জৈব যৌগের নামকরণ(Nomenclature of Organic Compounds)

হাইড্রোকার্বন ও এদের জাতক নিয়ে গঠিত জৈব যৌগের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এ বিপুলসংখ্যক জৈব যৌগ যেমন একদিনে আবিষ্কৃত হয়নি ঠিক তেমনি এদের প্রস্তুতির ধরন, উৎস, গঠন, ব্যবহার, বৈশিষ্ট্যও একই নয়। প্রথম দিকে জৈব যৌগসমূহ আবিষ্কারের পর উৎস ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নামকরণের প্রচলন দেখা দিলেও ধীরে ধীরে জৈব যৌগের প্রাচুর্যতা বাড়তে থাকায় সমগ্র প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়ে। এ কারণে জৈব যৌগের নামকরণ সঠিক ও সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে রসায়নবিদরা তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

দ্ধতিসমূহ হলো-

ক) সাধারণ বা প্রচলিত পদ্ধতি (Trivial or Common Name)

খ) উদ্ভূত বা জাত পদ্ধতি (Derived Name)

গ) আন্তর্জাতিক বা IUPAC (International Union of Pure and Applied Chemistry) পদ্ধতি বা জেনেভা পদ্ধতি।

সাধারণ বা প্রচলিত পদ্ধতি (Trivial or Common Name): রসায়ন বিজ্ঞানের প্রসারের শুরুর দিকে জৈব যৌগের সংখ্যা সীমিত ছিল। সে সময় জৈব যৌগের নামকরণে এদের উৎস, বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। কখনো কখনো আবিষ্কারকে বা আবিষ্কারকের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম অনুসারে যৌগের নাম রাখা হতো।

যেমন :

i) মানুষের মূত্র (Urine) থেকে সংগৃহীত যৌগটির নাম ইউরিয়া।

ii) জলাভূমি (Marshy land) থেকে সংগৃহীত গ্যাস মিথেন (মার্শ গ্যাস)।

iii) স্বপ্নের রাজা Morphus এর নাম থেকে বেদনানাশক মরফিন।

iv) ইথেন এর নামকরণে এর ধর্ম (সম্পূর্ণ প্রজ্জ্বলনীয়) প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গ্রিক শব্দ aither অর্থাৎ প্রজ্জ্বলনীয় ।

v) ল্যাটিন নাম Formica (পিপড়া) থেকে আহরিত এসিড ফরমিক এসিড।

vi) আবিষ্কারকের বান্ধবী বারবারা এর নামানুসারে বারবিটিউরিক এসিড।

এ ধরনের নামকরণের প্রধান সমস্যা হলো যৌগটির নাম থেকে এর গঠন বা কার্বন সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যেত না। তবে ধীরে ধীরে এ নামকরণের পদ্ধতি কিছুটা নিয়মের আওতায় আনা হয়। নিম্নে প্রচলিত বা সাধারণ পদ্ধতির নামকরণ আলোচনা করা হলো:-

অ্যালকেন (Alkane) অ্যালকেনের সাধারণ সংকেত হলো- CnH2n+2। উল্লেখিত সংকেত অনুসরণকারী সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনসমূহের নামের প্রথম অংশের সাথে ‘ane’ যোগ করে নামকরণ করা হয়। সাধারণ পদ্ধতিতে অ্যালকেনের নামকরণের উল্লেখযোগ্য দিক হলো

ক) অ্যালকেন শ্রেণির প্রথম চারটি যৌগের নাম (যথাক্রমে- মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন) ব্যতীত পঞ্চম থেকে উচ্চতর হাইড্রোকার্বনের ক্ষেত্রে এদের অণুস্থ কার্বন পরমাণুর সংখ্যা সূচক গ্রিক শব্দের সাথে ‘ane’ যোগ করে নামকরণ করা হয়।

যেমন: C5H12 (পেন্টেন), C8H18 (অক্টেন), C9H20 (ডেকেন) ইত্যাদি।

খ) যদি কোনো অ্যালকেনে পার্শ্ব শিকল না থাকে তবে ঐ যৌগটিকে নরমাল যৌগ ধরা হয়। এ ধরনের যৌগের নামের পূর্বে হাইফেন (-) দিয়ে n লিখতে হয়।

যেমনঃ

গ) অ্যালকেনের যে কোনো একটি প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় কার্বনের সাথে একটি হাইড্রোজেন পরমাণুযুক্ত থাকে  তবে উক্ত যৌগের নামের পূর্বে আইসো (iso) যোগ করতে হয়। যেমন:

ঘ) অ্যালকেনের যেকোনো একটি প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় কার্বনে কোনো হাইড্রোজেন না থেকে যদি টি অ্যালকাইল মূলক যুক্ত থাকে তবে ঐ যৌগটির নামকরণে মূল নামের পূর্বে ‘neo’ শব্দটি লিখতে হবে।

উদ্ভূত বা জাত পদ্ধতিতে অ্যালকেনের নামকরণ:

 জৈব যৌগের নামকরণের প্রচলিত পদ্ধতিসমূহের মধ্যে এটি খুবই সীমিত। এ পদ্ধতিতে সরলতম ও সহজতম সাধারণ সদস্যের নামকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত যৌগের নামকরণ করা হয়। অ্যালকোহল এবং হাইড্রোকার্বনের ক্ষেত্রে এ নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন দেখা যায়।

নিয়ম: কোনো জৈব যৌগ যে সমগোত্রীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত সেই শ্রেণির প্রথম সদস্যকে মাতৃযৌগ বিবেচনা করা হয় এবং অন্য সকল যৌগকে প্রথম সদস্যের জাতক বিবেচনা করে প্রথম সদস্যের নামানুসারে যৌগগুলোর নামকরণ করা হয়।

মিথেনকে মাতৃযৌগ ধরে অন্যান্য উচ্চতর অ্যালকেনকে মিথাইলের জাতক ধরা হয়।

নামকরণ: কার্বন সংখ্যার ভিত্তিতে অ্যালকাইল মূলকের নাম + মিথেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!