কাঁচ রিসাইকেল প্রণালী (Recycling process of  Glass):-

কাঁচ পঁচনশীল নয় এবং এর ক্ষয় হয় না বললেই চলে। তাই কাঁচ কে বার রার রিসাইক্লিন করে ব্যবহার করা যায়। কাঁচের রিসাইক্লিন নিম্নরুপ:-

(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যবহৃত ও ভাঙ্গ কাঁচ সংগ্রহ করে কাঁচ উৎপাদনকারী কোম্পানীতে স্থনান্তর করা হয়।

(iii) কোম্পানী বর্ণ ও মানের ভিত্তিতে কাঁচকে শ্রেণিবিন্যাস করে, ধৌত করে ময়লা ও ভেজাল অপসারণ করে।

(iv) শ্রেণিবিন্যাসকৃত কাঁচ কে মেশিনের সাহায্য চূর্ণবিচূর্ণ করে তরলে পরিণত করে প্রয়োজনীয় উপাদান মিশ্রিত করে  ছাঁচে ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির কাঁচ সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।

প্রবহি চিত্র:

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে কাঁচ  রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of  Glass Materials in Social and Environmental Fields)

কাচ রিসাইকেলের গুরুত্ব। কাচ 100% রিসাইকেল করা যায়। কাচ যেহেত পঁচনশীল নয় তাই একে রিসাইকেল করা একদিকে পরিবেশের জন্য ভালো অন্যদিকে অর্থ ও জ্বালানির সাশ্রয় হয়। কাঁচ উৎপাদনে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ফলে কাঁচ উৎপাদনের একদিকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে এটি পরিবেশ দূষণ। করে। সুতরাং, কাঁচের রিসাইকেল পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক।

কাগজ রিসাইকেল প্রণালী (Recycling process of Paper):-

(i)  বিভিন্ন উৎস হতে ছেড়া, অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের কাগজ সংগ্রহ করে শ্রেণিবিন্যাস করে কাগজ কারখানায় স্থানান্তর করা হয়।

(ii)  শ্রেণিবিন্যাসকৃত পেপার হতে পিন, গ্লূ-প্লাস্টিক আলাদা করে সাবান, পানি দ্বারা ধৌত করে ধুলো বালি ও অন্যান্য ভেজাল অপসারণ করা হয়। এরপর সাধারণ পানিতে মিশিয়ে Slurry উৎপাদন করা হয়। উল্লেখ্য ডিইনকিং প্রক্রিয়ায় NaOH ও Na2CO3 ব্যবহার করে সব কালি দূর করা হয়।

(iii)  Slurry এর সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পেপার পাল্প বা মণ্ড উৎপাদন করা।

(iv)  রোলার ব্যবহার করে মণ্ড হতে বড় বড় পেপার সিট উৎপাদন এবং শুকিয়ে কাংঙ্খিত আকার দেওয়া হয়।

প্রবাহ চিত্র:-

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে পেপার রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of Paper Materials in Social and Environmental Fields)

পেপার রিসাইকেলের গুরুত্ব। বর্তমান সভ্যতার যুগে কাগজ ছাড়া আমাদের চলে না। কাঠ, বাঁশ, প্রভৃতি হতে কাগজ উৎপাদন করা হয়। কাগজ উৎপাদনে একদিকে বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয় অন্যদিকে কাগজ উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। পরিবেশ দূষণ ঘটায়। অথচ কাগজ রিসাইকেল করলে 70% বিদ্যুৎ কম লাগে এবং এই রিসাইকেলে 75% বায়ু  ‍দূষণ। কমায়। 1 টন কাগজ উৎপাদনে প্রায় 24টি গাছ নিধন করতে হয়। সুতরাং, কাগজ উৎপাদনের চেয়ে কাগজ রিসাইকেলের দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

আয়রনের রিসাইকেল (Recycling process of Iron ):-

আমরা আয়রনের জন্য আকরিকের উপর নির্ভরশীল। আয়রন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর পরিমাণ নির্দিষ্ট। আয়রন উৎপাদনের চেয়ে রিসাইকেল সাশ্রয়ী এবং পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।

(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ভাঙ্গা, ক্ষয়প্রাপ্ত ও অব্যবহৃত আয়রন সামগ্রী সংগ্রহ করে লোহা উৎপাদনকারী কোম্পানীতে  স্থানান্তার করা হয়।

(ii) আয়রন কোম্পানী মানের ভিত্তিতে আয়রনকে শ্রেণীবিন্যাস করে, ধেীত করে ময়লা ও ভেজাল অপসারণ করে।

(iii) শ্রেণীবিন্যাস করা আয়রন কে মেশিনের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয় এবং চৌম্বক প্রক্রিয়ায় আলাদা ও ফিল্টর করে অন্যান্য ধাতব পদার্থ (Zn, Al, Cu ইত্যাদি) হতে আলাদা করা হয়।

(iv) অতঃপর ব্লাস্ট ফার্নেসে লোহার আকরিকের সাথে বা সরাসরি বিগলন করে বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচে  ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির লৌহ সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে আয়রন রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of Iron Materials in Social and Environmental Fields)

শিল্পের ভারী যন্ত্রপাতি, ডাক্তারী যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন গৃহসামগ্রী উৎপাদনে ব্যাপক পরিমাণ আয়রন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। আকরিক হতে আয়রন সামগ্রী উৎপাদনে প্রচুর জ্বালানি খরচ করতে হয়। আয়রন উৎপাদনে বাত্যাচুল্লীতে প্রচুর কোক, CaCO3 ব্যবহার করা হয়।

বাত্যাচুল্লী হতে প্রচুর পরিমাণ CO2, CO এবং অন্যান্য গ্যাস  বায়ুতে মিশে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। সুতরাং আয়রনের বিসাইকেল করলে একদিকে সম্পদের অপচয় কম হয়। অন্যদিকে, জ্বালানি ও পরিবেশ রক্ষা পায়।

প্লাস্টিক রিসাইকেল (Recycling process of  Plastic):-

প্লাস্টিক পচনশীল পদার্থ না হওয়ায় পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনের চেয়ে রিসাইকেল ভালো।

(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ভাঙ্গা, ক্ষয়প্রাপ্ত ও অব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করে প্লাস্টিক উৎপাদনকারী কোম্পানীতে  স্থানান্তার করা হয়।

(ii) প্লাস্টিক কোম্পানী মানের ভিত্তিতে প্লাস্টিকে শ্রেণীবিন্যাস করে, ধেীত করে ময়লা, আঠ ও ভেজাল অপসারণ করে।

(iii) শ্রেণীবিন্যাস করা প্লাস্টিক কে মেশিনের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করে ছোট ছোট টুকরায় রুপান্তরিত করা হয়।

(iv) অতঃপর পরীক্ষা করে প্লাস্টিকের মান অনুযায়ী গ্রেড করতে হয়।  সবশেষে  গলিয়ে অটোমেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচে  ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। প্লাস্টিক রিসাইকেল করে পুনরায় প্লাস্টিক পণ্য এবং অন্য উপজাত তৈরি করা যায়।  যেমন:-

(a). তাপীয় ডি-পলিমারকরণ প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রী হতে অশোধিত তেল (হাইড্রোকার্বন) পাওয়া যায়।

(b) পাইরোলাইসিস বা তাপীয় ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রিকে বায়ুর অনুপস্থিতিতে 700 – 900 উত্তপ্ত করলে গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন (মিথেন, ইথিন), তরল হাইড্রোকার্বন (বেনজিন, টলুই) এবং কার্বন, মোম,আলকাতরা ইত্যাদি উৎপন্ন করে।

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of Plastic Materials in Social and Environmental Fields)

বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহার বেড়ে গেছে। কারণ এগুলো দামে সস্তা ও ব্যবহার সহজ। কিন্তু প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এগুলো পঁচনশীল পদার্থ নয়। 500 বছর পর প্লাস্টিক বিয়োজন হতে পারে। প্লাস্টিক রিসাইকেল করা খুবই সহজ ও লাভজনক। সুতরাং, প্লাস্টিক রিসাইকেল করে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখা যায় ।

অ্যালুমিনিয়ামের রিসাইকেল (Recycle process of Aluminium):-

আকরিক হতে অ্যালুমিনিয়াম সংগ্রহ ব্যয়বহুল। অ্যালুমিনিয়াম একটি বহুল ব্যবহৃত ধাতব পদার্থ । এ অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনের চেয়ে অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেল করলে 900% শক্তি খরচ কম হয়। আমাদের দেশে প্রায় 90% অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেল প্রণালীতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রায় 100% ইনগট (ingot) হিসেবে বিদেশে হতে আমদানা করা হয়।

(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ভাঙ্গা, ক্ষয়প্রাপ্ত ও অব্যবহৃত  অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী সংগ্রহ করে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারী কোম্পানীতে  স্থানান্তার করা হয়।

(ii) অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানী মানের ভিত্তিতে অ্যালুমিনিয়ামকে শ্রেণীবিন্যাস করে, ধেীত করে ময়লা ও ভেজাল অপসারণ করে।

(iii) শ্রেণীবিন্যাস করা অ্যালুমিনিয়ামকে মেশিনের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করে ছোট ছোট টুকরায় রুপান্তরিত করা হয়। শক্তিশালী চৌম্বকের সাহায্যে লৌহা জাতীয় পদার্থ এবং যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় Zn, Pb, Ni এবং Mn আপসারণ করা হয়।

(iv) সবশেষে  আপদ্রব্য মুক্ত অ্যালুমিনিয়ামকে  চুল্লিতে স্থানান্তর করে 750 – 100  তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে গলিয়ে অটোমেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচে  ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির অ্যালুমিনিয়াম পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of Aluminium Materials in Social and Environmental Fields)

বক্সাইট আকরিক হতে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বক্সাইট হতে অ্যালমিনিয়াম নিষ্কাশনে একদিকে যেমন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ হয় অন্যদিকে পরিবেশ দূষণে এটি ভূমিকা রাখে। বর্তমানে গৃহসামগ্রী, প্যাকেজিং শিল্পে লক্ষ লক্ষ টন অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়। প্যাকেজিং ও ক্যান রিসাইকেল করে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ কমানোযায়। অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেল করে 6 সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করা সম্ভব। বক্সাইট হতে অ্যালমিনিয়াম উৎপাদনে যে পরিমাণ শক্তি লাগে অ্যালুমিনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে তার 5% শক্তি ব্যয় হয়। তাছাড়া 1 টন। অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেল করলে প্রায় ৪ টন বক্সাইট বাঁচে।

কপারের রিসাইকেল (Recycle process of Copper) :-

কপার এমন একটি ধাতু, যা’ 100% পুনঃচক্ৰায়ন যোগ্য। কোন ধরনের গুণগত মান নষ্ট ছাড়াই কপার বস্তুকে বারংবার পুনঃচক্ৰায়ন করা যায়। ইউরোপে কপার চাহিদার 42% এরও অধিক পুনঃচক্ৰায়ন করে মেটানো হয়। আকরিক হতে কপার নিষ্কাশনে যে খরচ হয় তার মাত্র 10% খরচ হয় কপার রিসাইকেল করতে।

(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ভাঙ্গা, ক্ষয়প্রাপ্ত ও অব্যবহৃত কপার সামগ্রী সংগ্রহ করে কপার উৎপাদনকারী কোম্পানীতে  স্থানান্তার করা হয়।

(ii) কপার কোম্পানী মানের ভিত্তিতে কপারকে শ্রেণীবিন্যাস করে, ধেীত করে ময়লা ও ভেজাল অপসারণ করে।

(iii) শ্রেণীবিন্যাস করা অ্যালুমিনিয়ামকে মেশিনের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করে ছোট ছোট টুকরায় রুপান্তরিত করা হয়। শক্তিশালী চৌম্বকের সাহায্যে লৌহা জাতীয় পদার্থ এবং যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় Zn, Pb, Ni এবং Mn আপসারণ করা হয়।

(iv) সবশেষে  আপদ্রব্য মুক্ত অ্যালুমিনিয়ামকে  চুল্লিতে স্থানান্তর করে 1185 – 100  তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে গলিয়ে অটোমেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচে  ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির কপার পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।

সামাজিক পরিবেশ ক্ষেত্রে কপার  রিসাইকেলের গুরুত্ব (Importance of Recycling of Copper Materials in Social and Environmental Fields)

কপার অতি মূল্যবান ধাত। পরিবাহী তার, কয়েল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালী অনেক বস্তু প্রস্তুত করার জন্য কপার ব্যবহার করা হয়। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কপারের বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। নিম্নমানের কপার পিরাইটস হতে কপার ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। বর্তমানে লাভজনকভাবে উত্তোল যোগ্য 80% কপার ব্যবহার হয়ে গেছে। সুতরাং তথ্য প্রযুক্তির চাকা সচল রাখতে ও পরিবেশ সংরক্ষণে কপার রিসাইকেল অতিগুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কপারের আকরিক হতে কপার নিষ্কাশন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে প্রচুর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ হয়।

 

টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্পের বর্জ্য পদার্থ:

যেকোন দেশের টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্প অতি গুরত্বপূর্ণ শিল্প। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু এ শিল্পের বর্জ্য পদার্থ আজকে পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

কারণ এ ধরণের শিল্পে ব্যাপক পরিমাণ কঠিন, তরল ও গ্যাসায় বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। এ শিল্পের মাধ্যমে পানি সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। কারণ এ শিল্পে H2SO4, NaOH, Na2CO3, Na2O2, Na2SiO3, ডিটারজেন্ট, ক্ষারীয় হাইপোক্লোরাইটসহ প্রচুর পরিমাণে রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে শিল্পের মাধ্যমে যত দূষণ হয় তার 20% এর জন্য দায়ী টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্প। এ ধরনের শিল্পের বর্জ্য পানিতে 72 ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এ ধরনের বর্জ্য পানি থেকে প্রায় 30টি রাসায়ানক পদার্থকে সাধারণ ETP (Effluent Treatment Plant) এর মাধ্যমে সরানো যায় না।

টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্পের বর্জ্য পানিতে H-CHO, Cl2, Pb এবং Hg প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এগুলো পরিবেশ ও মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। উল্লেখ্য, বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থের মধ্যে কাগজে ক্ষারীয় ডাই, প্রাণিজ তন্তুতে এসিড ডাই, রং ও প্রিন্টিং এ পিগমেন্ট ডাই ব্যবহার করা হয়। এ শিল্পের দূষকের মধ্যে Cd, Pd, Cr, Co, Hg, Ni এবং NO3 উপস্থিত থাকে।

টেক্সটাইল রং থেকে যে সব পদার্থ পরিবেশে মিশে যায় সেগুলো :  অ্যারোমেটিক অ্যামিন, ভারী ধাতু (Pb, Hg) অ্যালকালি ও লবণ, বিষাক্ত কঠিন পদার্থ এবং প্রচুর রঞ্জক পদার্থ।

উল্লিখিত রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে। পানির রং পরিবর্তন হয়, DO হ্রাস পায় এবং সেই সাথে BOD ও TDS বেড়ে যায়।

কতিপয় শিল্প  বর্জ্য এবং  এদের ক্ষতিকর প্রভাবের চার্ট  নিম্নরুপ:

         শিল্প                             শিল্প  বর্জ্য                      ক্ষতিকর প্রভাব
      ইউরিয়া তরল NH3, তরল CH,, সূক্ষ্ম ইউরিয়া কণা । মাটি ও পানির PH বৃদ্ধি করে অথাৎ ক্ষারকত্ব বৃদ্ধি করে ফলে মাছ মারা যায় এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং বায়ু দূষণের ফলে শ্বাস যন্ত্রে রোগ হয়।
       সিমেন্ট ক্লিংকারের সূক্ষ্ম গুঁড়া, উড়ন্ত ছাই, CO2 SOx, NOx, চুন গুঁড়া । সূক্ষ্ম গুড়া মানুষের শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।

বর্জ অম্ল ধর্মী গ্যাস এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করে ।

        চামড়া মারক্যাপটান, সালফাইড, Cr3+, Cr4+, Ca2+, এ জাতীয় পদার্থ, রং, তেল, NH4+ লবণ, NaCl, H2SO4 , অ্যালবুমিন, জৈব পদার্থের কঠিন কণা, দ্রবণীয় প্রোটিন ইত্যাদি।। পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পানির DO হ্রাস পায়, এবং খাদ্যশৃঙ্খলে Cr ধাতুর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।
টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্প Na2S, NaOH, সালফাইড, মারক্যাপটান, কস্টিক সোডা, মুক্ত Cl2, মিথাইল  , পেন্টাক্লোরো ফেনল,জৈব এসিড, ফেনল, অ্যারোমেটিক অ্যামিন, জৈব রাসায়নিক রং, Cd, Pd, Cr, Hg, Ni ,NO3, CO এবং সূক্ষ্ম ধূলিকণা।

 

পানিতে রঞ্জক পদার্থ মিশে DO হ্রাস পায় এবং সেই সাথে BOD ও TDS বেড়ে বৃদ্ধি পায়।

খাদ্যশৃঙ্খলে ভারি ধাতু প্রবেশ করে মানুষের দেহে ক্যান্সার ও বিভিন্ন মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে।

 

 

 

 

 

2 thoughts to “কাঁচ, কাগজ, প্লাস্টিক, Fe, Al, Cu রিসাইকেল এবং টেক্সটাইল ও ডায়িং শিল্পের বর্জ্য পদার্থ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *