উপযুক্ত শর্তে ও বিক্রিয়া পরিবেশে জৈব বিক্রিয়কসমূহের সঙ্গে বিকারকের সংঘর্ষের সময় বিক্রিয়কসমূহের সংঘর্ষের সময় বিক্রিয়ক অণুর বন্ধন ভেঙে মধ্যবর্তী সক্রিয় প্রজাতি গঠিত হয়। এ প্রজাতির সঙ্গে বিকারক যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ গঠন করে অর্থাৎ বিক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটায়।

আক্রমণকারী বিকারক ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক ধর্মী হতে পারে। তাই প্রকৃতি অনুসারে অর্থাৎ ইলেকট্রন আদান-প্রদানের প্রবণতার ভিত্তিতে জৈব রসায়নে বিকারকমূহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায় :
১. ইলেকটনাব বিকারক বা ইলেকট্রোফাইল ও ২. কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক।
(১) ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারক বা ইলেকট্রোফাইল (Electrophilic reagent or electrophile)
যে সকল বিকারক ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি প্রকাশ করে (electron-affinity) এবং বিক্রিয়াকালে ইলেকটন গ্রহণ করে তাদেরকে ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারক বা ইলেকট্রোফাইল বলে। সাধারণভাবে ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারককে E দ্বারা সূচিত করা হয়। এ সকল ইলেকট্রন প্রিয় (electron lovers) বিকারক দু’ধরনের হতে পারে । যথা :
ক. ধনাত্মক আধানযুক্ত (Positively charged) বিকারক : যেমন-
(a) কার্বোক্যাটায়ন, R – CH+
(b) ধনাত্মক হ্যালোজেনিয়াম আয়ন, X(Cl–, Br–)
(c) নাইট্রোনিয়াম আয়ন, NO2+
(d) প্রোটন, H+ বা হাইড্রোনিয়াম আয়ন, H3O+
(e) সালফোনিয়ম আয়ন SO3H+
(f) বেনজেনেডিয়াজোনিয়াম আয়ন C6H5N2+
(g) আলকাইল আয়ন R+
এছাড়া কিছু ক্যাটায়ন H+ Cu2+ Fe2+ Fe3+ Zn2+ ইত্যাদি
ধনাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারককে সাধারণভাবে E+ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
খ. ইলেকট্রন স্বল্প (electron deficient) নিরপেক্ষ অণু :
এ জাতীয় প্রশম ইলেক্ট্রোফাইলকে E দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন:
যে সব যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর অষ্টক অপূর্ণ: এরা সাধারণত লুইস এসিড:
(a) বোরন ট্রাইফ্লোরাইড (BF3)
(b) অ্যালুমিনিয়াম ট্রাইক্লোরাইড (AlCl3)
(a) বোরন ট্রাইক্লোরাইড (BCl3)
(e) বেরিলিয়াম ক্লোরাইড BeCl2
(f) কার্বন ডাই অক্সাইড CO2
যে সব যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর d উপকক্ষ খালি থাকার ফলে অষ্টক সম্প্রসারিত হতে পারে অপূর্ণ: এরা সাধারণত লুইস এসিড:
(a) ফেরিক ক্লোরাইড (FeCl3)
(b) সালফার ট্রাইঅক্সাইড (SO3)
(c) ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড PCl3
(d) সিলিকন ট্রাইফ্লোরাইড SiF3
(e) ফেরিক ক্লোরাইড FeCl3
(f) স্টেনাস ক্লোরাইড SnCl2
ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারক রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় বিক্রিয়ক অণুর যে অংশ ঋণাত্মক আধানযুক্ত অথবা যে অংশে ইলেকট্রন ঘনত্ব বেশি সে অংশে আক্রমণ করে। অর্থাৎ, ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারকসমূহে যেহেতু ইলেকট্রনের অভাব থাকে তাই এরা ইলেকট্রনসমৃদ্ধ তথা ইলেকট্রন দানে সক্ষম বিক্রিয়ক প্রজাতি (reacting species) এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইলেকট্রনাকর্ষী বিক্রিয়া (electrophilic reaction) ঘটায়।

কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক বা নিউক্লিওফাইল বলে (Nucleophilic reagent or nucleophile)
যে সকল বিকারক বিক্রিয়াকালে ধনাত্মক কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ইলেকট্রন দান করতে পারে তাদেরকে কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক
বা নিউক্লিওফাইল বলে। এরা কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস প্রিয় বলে ধনাত্মক আধানযুক্ত সত্ত্বার সাথে মিলতে চায়। এ বিকারকও দু’ধরনের হয়। যেমন:
ক. ঋণাত্মক আধানযুক্ত নিউক্লিওফাইল : এ জাতীয় নিউক্লিওফাইলের কেন্দ্রীয় পরমাণুতে ঋণাত্মক চার্জ থাকে । এদের Nu– (বা Z– ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন:
(a) কার্বানায়ন : R- HC–
(b) হ্যালাইড আয়ন : X– (F– , Cl– , Br– )
(c) সায়ানাইড আয়ন : (CN– )
(d) হাইড্রক্সাইড : (OH– )
(e) অ্যালকক্সাইড : (RO– )
প্রশম নিউক্লিওফাইল : এ জাতীয় নিউক্লিওফাইল ইলেকট্রনসমৃদ্ধ (electron rich) নিরপেক্ষ অণু। এদের জীয় পরমাণুতে নিঃসঙ্গযুগল ইলেকট্রন থাকে। এদের Nu (বা Z) দ্বারা সূচিত করা হয়। যেমন:
(a) অ্যামোনিয়া : NH3
(b) পানি : H2O
(c) ফসফিন PH3
(d) অ্যালকোহল : ROH
এছাড়া কিছু যৌগ, অণু বা আয়ন:

উদাহরণ : কার্বনিল যৌগে কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক সংযোজন : কেন্দ্রাকর্ষী বিকারক বা নিউক্লিওফাইলসমূহে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রনযুগল থাকায় এরা বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সময় ইলেকট্রন-ঘাটতি বিক্রিয়ককে ইলেকট্রন দান করে এবং তার সঙ্গে নতুন বন্ধন সৃষ্টি করে অর্থাৎ কেন্দ্রাকর্ষী বিক্রিয়া ঘটায়। যেমন:
