কাগজ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ:
পেপার উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-
১. তন্তুময় উপাদান: তন্তুময় উপাদান কাগজের মূল উপাদান। যা সেলুলোজ সরবরাহ করে বাঁশ, কাঠ, পাট গাছ, তুলা, খড়, আখের ছোবড়া, গম গাছের স্টিক, ছেঁড়া কাপড়-চোপড়, এর্ং অব্যবহৃত কাগজ ইত্যাদি তন্তুময় উপাদান হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
২. তন্তুবিহীন উপাদান: তন্তুবিহীন উপাদান সাধারণত রাসায়নিক পদার্থ। যেমন: সালফার, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, রেজিন, অ্যালাম, সল্টকেক, মৃত্তিকা এবং রঙ্গিন কাগজ তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের রং ইত্যাদি ।
কাগজ উৎপাদনের মূলনীতি দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
ক. সেলুলোজীয় কাঁচামাল থেকে পাল্প উৎপাদন এবং
খ. পাল্প থেকে পেপার উৎপাদন
ক. সেলুলোজীয় কাঁচামাল থেকে পাল্প উৎপাদন:
সেলুলোজীয় উপাদান সমৃদ্ধ কাঁচামাল বাঁশ, কাঠ, পাট গাছ, তুলা, খড় এবং আখের ছোবড়া ইত্যাদি সংগ্রহ করে পরিষ্কার পানি দ্বারা ধুয়ে, ছোট ছোট টুকরা করে কাটা হয়। এই ছোট ছোট টুকরা গুলো কে হাইড্রোলিক যন্ত্রের সাহায্যে বাকল অপসারন করে চিপার মেশিনের সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরাই পরিণত করা হয়। এই ক্ষুদ্র টুকরা গুলোকে চিপ বিন নামক কক্ষে সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর এগুলোকে ডাইজেস্টারে ( মরিচাহীন ইস্পাত দ্বারা তৈরি এবং চাপ সহ্য করার ক্ষমতা 250PSi ) প্রেরণ কার হয়। ডাইজেস্টারে সাদা লিকার থাকে। সাদা লিকার মূলত 27.17% Na2S, 58.6% NaOH ও 14.3% Na2CO3 এর মিশ্র দ্রবণ।এর মধ্যে Na2S ও NaOH মূলত দ্রাবক হিসাবে কাজ করে। ডাইজেস্টারে মধ্যে স্টিম চালনা করা হয়। কুকিং সম্পন্ন হওয়ার জন্য একে প্রায় তিন ঘন্টা সময় এবং 110PSi চাপ প্রয়োগ করা হয়। ডাইজেস্টরে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় তার অন্যতম হলো তন্তুময় সেলুলোজীয় কাঁমালে উপস্থিত লিগনিনকে ক্ষারযোগে আর্দ্রবিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এসিড, অ্যালকোহল এবং মারক্যাপটানে পরিণত করা।
লিগনিন অপসারিত সেলুলোজকে Cl2 দ্বারা বিরঞ্জিত করে পর্যায়ক্রমে ধৌত করে এবং পানি অপসারণ করে গাঢ় করলে সালফেট পাল্প বা মন্ড পাওয়া যায়। এটি কাগজের শীট তৈরিতে ব্যবরহৃত হয়।
প্রবাহ চিত্র:-
খ. পাল্প থেকে পেপার উৎপাদন:
পাল্প বা মন্ডকে কাগজে রুপাস্তরের জন্য প্রধানত তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়।
ক. বিটিং খ.রিফাইনিং গ. কাগজ শীট তৈরি
ক. বিটিং :এ কাজটি বিটারে সম্পন্ন করা হয়। বিটার একটি ধাতব গোলাকার ট্যাংক যাতে একটি দেয়াল থাকে,যাতে করে পাল্প এর চারদিক দিয়ে অবিরত ঘুরতে পারে। এর এক পাশে কতগুলো ছুরি যুক্ত রোলার থাকে।এর ঠিক নিচে কতগুলো ধাতুর পাত বসানো ন্থির বেড প্লেট থাকে। ট্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে ফলে এটি অধিকতর শক্ত, সমরুপ, ঘন, মসৃণ এবং কম ছিদ্রযুক্ত কাগজে পরিণত হয়।
খ.রিফাইনিং: এ কাজটি জর্ডান ইঞ্জিনে সম্পন্ন হয়। এটি একটি আদর্শ রিফাইনি মেশিন। এ ইঞ্জিনে একটি মোচাকার সেল থাকে। এ সেলের ভিতর কতগুলো দাঁতের সাথে ঘূর্ণামান কোর থাকে। পাল্প কোরের মধ্যে প্রবেশ করে দুটি শ্রেণী দন্ডের মধ্যবর্তী স্থানে পেষণ হয়ে অপর প্রান্ত দিয়ে রেরিয়ে যায়।
এ ভাবে প্রাপ্ত কাগজের অমৃণতা এবং ছিদ্র দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ফিলার
(3MgO.4SiO2.H2O), অধঃক্ষিপ্ত CaCO3, গুাড়া TiO2 ইত্যাদি এবং বিরঞ্জকরুপে Ca(OCl)Cl ব্যবহার করা হয়।
গ. কাগজ শীট তৈরি: ফোরড্রিনিয়ার মেশিনে বা সিলিন্ডার মেশিনের বিভিন্ন ধাপে রিফাইনিং করা গাঢ় ও মসৃন পাল্পকে দুই রোলারের মাঝখানে চাপদিয়ে, পানি অপসারণ (90-95%শুষ্ক) করে এবং প্রয়োজনমত সাইজিং এজেন্ট ছিটিয়ে ক্যালেন্ডারিং করে মসৃন পাতলা শীটে রুপান্তর কার হয়।
প্রবাহ চিত্র:-
গ.কাগজ রিসাইকেল প্রণালী নিম্নরূপ :
(i) বিভিন্ন উৎস হতে ছেড়া, অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের কাগজ সংগ্রহ করে শ্রেণিবিন্যাস করে কাগজ কারখানায় স্থানান্তর করা হয়।
(ii) শ্রেণিবিন্যাসকৃত পেপার হতে পিন, গ্লূ-প্লাস্টিক আলাদা করে সাবান, পানি দ্বারা ধৌত করে ধুলো বালি ও অন্যান্য ভেজাল অপসারণ করা হয়। এরপর সাধারণ পানিতে মিশিয়ে Slurry উৎপাদন করা হয়। উল্লেখ্য ডিইনকিং প্রক্রিয়ায় NaOH ও Na2CO3 ব্যবহার করে সব কালি দূর করা হয়।
(iii) Slurry এর সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পেপার পাল্প বা মণ্ড উৎপাদন করা।
(iv) রোলার ব্যবহার করে মণ্ড হতে বড় বড় পেপার সিট উৎপাদন এবং শুকিয়ে কাংঙ্খিত আকার দেওয়া হয়।
প্রবাহ চিত্র:-
ঘ.কাগজ রিসাইকেলের গুরুত্ব:
১. বর্জ পেপার রিসাইক্লিং করে নতুন পেপার তৈরি করলে পারিবেশে বর্জের পরিমাণ যতেষ্ঠ কমে এবং সেই সাথে পেপারের দামও কমানো সম্ভব।
২. বর্জ পেপার রিসাইক্লিং করে নতুন পেপার তৈরি করলে বিদ্যুতের অপচয় 70% কমানো সম্ভব। হিসাব করে দেখা যায়, প্রতি টন রিসইক্লিং পেপার ব্যাবহারে 3000-4000kW বিদ্যুত সাশ্রয় করা সম্ভব।
৩. বর্জ পেপার রিসাইক্লিং করে নতুন পেপার তৈরি করলে পানির ব্যবহার হ্রস পায় কারণ পাল্প তৈরিতেই প্রচুর পানির প্রয়েজন হয়। এক্ষেতে পাল্প তৈরির প্রয়োজন হয় না। হিসাব করে দেখা যায়, প্রতি টন রিসইক্লিং পেপার ব্যাবহারে 30000 লিটার পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।
৪. পেপার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত পচনশীল পদার্থ । কাজেই পেপার যখন মাটি কিংবা পানির সংস্পর্শে আসে, তখন পেপার পঁচে গীন হাউস গ্যাস CH4 এবং CO2 তৈরি করে। তাই পেপার রিসাইক্লিং -এ পৃথিবী উষ্ণকরনের প্রভাব কমিয়ে দেয়। হিসাব করে দেখা যায়, প্রতি টন রিসইক্লিং পেপার ব্যাবহারে ফলে ২৪ টি গাছ নিধান হতে রক্ষা সম্ভব।
৫. পেপার বিসাইক্লিং পানি এবং বায়ু দূষণ হ্রাস করে কারণ বিসাইক্লিং পেপারে সাধারণত ব্লিচিং এর প্রয়োজন হয়না । ব্লিচিং এ সাধারণত ব্লিচিং পাউডার এবং ডাইঅক্সিন ব্যবহৃত হয় যা থেকে উৎপন্ন ক্লোরিন পানি এবং বায়ু দূষণ ঘটায়।