুমণ্ডলের N2 এবং O2 যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড গঠন করে যা পরে ঠাণ্ডা হয়ে 50°C-এ পৌছালে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডে পরিণত হয়। এ নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বৃষ্টির পানিতে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রিক এসিড তৈরি করে। এ নাইট্রিক এসিড বৃষ্টির পানিবাহিত হয়ে এসিড বৃষ্টি রূপে মাটিতে পড়ে। মাটির উপাদান CaO, CaCO3 প্রভৃতির সঙ্গে এ নাইট্রিক এসিড বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম নাইট্রেট গঠন করে।

এ ধাতব নাইট্রেট পানিতে দ্রবণীয় বলে দ্রবণ হিসেবে এটিকে উদ্ভিদ তার শিকড়ের মাধ্যমে গ্রহণ বায়ু করে। উদ্ভিদ দেহে এটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে পরিণত হয় যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টির প্রধান উপাদান। প্রাণি এ উদ্ভিদ বা তার ফল-ফসল গ্রহণ করলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন প্রাণিদেহে স্থানান্তরিত হয়ে প্রাণিজ প্রোটিনে পরিণত হয় যা প্রাণির যাবতীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। এভাবে বায়ুর নাইট্রোজেন নানা উপায়ে ফিক্সেশনের  মাধ্যমে পুরো জীব চক্রের প্রোটিন চাহিদা মেটায়। অবশ্য উদ্ভিদ ও প্রাণির মরণ ও পচনের ফলে ডিনাইট্রিফাইয়ং ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাবে এ প্রোটিন ভেঙ্গে আবার N2   হিসেবে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন (78%) বজ্রপাতে রূপান্তরিত যৌগ উদ্ভিদ হিসেবে মাটিতে যাওয়া, মাটির মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে যাওয়া এবং উদ্ভিদ-প্রাণির মরণ ও পচনের ফলে তা আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যাওয়ার এ চক্রাকার আবর্তনকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।

(ii) সিমবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বা বায়োলজিক্যাল ফিক্সেশন: সবুজ অ্যালগি, শিম, মটর, ছোলা ইত্যাদি লিডমিনাস জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ের নডুলে বা গুটিতে বসবাসকারী নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়া (Rhizobium) বা সিমবায়োটিক জীবাণু বায়ুর নাইট্রোজেনকে শোষণ করে, এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় NH3 গ্যাস ও NH4+ আয়নে পরিণত করে যা পরবর্তীতে NO2এবং NO3 আয়নে পরিণত হয়। উদ্ভিদ NO3 আয়ন শোষণ ও বিজারিত করে প্রোটিনে পরিণত করে।

২. সাংশ্লেষণিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী যৌগ সংশ্লেষণ করে N2  ফিক্সেশন করা যায়। যেমন:

i. NH3 সংশ্লেষণ : হেবার পদ্ধতিতে এক আয়তন N2 এবং 3 আয়তন H2 এর মিশ্রণকে 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে সংকুচিত করে 450–500°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত Fe প্রভাবক ও MoO প্রভাবক সহায়কের উপর দিয়ে অটোক্লেভে চালনা করলে NH3 উৎপন্ন হয়। অ্যামোনিয়াকে লিকার অ্যামোনিয়া হিসেবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায়।

N2 + 3 H2  →  2NH3

অ্যামোনিয়াকে আবার বিভিন্ন অ্যামোনিয়াম লবণে পরিণত করে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হয়।

NH3       +    HCl   →   NH4Cl

2NH3     +    H2SO4   →   (NH4)2SO4

ii. HNO3 ও নাইট্রেট লবণ : অসওয়াল্ড পদ্ধতিতে NH3 এবং বায়ুর 1: 9 আয়তনিক মিশ্রণকে 800 – 900°C তাপে উত্তপ্ত Pt-Rh প্রভাবকের উপর চালনা করলে NO উৎপন্ন হয়। একে 50°C উষ্ণতা পর্যন্ত শীতল। করলে NO অতিরিক্ত O2 দ্বারা জারিত হয়ে NO2 গঠন করে যা পানিতে শোষিত হয়ে HNO3 উৎপন্ন করে। এই HNO3 এবং এ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন নাইট্রেট লবণ সংরক্ষণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।

Leave a Reply