অ্যামাগা বক্রটি ও সংকোচনশীলতা গুনাঙ্কের ব্যাখ্যা

প্রশ্ন-  অ্যামাগার বক্র কী ? অ্যামাগা বক্রটি ব্যাখ্যা কর

উত্তর:-  বিজ্ঞানী অ্যামাগা কিছু বাস্তব গ্যাসের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য স্থির তাপমাত্রায় বিভিন্ন চাপে গ্যাসের আয়তন পরিমাপ করে PV এর মান নির্ণয় করেন এবং P-এর বিপরীতে PV এর মান বিন্দুপাত করে। PV-এর পরিবর্তন সূচক গ্রাফ অংকন করেন। এরূপে অংকিত রেখাকে অ্যামাগা বক্র (Amagat’s Curve) বলে ।

অ্যামাগা বক্রটির ব্যাখ্যা :-

 নিচের লেখচিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, যদি গ্যাস আদর্শ হত তবে স্থির তাপমাত্রায় PV এর মান সর্বদা স্থির থাকত অর্থাৎ P অক্ষের সমান্তরাল সরলরেখা পাওয়া যেত। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব  গ্যাসের জন্য P এর পরিবর্তনে PV এর মান পরিবর্তিত হতে দেখা। বিজ্ঞানী অ্যামাগা বাস্তব গ্যাসের জন্য নিম্নরূপ দুই ধরনের কার্ভ পেলেন।

১. প্রথম ধরনের কার্ভ সাধারণ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, নিয়ন প্রভৃতি গ্যাসের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। এ সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে P বৃদ্ধির সাথে সাথে PV এর মান ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থাৎ সর্বত্র PV এর মান আদর্শ গ্যাসের প্রত্যাশিত মান অপেক্ষা বড় হয়।

২.দ্বিতীয় ধরনের কার্ভ O2, N2, CO2 প্রভৃতি গ্যাসের ক্ষেত্রে PV বনাম P লেখচিত্র পাওয়া যায়। এ সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে P বৃদ্ধির সাথে সাথে PV এর মান প্রথম দিকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে এবং একটি নিম্নতম মানে পৌছার পর পুনরায় চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আদর্শ মান অপেক্ষা বেশি হয়। অর্থাৎ চাপ পরিবর্তিত হলে সমস্ত বাস্তব গ্যাসেরই PV এর মান পরিবর্তিত হবে।

প্রশ্ন-  গ্যাসের পেষণ গুণাংক বা সংকোচনশীলতা গুণাংক বা সংনম্যতা গুণাংক বলতে কী বুঝ ?

উত্তর:-  কোনো গ্যাসের চাপ ও আয়তনের গুণফলকে ঐ গ্যাসের তাপমাত্রা ও মোলার গ্যাস ধ্রুবকের গুণফল দ্বারা ভাগ করলে যে গুণক পাওয়া যায় তাকে ঐ গ্যাসের পেষণ গুণাংক বা সংকোচনশীলতা গুণাংক বা সংনম্যতা গুণাংক (Compressibility factor of gas) বলে।

n মোল আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে অবস্থার সমীকরণ হলো PVi = nRT

 যেহেতু বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ মেনে চলে না সেহেতু বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে, PV ≠  nRT

ধরা যাক, বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে, PV = ZnRT ; এখানে, Z = বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে, পেষণ গুণাংক বা সংকোচনশীলতা গুণাংক বা সংনম্যতা গুণাংক।

 অতএব, বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে, পেষণ গুণাংক বা সংকোচনশীলতা গুণাংক বা সংনম্যতা গুণাংক,

 বা, V = Vi                         [আর্দশ গ্যাসের ক্ষেত্রে Z = 1]                                ]

(i) যখন V = Vi তখন Z = 1 আতি নিম্ন চপে এবং উচ্চ তাপমাত্রায় বাস্তব গ্যাসটি আর্দশ গ্যাসের মত আচারন করে। বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে বয়লের তাপমাত্রায় এরুপ ঘটে।

(ii) যখন V  Vi তখন Z  1 অথাৎ সম চাপ ও তাপমা্ত্রায় বাস্তব গ্যাসটি আর্দশ গ্যাসের তুলনায় কম সংকোচনশীল এবং গ্যাসটির আচারন আর্দশ গ্যাস হতে বিচ্যুত হয়েছে। এ ধরনের বিচ্যুতি কে বলা হয় ধনাত্মক বিচ্যুতি।

(iii) যখন V  Vi তখন Z  1 অথাৎ সম চাপ ও তাপমা্ত্রায় বাস্তব গ্যাসটি আর্দশ গ্যাসের তুলনায় বেশি সংকোচনশীল এবং গ্যাসটির আচারন আর্দশ গ্যাস হতে বিচ্যুত হয়েছে। এ ধরনের বিচ্যুতি কে বলা হয় ঋনাত্মক বিচ্যুতি।

প্রশ্ন – সংকোচনশীলতা গুনাঙ্ক কি কি বিষয়ের  উপর নিভরশীল ? ব্যাখ্যা কর ?

উত্তর:-  বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে সংকোচনশীলতা গুনাঙ্ক  (Z) এর মান দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যেমন-

i) চাপ ও ii) তাপমাত্রা

 ii) চাপের প্রভাব :-

চিত্রে স্থির তাপমাত্রায় বিভিন্ন বাস্তব গ্যাসের সংকোচনশীলতা গুণাঙ্ক(Z) এর বিপরীতে চাপের (P) লেখচিত্র দেখানো হয়েছে। অতি নিম্নচাপে  বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের মত আচারন করে কারণ  অতি নিম্ন চাপে বাস্তব গ্যাসের কণা গুলোর মধ্যে আন্তঃআনবকি দূরত্ব অনেক বেশি এবং আন্তঃআনবকি আকর্ষন বল অত্যান্ত নগন্য হয়। তাই চাপ বাড়তে থাকলেও গ্যাসীয় অণুগুলোর গতিশক্তিকে উপেক্ষা করে আকর্ষন বল সৃষ্টি হতে পারে না। এজন্য H2, He এবং Ne প্রভৃতি গ্যাসরে ক্ষেত্রে চাপের মান বাড়তে থাকলে Z এর মান শুরু থেকেই বাড়তে থাকে এবং তাই সৃষ্ট রেখা গুলো লেখচিত্রে  কোন অবতল অংশ  না দেখিয়ে  সোজা উপর দিকে উঠতে থাকে। এ গ্যাস সমূহকে সহজেই তরলায়িত করা যায় না কারন নিম্ন চাপে আন্তঃআনবকি আকর্ষন বল অত্যান্ত নগন্য থাকে। কিস্তু  চাপ বাড়ার সাথে O2, N2 এবং CO2 প্রভৃতি গ্যাসরে ক্ষেত্রে আনবিক Z এর মান প্রথমে  কমে এবং পরে চাপের সাথে সাথে আবার বাড়তে থাকে। এ গ্যাস সমূহকে সহজেই তরলায়িত করা যায়।

ii) তাপমাত্রার প্রভাব :-

চিত্রে বিভিন্ন তাপমাত্রায় N2 গ্যাসের সংকোচনশীলতা গুণাঙ্ক (Z) এর বিপরীতে চাপের (P) লেখচিত্র দেখানো হয়েছে। চিত্র থেকে দেখা যায় যে নিম্ন তাপমাত্রায় Z এর মান প্রথমে হতেই কমতে থাকে। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় Z এর মান প্রথমে হতেই বাড়তে থাকে ।কিন্তু একটি বিশেষ  তাপমাত্রায় চাপের একটি বৃহত্তর পরিসর পর্যন্ত N2 গ্যাস আর্দশ গ্যাসের মত আচারন করে এবং বয়েলের সূত্র মেনে চলে। এই বিশেষ  তাপমাত্রা কে উক্ত গ্যাসের বয়েলের তাপমাত্রা বলে। সাধারনত দেখা যায় যেসব গ্যাসের বয়েলের উষ্ণতা যত বেশি সেই গ্যাস তত সহজে তরলীভূত হয়। H2, He, Ne প্রভৃতি গ্যাসরে বয়েলের উষ্ণতা সাধারন উষ্ণতা অপেক্ষ কম। এজন্য এদের PV বনাম  P অথবা Z বনাম P লেখচিত্রে অবতল অংশ দেখা যায় না। O2, N2,  CO2  প্রভৃতি গ্যাসরে বয়েলের উষ্ণতা সাধারন উষ্ণতা অপেক্ষ বেশি। এজন্য এদের PV বনাম P অথবা Z বনাম P লেখচিত্রে অবতল অংশ দেখা যায়।

Leave a Reply