ইউরিয়া একটি নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ যা সার হিসাবে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। এতে বিদ্যমান নাইট্রোজেনের  পরিমান 46 % ।  উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম সার হিসাবে ইউরিয়া সরাকে ব্যাবহার করা হয় । এ ছাড়া প্লাস্টিক, আঠা,রেজিন এবং মেলামাইন ইত্যাদি  শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।

ইউরিয়া প্রস্তুতি:-

বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোলার সর্বপ্রথম 1828 সালে NH4Cl দ্রবণে Pb(CNO)2 দ্রবণ যোগ করে PbCl2 এর সাদা অধঃক্ষেপ এবং অ্যামোনিয়াম সায়ানেট (NH4CNO) দ্রবণ প্রস্তুত করেন। পরে পরিস্রাবণ করে অ্যামোনিয়াম সায়ানেট (NH4CNO) দ্রবণ পৃথক করে, যখন উত্তপ্ত করে সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করেন তখন অনাকাঙিক্ষতভাবে ইউরিয়া প্রস্তুত হয় ।

ইউরিয়া বানিজ্যিক প্রস্তুতি:-

১মধাপ:- উপযুক্ত প্রভাববের উপস্থিতিতে স্টিম ও প্রকৃতিক গ্যাসের বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত CO2 এবং হেবার বস প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত তরল NH3 কে 200atm চাপে সংকুচিত করে স্টিল নির্মিত অটোক্লেভে স্টিমের সাহায্যে 160-180 তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে CO2 এবং তরল NH3 বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম কার্বমেট উৎপন্ন করে।

২য় ধাপ:- ১ম ধাপে উৎপন্ন অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) কে 130-140 উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) বিয়োজিত হয়ে ইউরিয়া (H2N-CO-NH2)উৎপন্ন করে।

এ ভাবে প্রাপ্ত  অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) এর 40-60% ইউরিয়াতে রুপান্তরিত হয়। ১ম ও ২য় ধাপে অবিক্রিয়কৃত  অংশ গুলো ইউরিয়া পুনঃউৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

প্রকৃতিক গ্যাস হতে ইউরিয়া প্রস্তুতি:

প্রাকৃতিক গ্যাস ও বায়ুর মিশ্রণকে স্টিমের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া ঘটিয়ে H2 এবং তরল বায়ু হতে N2 প্রন্তুত করা হয়। পরবর্তীতে হেবার প্রভাবকের (প্রভাবক Fe চূর্ণ, প্রভাবক সহায়ক Al2O3 বা Mo)  উপস্থিতে হেবার বস প্রণালীতে NH3 প্রস্তুত করা হয়। অতঃপর তরল NH3 এবং CO2 দুই ধাপে বিক্রিয়া করে ইউরিয়া উৎপন্ন করে।

প্রবাহ চিত্র:-

 

ইউরিয়া সারের দূষকসমূহের বর্ণনা:-

কৃষি কাজে প্রয়োগকৃত অব্যবহৃত ইউরিয়া বৃষ্টির পানির সংঙ্গে ধুয়ে জমি থেকে পুকুর, খাল বিল এবং নদীতে পড়ে পানিকে দূষিত করে। পানিতে ইউরিয়া সারের উপন্থিতিতে ‍নিম্লবর্ণিত দূষক সমূহ উদ্ভব হয়:

১. পানিতে ইউরিয়া উপন্থিতির কারণে শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ দ্রুত হারে বাড়ে অথাৎ ইউট্রিফিকেশন হয় এবং যা পরবর্তীতে পঁচে দূগন্ধ ছড়ায়। পঁচা উদ্ভিদ পানিতে মিশে পানির আক্সিজেন তথা পানির DO হ্রাস করে । ফলে জলজ প্রাণীর জীবন ধারন কঠিন হয়ে পড়ে ।

২. ইউরিয়া সার মাত্রারিতিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়; এর ফলে-

(a) উপকারী ব্যাকটেরিয়া, ডিকমেলাজার এবং ডেট্রিভোর জাতীয় জীব মারা যায়।

(b) মৃত্তিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ হিউমাস তৈরি বাধা প্রাপ্ত হয় ।

(c) ক্ষতিকর প্যাথোজেনিক Fungi বৃদ্ধি পায় ।

৩. জমিতে ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে শাক-সবজি, লতা-পাতা এবং ঘাস ইত্যাদিতে নাইট্রেট আয়নের পরিমাণ বেড়ে যায়। এরপ শাক-সবজি সরাসরি ভক্ষন বা গবাদি পশুর দুধ ও মাংস গ্রহনের মাধ্যমে মানব দেহে নাইট্রেট আয়ন প্রবেশ করে। এর ফলে-

(a) শরীলে ক্ষতিকর নাইট্রোজেনাস পদার্থ বেড়ে যায়।

(b) পাকস্থলী ক্যান্সার, Blu baby Syndrome অথবা Methaemoglo Binaemia এর মতো রোগ হয়।

(c) পাকস্থলীর Micobe নাইট্রেটকে নাইট্রাইটে পরিণত করে, যা রত্তের কিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে রত্তে বহন ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে ডাইরিয়া,বমি-বমি ভাব এবং শিশুর চেহারা নীল হয়ে পড়ে।

4 thoughts to “ইউরিয়া শিল্পের বিস্তারিত আলোচনা

  • Fatema Akther Mumu

    Thank you sir for giving us this information

    Reply
  • Sabbir

    Very helpful for a studen. ❤

    Reply
  • Sabbir

    Very helpful for a student❤

    Reply

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *