প্রশ্ন :-ওজোন স্তর কাকে বলা হয় ?
উ:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে ১৫-৩০ কি.মি উচ্চতার মধ্যে ওজন গ্যাসযুক্ত যে ঘন বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোন মণ্ডল বা ওজোন স্তর বলা হয় ।
প্রশ্ন :- ওজোন গহ্বর কি ?
উ:- পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে 20-30 কিলোমিটার উচ্চতায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে অবস্থিত ওজোন স্তরের ওজোন ক্ষয়ের হওয়ার ফলে যে গহ্বর সৃষ্টি হয়, তাকে ওজোন হোল বলে ।বিজ্ঞান ফারম্যান ওজোন স্তরের ক্ষয় কে ওজোন হোল নামে চিহ্নিত করেন।
প্রশ্ন :-ওজোনস্তর ধ্বংসের কৌশল ব্যাখ্যা কর।
উ:- ওজোনস্তর ধ্বংস : CFC অতিমাত্রায় স্থিতিশীল হওয়ার কারণে এরা বিভিন্ন উৎস থেকে বিমুক্ত হয়ে অপরিবর্তিত অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে পৌঁছায়। এ স্তরে রয়েছে ওজোন (Ozone, O3) যা সূর্য থেকে প্রাপ্ত অতিবেগুনি (ultraviolet) রশ্মিকে শোষণ করে এবং আমাদেরকে এর ক্ষতিকারক প্রভাব (ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক) থেকে রক্ষা করে। এজন্য একে ‘পৃথিবীর ছাতা’ বলা হয়। এ ছাতাটি অধুনা ক্ষয় হয়ে ‘ওজোন ছিদ্র’ (ozone hole) সৃষ্টি হচ্ছে।
ওজোনস্তর ধ্বংসের কৌশল নিম্নরুপ:
১. প্রাকৃতিকভাবে সৌরকিরণে বায়ুর N2 ও O2 সংযোগে N2O উৎপন্ন হয় যা আলোক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় (photochemical process) ওযোনস্তর ক্ষয় করে।
২.তবে ওজোনস্তর ক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো মানবিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন উৎস থেকে CFC বায়ুতে বিমুক্ত হয়ে অপরিবর্তিত অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে পৌঁছায়। CFC অতিমাত্রায় স্থিতিশীল। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা CFC সমূহ ফ্রি- র্যাডিক্যাল বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তরকে ভেঙে অক্সিজেনে পরিণত করে। প্রকৃতপক্ষে CFC সমূহ অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করায় ফটোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয়। এটি ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন অক্সাইড ফ্রি র্যাডিক্যাল ও অক্সিজেন ফ্রি রেডিক্যাল সৃষ্টি করে। ক্লোরিন অক্সাইড ফ্রি র্যাডিক্যাল অক্সিজেন ফ্রি র্যাডিক্যালের সাথে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন ফ্রি র্যাডিক্যাল ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। পরিশেষে ওজোন ClO. এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে । এভাবে ওজোনস্তর নষ্ট হয় ।
a. CFC → Cl.
b. Cl. + O3 → ClO. + O2
এবং
$$O_2\xrightarrow{hv}2O^.$$
C. ClO. + O. → Cl. + O2
d. ClO. + O3 → ClO2 + O2
উল্লেখ্য, এ সকল বিক্রিয়া শিকলের ন্যায় চলতেই থাকে। ফলে একটি ক্লোরিন ফ্রি র্যাডিক্যাল হাজার হাজার ওজোন অণুকে ধ্বংস করে। এতে ওজোনস্তরে ছিদ্র সৃষ্টি হয়। এ ছিদ্র দিয়ে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি বিনা বাধায় ঢুকে পৃথিবীতে পৌঁছে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করে।
প্রশ্ন: ওজোন স্তর ক্ষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উ:- উপর প্রভাব: ওজোন স্তর ক্ষয় বা ধ্বংস প্রাপ্ত হলে UV রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এতে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার ও চোখে অসময়ে ছানি পড়বে। ত্বকে ক্যান্সারের জন্য UV রশ্মি অনেকাংশে দায়ী। এ রশ্মির প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসনালীর প্রদাহ, ব্রংকাইটিস ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হয়।
উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর উপর প্রভাব: UV রশ্মির প্রভাবে সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। এতে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায়। UV রশ্মির প্রভাবে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে মাছসহ যেসব জীব এদের খেয়ে বেঁচে থাকে তাদের উৎপাদন হ্রাস পাবে। খাদ্যশস্যে তেজষ্ক্রিয়তা দেখা দিবে। এর প্রভাবে ফল ও বীজের উৎকর্ষতা হ্রাস পাবে। জলবায়ুর উপর প্রভাব: বায়ুমণ্ডলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন স্তর বিলুপ্ত হলে UV রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসবে, এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলন বৃদ্ধি পাবে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নভূমি পানির নিচে ডুবে যাবে ।
প্রশ্ন: ওজোনস্তর ক্ষয়ের রোধে প্রয়োজণীয় ব্যবস্থাগুলো বর্ণনা কর।
উ: ওজোনস্তর ক্ষয় রোধে ব্যবস্থা : ওজোনস্তর নষ্ট রোধ করতে 1987 খ্রিষ্টাব্দে কানাডায় ‘মন্ট্রিয়াল প্রোটোকল’ নামে
আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি মতে—
(i) 1995 সালের মধ্যে CFCs ও হ্যালোনস্ উৎপাদন বন্ধ করা;
(ii) CCl4, CH3Br ও মিথাইল ক্লোরোফরম (CH3.CCl3) ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করা;
(iii) CFC-এরোসলে হাইড্রোকার্বন যেমন; আইসোবিউটেন (CH3)3CH ব্যবহার করা;
(iv) রেফ্রিজারেটরে CFC এর বদলে হাইড্রো-ক্লোরোফ্লোরো কার্বনসমূহ (HCFCs) যেমন CHF2Cl ব্যবহার করা। CFCs এর তুলনায় HCFCs ট্রপোস্ফিয়ারে কম স্থায়ী; কারণ H পরমাণু .OH মুক্তমূলক দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে পানি ও কার্বন মুক্তমূলক সৃষ্টি হয়।
CHF2Cl + .OH → H2O + .CF2Cl
(v) এছাড়া 2040 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে HCFCs কে ধারাবাহিকভাবে বাদ দিয়ে হাইড্রোফ্লোরো কার্বনসমূহ (HFCs) মোটর-কার এয়ারকন্ডিশনারে ব্যবহার করা। HFC যৌগে C1 পরমাণু নেই; F পরমাণু হলো O3 ভাঙ্গনে দুর্বল প্রভাবক। সুখবর হলো এ ব্যবস্থার ফলে ট্রপোস্ফিয়ারে হ্যালোজেন লেভেল কমতে শুরু করেছে। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে ক্ষয়প্রাপ্ত ওজোন স্তর পূর্ণ হতে শত বছর সময় নেবে ।
প্রশ্ন-ওজোন স্তর UV রশ্মি থেকে আমাদেরকে কি ভবে রক্ষ করে? ব্যাখ্যাকর।
উ: সূর্য রশ্মির সাথে UV রশি নির্গত হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। O3 স্তর এই UV রশ্মি শোষণ করে রাখে। UV রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। UV রশি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। O3 স্তর UV রশ্মি শোষণ করে এবং আমাদেরকে এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।