যে বিক্রিয়ায় কোন জৈব অণুতে উপস্থিত পরমাণু বা গ্রুপ অপর কোন পরমাণু বা গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।
আক্রমনকারী বিকারকের উপর নির্ভর করে প্রকিস্থাপন বিক্রিয়াগুলোকে ৩ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
১. নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
২. ইলেকট্রোফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
৩. মুক্তমূলক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
১. নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া(Substitution Nucleophilic Reaction) : যে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় আক্রমনকারী বিকারক একটি নিউক্লিওফাইল তাকে নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে । একে সংক্ষেপে দ্বারা SN (Substitution Nucleophilic) প্রকাশ করা হয়।
বিক্রিয়ার হার নির্ণায়ক ধাপে অংশগ্রহণকারী স্বতন্ত্র কণার (অণু বা আয়ন বা মুক্তমূলক) সংখ্যার উপর নির্ভর করে SN (Substitution Nucleophilic) বিক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
1. এক আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন, SN1 (Substitution Nucleophilic Unimolecular)
2. দ্বি-আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন, SN2 (Substitution Nucleophilic Bimolecular)
SN1 বিক্রিয়ার : যে সকল নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার গতি একটিমাত্র বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল তাদেরকে এক আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া SN1 বা বিক্রিয়া বলে। যেমন:

SN1 বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
(১) এ জাতীয় নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন দুই ধাপে ঘটে।
(২) 3°-হ্যালাইডের ক্ষেত্রে SN1 বিক্রিয়া সহজে ঘটে।
অ্যালকাইল হ্যালাইডের SN1 বিক্রিয়ার সক্রিয়তার ক্রম: 3° R-X > 2° R-X > 1° R-X > CH3-X
(৩) পোলার দ্রাবকে SN1 সহজে ঘটে।
(8) বিক্রিয়াটি প্রথম ক্রম বিক্রিয়া। অর্থাৎ এ জাতীয় বিক্রিয়ার হার একটিমাত্র বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার ঘাতের সমানুপাতিক।
(৫) কার্বোক্যাটায়নের সৃষ্টি হয়।
(৬) অবস্থান্তর অবস্থার সৃষ্টি হয় না।
(৭) জ্যামিতিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।
অর্থাৎ এ জাতীয় বিক্রিয়ার হার একটিমাত্র বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার হারের সমানুপাতিক।
কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরীক্ষালবদ্ধ গতিবেগ বা হার ঐ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়কের যে সব ঘনমাত্রা পদের আনুপাতিক, তাদের ঘাতের সমষ্টিকে ঐ বিক্রিয়ার ক্রম বলা হয়। বিক্রিয়ার হার নির্ণায়ক ধাপে যতগুলো কণা (অণু বা আয়ন) অংশগ্রহণ করে তাদের সংখ্যাকে ঐ বিক্রিয়ার আণবিকত্ব (Molecularity) বলে। হার নির্ণায়ক ধাপে একটিমাত্র কণা অংশগ্রহণ করলে বিক্রিয়ার আণবিক । হয় এবং দুটি কণা অংশগ্রহণ করলে আণবিকত্ব 2 হয়।
SN1 বিক্রিয়ার ক্রিয়া কৌশল :
এক আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (SN1) বিক্রিয়া দুই ধাপে ঘটে।
বিক্রিয়ার শুরুতেই জলীয় বিয়োজিত হয়ে নিউক্লিওফিলিক(OH–) তৈরি করে ।
KOH(aq) → K+ + OH–
প্রথম ধাপ: প্রথম ধাপে অ্যালকাইল হ্যালাইড অণুটি ধীরে ধীরে বিযয়োজিত হয়ে কার্বনিয়াম আয়ন বা কার্বোক্যাটায় মধ্যক ও হ্যালাইড আয়ন গঠন করে। এটি বিক্রিয়ার হার নির্ণায়ক ধাপ। অর্থাৎ বিক্রিয়ার গতি α [RX]।

দ্বিতীয় ধাপ: দ্বিতীয় ধাপে কার্বনিয়াম আয়ন দুত নিউক্লিওফাইল যেমন- OH– এর সাথে যুক্ত হয়।

SN2 বিক্রিয়ার : যে সকল নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার গতি বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহনকারী দুটি বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল তাদেরকে দ্বি-আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বা SN2 বিক্রিয়া বলে। যেমন:
SN2 বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
(১) এ জাতীয় বিক্রিয়া একধাপেই সম্পন্ন হয়।
(২) 1° হ্যালাইডের ক্ষেত্রে SN2 বিক্রিয়া সহজে ঘটে।
অ্যালকাইল হ্যালাইডের SN2 বিক্রিয়ার সক্রিয়তার ক্রম: 1° R-X >2° R-X > 3° R-X > CH3-X
(৩) বিক্রিয়ার গতিবেগ হ্যালোজেনো অ্যালকেন ও নিউক্লিওফিলিক বিকারক উভয়ের ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল। (৪) বিক্রিয়াটি দ্বিতীয় ক্রমঅর্থাৎ বিক্রিয়ার হার দুটি বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার গুণফলের সমানুপাতিক হয়।
(৫) কোনোরূপ কার্বোক্যাটায়নের বা অ্যানায়নের সৃষ্টি হয় না।
(৬) অবস্থান্তর জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
(৭) জ্যামিতিক গঠন সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে যায়।
SN2 বিক্রিয়ার ক্রিয়া কৌশল :
দ্বি-আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (SN1) বিক্রিয়া এক ধাপে ঘটে।
বিক্রিয়ার শুরুতেই জলীয় বিয়োজিত হয়ে নিউক্লিওফিলিক(OH–) তৈরি করে ।
KOH(aq) → K+ + OH–
দ্বি-আণবিক নিউক্লিওফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (SN1) বিক্রিয়া এক ধাপে ঘটে। কার্যকারী সংঘর্ষের জন্য অ্যালকাইল হ্যালাইড অণুর ত্রিমাত্রিক কাবনের যে পার্শ্বে X পরমাণু থাকে নিউক্লিওফাইল (OH–) তার বিপরীত দিক থেকে আক্রমণ করে থাকে। নিউক্লিওফিলিক (OH–) হ্যালোজেনযুক্ত আংশিক ধনাত্মক কার্বনের দিক যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই নিউক্লিওফাইল ও কার্বনের সঙ্গে একটি নতুন বন্ধন গড়ে উঠতে থাকে এবং কার্বন ও হ্যালোজেনের মধ্যের বন্ধন সমপরিমাণে ভাঙতে থাকে। এই অবস্থায় X পরমাণু এবং নিউক্লিওফাইল (OH–)) উভয়ই আংশিক ঋণাত্মক চার্জ লাভ করে। অবশেষে কার্বন-হ্যালোজেন বন্ধন সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্যালাইড আয়ন (X–) উৎপন্ন করে এবং নিউক্লিওফাইল (OH–) ঐ কার্বনের সাথে পূর্ণভাবে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ বিক্রিয়ার গতি হ্যালোজেনো অ্যালকেন এবং আক্রমণকারী নিউক্লিওফাইল উভয়ের ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, বিক্রিয়ার গতি α [RX][ OH]।
