দ্রাবকের মধ্যে দ্রবের কণার আকারের ওপর ভিত্তি করে দ্রবণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
১. প্রকৃত দ্রবণ (True solution)
২. কলয়েড দ্রবণ (Colloidal solution)
৩. সাসপেনশন (Suspension)
১. প্রকৃত দ্রবণ :
প্রকৃত দ্রবণ যখন কো কোন দ্রাবকে কোকো দ্রবের কণাগুলো 10-8 cm ব্যাসের কিংবা আরও ক্ষুদ্র কণায় বিভাজিত হয়ে দ্রাবকের সঙ্গে মিশে স্বচ্ছ, সমসত্ত্ব ও স্থায়ী মিশ্রণ উৎপন্ন করে। মিশ্রণ থেকে দ্রবের কণাগুলো সহজেই ফিল্টার কাগজ বা পাচমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে খুব সহজে যেতে পারে তখন সেই স্বচ্ছ, সমসত্ত্ব ও স্থায়ী মিশ্রণকে প্রকৃত দ্রবণ বলে। যেমন— পানিতে সাধারণ লবণ, চিনি, ইউরিয়া ইত্যাদির দ্রবণ।
বৈশিষ্ট্য:
১.প্রকৃত দ্রবণের দ্রবের কণাগুলোর ব্যাস 10-8 cm বা এর চেয়ে আরো ছোট হয়।
২.প্রকৃত দ্রবণের দ্রবের কণাগুলোকে খালি চোখে সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র, এমনকি অতি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেওদেখা যায় না।
৩.প্রকৃত দ্রবণের দ্রবের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজ বা পার্চমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে সহজেই যেতে পারে।
৪.প্রকৃতি দ্রবণ স্বচ্ছ, সমসত্ত্ব ও স্থায়ী হয়।
৫.প্রকৃতি দ্রবণের বর্ণ দ্রাবকের বর্ণের ওপর নির্ভর করে। দ্রাবক বর্ণহীন হলে দ্রবণের বর্ণ দ্রবের কণার বর্ণের ওপরনির্ভর করে। ।
৬.প্রকৃত দ্রবণে আলোকরশি চালনা করলে আলোকরশ্মির কোনো প্রতিফলন বা বিচ্ছুরণ ঘটে না।
৭. প্রকৃত দ্রবণ ব্রাউনীয় গতি প্রদর্শন করে না।
৮. প্রকৃতি দ্রবণের দ্রব্যের কণাগুলো দ্রুত ব্যাপিত হয়।
২. কলয়েড দ্রবণ:
যখন কোনো দ্রাবকের মধ্যে কোনো দ্রবের কণাগুলো 10–7 cm থেকে 10–5 cm এর ব্যাসের ক্ষুদ্র কণায় বিভাজিত হয়ে অসমসত্ত অসমসত্ত্ব কিন্তু স্থায়ী মিশ্রণ উৎপন্ন করে তখন সেই মিশ্রণকে কলয়েড দ্রবণ বলে।
কলয়েড দ্রবণে মিশ্রণ থেকে বের কণাগুলো ফিল্টার কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজ বা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ইত্যাদি অর্ধভেদ্য পর্দার মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। যেমন- স্টার্চ, জিলেটিন, গম, অ্যালবুমিন, প্রোটিন ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
১. কলয়েড দ্রবণে দ্রবের কণাগুলোর ব্যাস 10–7 cm থেকে 10–5 cm এর মধ্যে হয়।
২. কলয়েড দ্রবণে দ্রবের কণাগুলোকে খালি চোখে বা সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় না কিন্তু অতি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়।
৩.কলয়েড দ্রবণের দ্রবের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না।
৪.কলয়েড অস্বচ্ছ, অসমমত্ব কিন্তু স্থায়ী প্রকৃতির দ্রবণ হয়।কলয়েড দ্রবণের বর্ণ কলয়েড কণার আকারের ওপর নির্ভর করে।
৫.কলয়েড দ্রবণের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মি পাঠালে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটে। এই ঘটনাকে টিন্ডাল প্রভাব বলে।
৬. কলয়েড দ্রবণ ব্রাউনীয় গতি প্রদর্শন করে।
৭. কলয়েড দ্রবণের কণাগুলো ধীরে ধীরে ব্যাপিত হয়।
ইমালসন:
ইমালসন হলো একটি কলয়েড দ্রবণ যেখানে বিস্তৃত দশা (Disperse phase) ও বিস্তার মাধ্যম (Dispersion medium) উভয়ই তরল অবস্থায় থাকে। ইমালসনে তরল বিস্তৃত দশার কণাগুলো অমিশ্ৰণীয়ভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দর আকারে, তরল বিস্তার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ, একটি তরল পদার্থের মধ্যে অপর একটি অমিশ্ৰণীয় তরল পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর আকারের ছড়িয়ে থেকে যে কলয়েড দ্রবণ গঠন করে তাকে ইমালসন বলে। যেমন- দুধ, ভ্যানিশিং ক্রিম, কোন্ড ক্রিম, মাখন, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি।
ইমালসনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-
- পানিতে তেল জাতীয় ইমালসন (Oil in Water emulsion)
- তেলে পানি জাতীয় ইমালসন (Water in Oil emulsion)
পানিতে তেল জাতীয় ইমালসন :
অল্প পরিমাণ তেলে অতিরিক্ত পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ঝাকালে এই জাতীয় ইমালসন উৎপন্ন হয়। এতে বিস্তৃত দশাটি হলো তেল এবং বিস্তার মাধ্যমটি হলো পানি। যেমন- দুধ, ভ্যানিশিং ক্রিম,পানির মধ্যে অল্প পরিমাণ নাইট্রোবেনজিনের মিশ্রণ ইত্যাদি।
তেলে-পানি জাতীয় ইমালসন:
অল্প পরিমাণ পানিতে অতিরিক্ত পরিমান তেল মিশিয়ে ঝাকালে এই জাতীয় ইমালসন উৎপন্ন হয়। এতে বিস্তৃতি দশাটি হলো পানি এবং বিস্তার মাধ্যমটি হলো তেল যেমন- কোল্ড ক্রিম, মাখন, কড় লিভার অয়েল ইত্যাদি।
৩. সাসপেনশন :
সাসপেনশন যখন কোনো কঠিন পদার্থ সাধারণত কোনো তরল দ্রাবকের মধ্যে 10–5 cm এর অধিক ব্যাস বিশিষ্ট ক্ষুদ্র কণায়। বিভাজিত হয়ে অসচ্ছ, অসমসত্ত্ব ও অস্থায়ী মিশ্রণ উৎপন্ন করে, মিশ্রণ থেকে দ্রবের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজ বা পার্চমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না তখন ঐ অস্বচ্ছ, অসমসত্ত্ব ও অস্থায়ী মিশ্রণকে সাসপেনশন বলে। যেমন- পানির মধ্যে বালি যুক্ত করে ভালোভাবে ঝাকালে সাসপেনশন উৎপন্ন হয়।
সাসপেনশন বৈশিষ্ট্য:
১. সাসপেনশনে দ্রবের কণাগুলোর ব্যাস 10–5 cm এর অধিক হয়।
২. সাসপেনশনে দ্রবের কণাগুলো সাধারণত অণুবীক্ষণ যন্ত্র এমন কি খালি চোখেও দেখা যায়।
৩. সাসপেনশনে দ্রবের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজ বা পার্চমেন্ট কাগজের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না ।
৪. সাসপেনশন অস্বচ্ছ, অসমসত্ত্ব ও অস্থায়ী হয় অর্থাৎ সাসপেনশন কিছুক্ষণ রেখে দিলে কণাগুলি অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পাত্রের তলায় থিতিয়ে পড়ে।
৫. প্রলম্বনের বর্ণ কণার বর্ণের মতো হয়।
৬. অস্বচ্ছ হওয়ায় সাসপেনশনের মধ্যে আলোকরশি প্রবেশ করতে পারে না, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সাসপেনশনের মধ্যে আলোকরশ্মি প্রবেশ করে এবং তার বিচ্ছুরণও ঘটে।।
৭. সাসপেনশনে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্রাউনীয় গতি দেখা যায় ।
৮. সাসপেনশনে কণাগুলোর কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে খুব ধীরে ব্যাপন ঘটে।
সুতরাং কোলয়েডীয় দ্রবণ হলো প্রকৃত দ্রবণ ও সাসপেনশনের মধ্যবর্তী অবস্থা। কোলয়েড দ্রবণের কণাগুলি প্ৰকৃত দ্রবণের কণা অপেক্ষা বড়, কিন্তু সাসপেনশনের কণা অপেক্ষা ছোটো । কোনো কঠিন পদার্থকে একটি তরলে যুক্ত করে। উত্তমরূপে ঝকালে উৎপন্ন মিশ্রণটি প্রকৃত দ্রবণ, কোলয়েডীয় দ্রবণ না সাসপেনশন হবে তা নির্ভর করে উক্ত কঠিন পদার্থের কণাগুলোর আকারের ওপর। যদি কণাগুলোর ব্যাস 10-8 cm বা আরও কম হয়, তাহলে মিশ্রণটি হবে প্রকৃত দ্রবণ । যদি কণাগুলোর ব্যাস 10-7 cm থেকে 10-5 cm এর মধ্যে হয়, তাহলে মিশ্রণটি হবে কোলয়েডীয় এবং কণাগুলো ব্যাস যদি 10-5 cm এর বেশি হয়, তাহলে মিশ্রণটি হবে সাসপেনশন।