মূলনীতি:-
কাঁচা খাদ্যে আর্দ্রতা ও বায়ুর উপস্থিতিতে অণুজীবের জন্ম ও বংশবিস্তার ঘটে। এর ফলে বা প্রভাবে খাদ্যের স্টার্চ-প্রোটিনের পলিমারীয় অণুগুলো ভেঙে অর্থাৎ ফারমেন্টেশন ঘটে খাদ্য দ্রব্য নষ্ট হয়ে যায়, পচনশীল অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। খাদ্যকে বায়ু ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখতে পারলে অণুজীব জন্মাতে পারে না বা জন্মালেও টিকতে পারে না। ফলে অণুজীবের অনুপস্থিতিতে খাদ্যের ফারমেন্টেশন বা পচন ঘটে না।এ কারণে পচনশীল খাদ্য নষ্ট হয় না, সংরক্ষিত থাকে। এ মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই ফল, সবজি, মাছ ইত্যাদিকে আগুনে ফুটিয়ে শুল্ক ও বায়ু শূন্য অবস্থায় আবদ্ধ কৌটায় সংরক্ষণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ারই নাম – সংরক্ষণের কৌটাজাতকরণ প্রণালি বা Canning.। কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন অপসারণ, এনজাইম ধ্বংস, অনাকাক্ষিত ব্যাক্টেরিয়া, ইস্ট এবং মোল্ডের বিকাশ রোধ করা হয়। এজন্য কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োগ করা হয় যাতে শুধু অণুজীবই ধ্বংস হয় না, তাদের বীজগুটিও নষ্ট হয়ে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে সাধারণত নিম্ন অম্লতার (pH > 4.6) খাদ্য দ্রব্যের ক্ষেত্রে 115–130°C তাপমাত্রায় এবং উচ্চ অশ্লীয় (pH < 4.6) খাদ্যের জন্য ফুটন্ত পানি গাহে (boiling water bath) খাদ্যদ্রব্য উত্তপ্ত করে কৌটাজাত করতে হয়।
খাদ্য কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা ।
সাধারণত চারটি পদ্ধতিতে খাদ্য কৌটাজাত করা হয়, যথা-
ক.রোদে খাদ্য শুকিয়ে কৌটাজাতকরণ
খ. লবণ, চিনি ও সিরকাসহ কৌটাজাতকরণ
গ. পিকেলস বা আচার তৈরি করে কৌটায় সংরক্ষণ
ঘ. আগুনের তাপে ফুটিয়ে কৌটাজাতকরণ ।
সূর্যতাপে শুকালে আগুনের তাপে খাদ্যের অণুজীব বা এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় খাদ্যকে বায়ুবিহীন অবস্থায় টিনের কৌটায় বা কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। খাদ্য ঢুকানোর আগেই কৌটাকে নির্বীজ বা sterilize করে নিতে হয়।
১৫% লবণের দ্রবণে বা ঘন (৫০-৬০%) চিনির সিরাপে অথবা ভিনেগার এর অম্লীয় মাধ্যমে অণুজীব জন্মাতে বা বিস্তার লাভ করতে পারেনা বলে এ ক্যানিং পদ্ধতিতে খাদ্যের সজীবতা ও পুষ্টিমান অক্ষুন্ন থাকে।
বিভিন্ন ফল যেমন আম, আনারস, পেয়ারা প্রভৃতিকে জ্যাম-জেলী হিসেবে টিনজাত করা হয়। সবজি যেমন কচি। ভুট্টা, সবুজ মটরশুটি, পাতাকপি, ফুলকপি, গাজর ইত্যাদি এবং মাছ-মাংস ইত্যাদিকেও কৌটায় সংরক্ষণ করা হয়।