IR এর আওতায় সাধারণভাবে IR রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 780nm থেকে 106nm এর আবার বেশ কতগুলো ভাগ আছে।

যেমন:

i. নিকটবর্তী IR [Near IR (NIR)] : এর আওতায় হচ্ছে 780 – 2500nm. চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ব্যবহার ঘটে।

ii. মধ্য তরঙ্গ IR [Middle IR (MIR)] : এর আওতায় হচ্ছে 2500 – 5600 nm. জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক শনাক্ত করলে এটি ব্যবহৃত হয়।  

iii. দূরবর্তী IR  [Far IR] : এর আওতায় হচ্ছে 5600-106nm. চিকিৎসাক্ষেত্রে এর রশ্মির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

এর মধ্যে FIR (Far infrared) এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি বিধায় শক্তির দিক থেকে এটি দুর্বল। FIR মানুষের ত্বক ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে ধারে ধীরে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কো ক্ষতি না করে রক্ত চলাচল বৃদ্ধিসহ শরায় কার্যাবলীকে গতিশীল করে দেয়। শরীরে FIR এর মাত্রা বেশি হলে মানুষ সুস্থ থাকে, বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। FIR মাত্রা কম হলে মানুষ অসুস্থ বোধ করে। সদ্যপ্রসূত শিশুর মস্তিস্কের ক্ষত নিয়ে । স্ক্যানিং কাজে near-IR রশ্মি ব্যবহার করা হয়।

. Near-IR রশ্মি এর ব্যবহার:

Near-IR রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 700 – 2500 nm অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ছোট। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট হওয়ায় তাপশক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। এজন্য একে মাংশপেশির জমাট বাঁধা, অস্থি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ও মাংশপেশির ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। Near-IR রশ্মি প্রয়োগ করে মস্তিষ্কের রক্তের হিমোগ্লোবিনে কি পরিমাণ শোষিত হয়েছে তার পরিমাণ পরিমাপ করে মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয় করা হয়। DOT (Diffuse Optical Tomography) পদ্ধতি ব্যবহার করে মাথার খুলির (Cortex) এর কার্যক্রম নির্ণয় করা যায়। সিটি স্ক্যানিং পদ্ধতি মূলত এ পদ্ধতির মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। নবজাতকের মস্তিষ্কের ক্ষত ও গঠন কাঠামোর সঠিক ধারণা পেতে এটি বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ রশি অতি সহজেই স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহকোষ কলায় প্রবেশ করতে পারে ও মাংসপেশির ব্যথার নিরাময় ঘটায়। NIR প্রভাবে কোষের অভ্যন্তরে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) এর প্রবাহ বেড়ে যায়। NO এর মাধ্যমেই শরীরের স্নায়ু কোষের গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলো পরিবাহিত হয়। ব্যথা আক্রান্ত কোষে এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় ফলে ব্যথা ধীরে ধীরে উপশম হয়। স্নায়ু কোষের ব্যথা অনুভূতি কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি রাসায়নিক উপাদান প্রধান ভূমিকা রাখে একটি হলো। অ্যাসিটাইলকোলিন (Acetylcholine) ও অপরটি হলো ব্রাডিকিনিন (Bradykinin)। NIR রশ্মির প্রভাবে এ দুটি উপাদান সক্রিয়তা লাভ করে।

.  Middle-IR রশ্মি এর ব্যবহার:

Middle-IR রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 2500 – 5600 nm বিকিরিত আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি হয়, উৎপাদনের হার ও পরিমাণ near-IR থেকে কম হয়। তবে এটি জৈব কার্যকরী মূলক শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

.  FIR রশ্মি এর ব্যবহার:

রোগ নিরাময়ে FIR রশ্মি বা FIR Therapy এর ভূমিকা:

১. FIR রশ্মি দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দেহের সূক্ষ্ম নালীকে সম্প্রসারণ করে। এতে রক্তের প্রবাহ, রক্তের মাধ্যমে। দেহের কোমল টিস্যুতে অক্সিজেন সঞ্চালন, রক্ত ও টিস্যুর মধ্যে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

২. FIR রশ্মি দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে বিধায় মেটাবলিজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্তের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকর চর্বি দ্রবীভূত হয়ে যায়, ফলে রক্ত নালীতে বিষাক্ত পদার্থ জমতে দেয় না। এতে লিম্ফোসাইটের গতিশীলতা বেড়ে যায়, রক্তে শ্বেত কণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

৩. FIR রশ্মি ক্যান্সার বা টিউমার আক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এছাড়া রিউমেটিক আর্থারাইটিস, বাত রোগ, ডায়াবেটিকস, চর্মরোগ, FIR এর সাহায্যে রোগ নির্ণয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা, মাংশ পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, লিভারের রোগ, আকুপাঙ্কচার, মচকানো ইত্যাদি

রোগে ব্যবহার করা হয়।

৪. নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনোসাইটিস ও শ্বাসনালী প্রবাহের ক্ষেত্রে এবং ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া,ফাঙ্গাস ও প্যারাসাইট জাতীয় রোগ জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে FIR ব্যবহার করা হয়।

৫. মানুষের চামড়ার ভিতরে থাকা থ্যালামেনস্ফোলন অবলোহিত রশ্মি থেকে তাপ নিয়ে, ধমনী ও শিরাকে পাস করে এবং রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। যা উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়।

৬. তুকের সৌন্দর্যবর্ধন এবং ত্বকের কোষে এনজাইম কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও অবলোহিত তাপ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *