প্রশ্ন: ক্রান্তি তাপমাত্রা, ক্রান্তি চাপ ও ক্রান্তি আয়তন ও উক্ৰম তাপমাত্রা কী?
উত্তর:
ক্রান্তি তাপমাত্রা : প্রতিটি গ্যাসের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে, যে তাপমাত্রার উপরে যথেচ্ছ চাপ প্রয়োগ করেও কোনো গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে পরিণত করা যায় না কিন্তু ঐ তাপমাত্রা বা তার নিচের যে কোনো তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসকে চাপ প্রয়োগে সহজেই তরলে পরিণত হয়, সে নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে পদার্থের ক্রান্তি বা সন্ধি বা সংকট তাপমাত্রা বলে।
যেমন – CO2 এর ক্রান্তি তাপমাত্রা 31.1°C। অর্থাৎ 31.1°C তাপমাত্রার উপরে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করেও একে তরলে পরিনত করা যায় না। অথচ 31.1°C বা এর নিচে প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগে CO2, গ্যাসকে তরলে রূপান্তরিত করা যায়।
ক্রান্তি চাপ : 1 mol পরিমাণ কোনো গ্যাসকে তার ক্রান্তি তাপমাত্রায় তরলিত করতে সর্বনিম্ন যে চাপ প্রয়োগ করতে হয় পদার্থের ক্রান্তি চাপ বা সন্ধি চাপ বলে।
যেমন- 31.1°C তাপমাত্রায় 1 mol CO2 গ্যাসকে তরলে পরিণত করতে 72.9 atm চাপ প্রয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ CO2 এস চাপ হচ্ছে 72.9 atm চাপ।
ক্রান্তি আয়তন : ক্রান্তি চাপ ও ক্রান্তি. তাপমাত্রায় 1 mol পরিমাণের কোনো গ্যাসের আয়তনকে তার ক্রান্তি বা সন্ধি আয়তন বলা হয়। যেমন- CO2 গ্যাসের ক্রান্তি আয়তন 95.65 mL।
উক্ৰম তাপমাত্রা : প্রত্যেক গ্যাসের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে যার নিচে জুল থমসন প্রভাব প্রয়োগ করা যায়। গ্যাসের এ তাপমাত্রাকে উক্ৰম (inversion) তাপমাত্রা বলে। হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের ক্ষেত্রে উক্ৰম তাপমাত্রা যথাক্রমে – 80.15°C ও -240°C।
প্রশ্ন: গ্যাস সিলিন্ডারজাতকরণে মূলনীতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ১. বয়েল ও চার্লসের সূত্র প্রয়োগে : বয়েল ও চার্লসের সূত্র প্রয়োগ করে বিভিন্ন গ্যাসের সংনমন করা এবং তরলীকরণ সম্ভব। গতিতত্ত্বের স্বীকার্য অনুসারে তাপমাত্রা কমলে, গ্যাসাণুর গতিশক্তি কমতে থাকে এবং যথেষ্ট নিম্নতাপমাত্রায় (সন্ধি তাপমাত্রা বা তার নিচের তাপমাত্রা ) গ্যাসাণু পরস্পর নিকটে আসে এবং এদের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায় ফলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। তবে আসল কথা হলো বয়েলের সূত্রানুসারে ( V ∝1/P ) অতি উচ্চ চাপে গ্যাসের আয়তন কমে ফলে গ্যাস অণু কাছাকাছি চলে আসে আন্তঃআণবিক বল বৃদ্ধি পাওয়ায় তা তরলে পরিণত হয় এবং এই কার্যনীতি প্রকাশ করে গ্যাস সিলিন্ডারজাতকরণ করা যায়।
তবে কেবলমাত্র চাপ প্রয়োগ করেই সকল গ্যাস তরল নাও হতে পারে। সত্যিকার অর্থে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস করতে হয়। গ্যাসের গতিতত্ত্ব অনুসারে গ্যাসের তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রা থেকে কমতে থাকলে গ্যাসের অণুসমূহের গতিশক্তিও কমতে থাকে এবং সাথে সাথে গ্যাসের আয়তন কমে যায় (V∝T) এটি চার্লসের সত্রের একটি বিশেষ রূপ। এখানে যুক্তি হলো যথেষ্ট কম তাপমাত্রার কাছাকাছি আসা অল্প গতিবিশিষ্ট গ্যাসাণুগুলো পরস্পরের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলকে বাধা দিতে পারে না বিধায় এই বলের প্রভাবে নিকটে আসা গ্যাস চার্লসের সুত্রমতে তরলে পরিণত হয়।
২. হিম মিশ্রণের ব্যবহার বা ফ্যারাডে পদ্ধতি : হিম মিশ্রণ ব্যবহার করে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস করে গ্যাসকে তরল করা যায়। তবে হিম মিশ্রণ ব্যবহার করে তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামানো যায় না। তাই কেবল সীমিত সংখ্যক কিছু গ্যাস যেমন- CO2, NH3, Cl2, ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এ পদ্ধতিতে NaCl ও বরফের মিশ্রণ ব্যবহার করে –20°C এবং বিগলিত CaCl2 ও বরফের মিশ্রণ ব্যবহার করে -54°C এবং কঠিন CO2 ও ইথার মিশ্রণ ব্যবহার করে –110°C পর্যন্ত তাপমাত্রা নামানো যায়। বিজ্ঞানী ফ্যারাডে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্যাস তরল করেন।
৩. লিন্ডে পদ্ধতি : বিজ্ঞানী লিন্ডে জুল থমসন প্রভাব প্রয়োগ করে গ্যাস তরলীকরণ করেন। জুল থমসন প্রভাব হলো একটি গ্যাসকে অত্যধিক সংকুচিত করার পর হঠাৎ সম্প্রসারণ করা হলে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এর কারণ সংকুচিত অবস্থায় গ্যাসের অণুসমূহের মধ্যে তীব্র আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বিরাজ করে। সম্প্রসারণের সময় অণুসমূহ পরস্পর হতে দূরে সরে যেতে থাকে বলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণের বিপরীতে কাজ করতে হয়। এ কাজের জন্য যে শক্তি প্রয়োজন হয় তা গ্যাসের ভেতর থেকে শোষিত হয়। এজন্য জুল থমসন প্রভাবে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানী লিন্ডে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস তরলীকরণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতিতে একটি গ্যাসকে বারবার সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করা হলে জুল থমসন প্রভাব অনুসারে তার তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পেতে যখন সন্ধি তাপমাত্রায় পৌঁছায় তখন গ্যাস তরলে পরিণত হয়।