প্রশ্ন->কয়লার ক্যালরিফিক মান 5500 BTU ব্যাখ্যা কর।

উওর: BTU হল British Thermal Unit কয়লার ক্যারিভিত্তিক তাপ 5500 BTU বলতে বুঝায় যে, এক পাউন্ড কয়লা পোড়ালে 5500 ক্যালরি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।

 প্রশ্ন->কয়লা থেকে ওয়াটার গ্যাসের প্রস্তুতি লেখ

উত্তর: কয়লা গ্যাসীয়করণের মাধ্যমে কঠিন কার্বন থেকে ওয়াটার গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। গ্যাসীয়করণ প্রক্রিয়া দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

কার্বনীকরণ প্রক্রিয়া :  4(C2H4)n  →  nC6H6  +  5nC + 3H2 + nCH4

গ্যাসীয়করণ প্রক্রিয়া : 4C + O2 + 2H2O  →  4CO + 2H2

কয়লাকে গ্যাসীয় জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার জন্য অতি উত্তপ্ত কার্বনের মধ্য দিয়ে জলীয় বাষ্প চালনা করা হয়। এর ফলে ওয়াটার গ্যাস উৎপন্ন হয়।

C + H2O (steam)  →  CO + H2

প্রশ্ন- >কয়লার গ্যাসীয়করণ করা হয় কেন?

উত্তর: নিম্নোক্ত কারণে কয়লার গ্যাসীয়করণ গুরুত্বপূর্ণ

(i) গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন, তরল জ্বালানির স্বল্পতা ও কয়লার প্রাচুর্যতার কারণে জ্বালানি গ্যাস সংশ্লেষণে       কয়লার গ্যাসীয়করণ করা হয় ।

(ii) গ্যাসীয়করণের ফলে প্রাপ্ত জ্বালানিতে দূষণ কম হয়।

(iii) কঠিন কয়লা পরিবহন ব্যয়বহুল ও ঝামেলাপূর্ণ হওয়ায় গ্যাসীয়করণ প্রয়োজন।

(iv) ওয়াটার গ্যাস (CO + H,) ও প্রডিউসার গ্যাস (CO + N) কয়লার গ্যাসীয়করণে পাওয়া যায় যা অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া তৈরির কাঁচামাল।

প্রশ্ন- >জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বুঝ?

উত্তর: বহু বছর আগে মাটির নিচে চাপা পড়া মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণি উচ্চ তাপ ও চাপে খনিজ প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেলে পরিণত হয়, এদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি ও অক্সিজেনের দহনে প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এ তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, অটোরিকশা, কলকারখানা প্রভৃতির যান্ত্রিক ক্রিয়া করা হয়।

প্রশ্ন- >কয়লায় সালফারের উপস্থিতি ক্ষতিকর কেন?

উত্তর: কয়লার ভেতর সালফার সাধারণত পাইরাইট ও মারকাসাইট খনিজ হিসেবে থাকে। এ খনিজসমূহ কয়লা পোড়ানোর সময় অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পরিবেশ দূষণকারী ও এসিড বৃষ্টির সহায়ক SO2 গ্যাস সৃষ্টি করে। এ কারণেই অধিক সালফারযুক্ত কয়লার মান ও চাহিদা কম হয়। তাই কয়লার সালফারের উপস্থিতি ক্ষতিকর।

প্রশ্ন- >সুইট গ্যাস এবং সাওয়ার গ্যাস বলতে কী বুঝ ?

উত্তর: প্রাকৃতিক গ্যাসে H2S অনুপস্থিত থাকলে অথবা এর উপস্থিতির পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে  5.7 mg এর কম হলে, সে প্রাকৃতিক গ্যাসকে সুইট (sweet gas) বলে।

প্রাকৃতিক গ্যাসে যদি প্রতি ঘনমিটার 5.7 mg এর সমপরিমাণ অথবা তার অধিক H2S গ্যাস মিশ্রিত থাকে, তবে তাকে সাওয়ার গ্যাস (sour) বলে।

প্রশ্ন- >প্রিলিং স্তম্ভের কাজ লিখ।

উত্তর: ইউরিয়া উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নির্বাত বাম্পকারক থেকে প্রাপ্ত গলিত ইউরিয়াকে প্রিলিং স্তম্ভের উপর দিক থেকে চালনা করে নিচের দিক থেকে তপ্ত বায় প্রবাহিত করা হয়। এতে গলিত ইউরিয়ার পানি বাষ্পীভূত হয়ে দানাদার ইউরিয়া পাওয়া যায়।

প্রশ্ন->সার হিসেবে ইউরিয়ার কার্যপ্রণালি ব্যাখ্যা কর?

উত্তর:  সিক্ত মাটিতে ইউরিয়া যোগ করলে প্রথমেই পানি দ্বারা এটি আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে NH3 ও CO2 উৎপন্ন করে। উৎপন্ন NH3 মাটিতে উপস্থিত নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া যেমন, নাইট্রোসোমোনাস নাইট্রোব্যাক্টর এর দ্বারা জারিত হয়ে HNO3 এ পরিবর্তিত হয়। এ HNO3 মাটিতে উপস্থিত ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে দ্রবণীয় নাইট্রেট লবণ উৎপন্ন করে যা উদ্ভিদ শোষণ করে থাকে।

প্রায় সব ধরনের মাটি ও ফসলের জন্য ইউরিয়া বিশেষ উপযোগী আদর্শ রাসায়নিক সার। বীজ বপন, চারা রোপন, ফসলের বৃদ্ধি সবক্ষেত্রেই এ সার প্রয়োগ করা হয়।

প্রশ্ন->তরল অ্যামোনিয়া থেকে ইউরিয়া প্রস্তুতির মূলনীতি লিখ।

উত্তর: ১মধাপ:- উপযুক্ত প্রভাববের উপস্থিতিতে স্টিম ও প্রকৃতিক গ্যাসের বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত CO2 এবং হেবার বস প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত তরল NH3 কে 200atm চাপে সংকুচিত করে স্টিল নির্মিত অটোক্লেভে স্টিমের সাহায্যে 160-180   তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে CO2 এবং তরল NH3 বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম কার্বমেট উৎপন্ন করে।

২য় ধাপ:- ১ম ধাপে উৎপন্ন অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) কে 130-140 উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) বিয়োজিত হয়ে ইউরিয়া (H2N-CO-NH2)উৎপন্ন করে।

এ ভাবে প্রাপ্ত  অ্যামোনিয়াম কার্বমেট (H2N-COO-NH4) এর 40-60% ইউরিয়াতে রুপান্তরিত হয়। ১ম ও ২য় ধাপে অবিক্রিয়কৃত  অংশ গুলো ইউরিয়া পুনঃউৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন->অ্যানিলিং বা Tempering বা পাইন বা পান কী? কাঁচকে অ্যানিলিং করা হয় কেন ?

উত্তর: Shap বা আকৃতি দেওয়া দ্রব্যকে অর্থাৎ কাঁচকে  অঘাত ও তাপমাত্রা সহনীয় করা জন্য অ্যানিলিং কারা হয়। অ্যানিলিং না করা হলে কাঁচ তাপমাত্রার পরিবর্তন এমনকি আঘাত সহ্য করেতে পারে না। প্রতিটি কাচের গলনাঙ্কের নিচে একটি সংকট তাপমাত্রা থাকে। কাঁচকে উত্তপ্ত করে তার সংকট তাপমাত্রার উপরে বেশ কিছুক্ষন রেখে ধীরে ধীরে শীতল করা হয়। ফলে কাঁচের অ্যানিলিং সম্পন্ন হয়। অ্যানিলিং করার পর কাঁচ সুষম হয়। ফলে কাচ তাপমাত্রসহ, ঘাতসহ এবং টেকসই হয়।

প্রশ্ন- >কাঁচকে অতিশীতলকৃত তরল বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর: কাঁচ উচ্চ সান্দ্রতা বিশিষ্ট স্বচ্ছ, অস্ফটিকাকার অজৈব কঠিন পদার্থ । পরীক্ষা থেকে দেখা যায় কাঁচের মধ্যস্থ অণুসমূহ যে জালিকা কাঠামো সৃষ্টি করে, তা প্রতিসম বা পর্যায়বৃত্তিক নয়। এগুলো অনেকটা তরলের ন্যায় অগোছানো। এ কারণেই কাঁচ কে অতিশীতলকৃত তরল বলা হয়।

প্রশ্ন- >ফেল্ডস্পার বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: অ্যালুমিনা, সিলিকা ও ক্ষারীয় অক্সাইডের মিশ্রণে গঠিত পদার্থই ফেল্ডস্পার। সিরামিক পদার্থের বিগালক ও বাইন্ডার হিসেবে ফেল্ডম্পার ব্যবহৃত হয়। ফেল্ডম্পার সিরামিক পদার্থের কাচবৎ অবস্থা তৈরিতে ত্বরান্বিত করে।

প্রশ্ন->রঙিন সিরামিক কীভাবে উৎপাদন করা হয়?

উত্তর: গ্লেজিং এর সময় সিরামিক সামগ্রীতে কাংঙ্খিত বর্ণ দেওয়া হয় । গ্লেজিং করার জন্য তরল গ্লেজ পদার্থের ভেতর সিরামিক সামগ্রী ডুবিয়ে 700 – 900°C তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। রঙিন বর্ণ প্রদানের জন্য এ সময় অবস্থান্তর মৌলের ধাতব অক্সাইড বা লবণ ব্যবহার করা। যেমন:-

সবুজ বর্ণের জন্য কপার অক্সাইড (CuO), বেগুনি বর্ণের জন্য ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড (MnO2) এবং নীল বর্ণের জন্য কোবাল্ট অক্সাইড (CoO)

প্রশ্ন->গ্লেজিং কী? সিরামিকস সামগ্রীর উপর গ্লেজিং করা হয় কেন?

উত্তর: তাই (CaO, Al2O3, Na2O, PbO, B2O3) প্রভৃতির বিগলিত মিশ্রণে যাকে glaze মিশ্রণ বলে, এর মধ্যে ডুবিয়ে অথবা তপ্ত সিরামিক দ্রব্যের উপর NaCl ছিটিয়ে দিলে স্টিমের উপস্থিতে NaCl 1600 তাপমাত্রায় বিয়োজিত হয়ে Na2O এবংHCl গ্যাস উৎপন্ন করে। অতঃপর উৎপন্ন Na2O সিরামিসকের  সিলিকার (SiO2) সাথে গলিত Na2SiO3 তৈরি করে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে মসৃণতা সৃষ্টি করে। এ প্রক্রিয়ারই নাম গ্লেজিং। তবে কখনও কখনও গ্লেজ এর সঙ্গে রঙ্গিন ধাতব অক্সাইড (যেমন: CoO নীল, Fe2O3 হলুদ, CuO সবুজ ) ব্যবহার করে পৃষ্টতল রঙ্গিনও করা হয়।

প্রশ্ন->যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পাল্পের পার্থক্য লিখ।

উত্তর: যান্ত্রিক পাল্প তৈরিতে ভৌত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। অপরদিকে রাসায়নিক পাল্প তৈরিতে রাসায়নিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যান্ত্রিক পাল্প অর্থনৈতিক খরচ কম হয়। রাসায়নিক পাল্প অর্থনৈতিক খরচ বেশি হয়। যান্ত্রিক পাল্প গঠিত পাল্পের মান নিম্ন হয়। রাসায়নিক পাল্প উচ্চমান সম্পন্ন পাল্প গঠিত হয়। যান্ত্রিক পাল্প তৈরিতে কুকিং লিকার যোগ করা হয় না। রাসায়নিক পাল্প তৈরিতে কুকিং লিকার যোগ করা হয়।

প্রশ্ন->পাল্পের বিরঞ্জন ক্রিয়া লিখ।

উত্তর: গাঢ়ীকৃত পাল্পকে উপযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ যোগ করে বিরঞ্জন করা হয়। বিরঞ্জন ক্রিয়া এক ধাপে বা তিন ধাপে সম্পন্ন করা যায়।

Ca(OCI)Cl + 2H2O  →  Ca(OH)2  +  Cl2

Cl2  +  H2O  →  HCl + [O]

রঙ্গিন বস্তু  +  [O]  →  বর্ণহীন বস্তু।

প্রশ্ন->পোটল্যান্ড সিমেন্টের সংযুতি লিখ?

উত্তর: পোটল্যান্ড সিমেন্টের সংযুতি নিম্নরুপ:

প্রশ্ন->সিমেন্ট প্রস্তুতির সময় 2 – 3%  জিপসামের ব্যাবহার করা হয় কেন?

উত্তর: সিমেন্টের উপাদান ট্রাইক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট (3CaO. Al2O3) সিমেন্ট দ্রুত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দ্রুত জমাট বাঁধা অংশ পরে ফেটে যায়। কিন্তু জিপসাম (CaSO4.2HO) ট্রাইক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেটের(3CaO. Al2O3) সাথে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম সালফো অ্যালুমিনেট (3CaO. Al2O3. 3CaSO4.2H2O) তৈরি করে। ফলে সিমেন্টের দ্রুত জমাট বাঁধা প্রক্রিয়াটি ধীরে চলে এবং উৎপন্ন কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা শক্তি বেড়ে যায়, ফেটে যায় না। সুতরাং সিমেন্টের জমাট বাঁধা প্রক্রিয়াকে মন্থর করা জিপসামের কাজ ।

3CaO. Al2O3  +  3(CaSO4. 2H2O) + 2H2O  →  3CaO. Al2O3. 3CaSO4.2H2O  +  6H2O

প্রশ্ন->পোর্টল্যান্ড সিমেন্টকে হাইড্রোলিক সিমেন্ট বলা হয় কেন?

উত্তর: যে সকল সিমেন্ট পানির উপস্থিতিতে জমাট বাঁধতে পারে তাদেরকে হাইড্রোলিক সিমেন্ট বলে। পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট পানির উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে শুরু করে এবং শেষ পর্যায়ে একটি কঠিন দৃঢ় বস্তুতে পরিণত হয়। এ ঘটনাকে সিমেন্টের জমাট বাঁধা বলা হয়ে থাকে। সিমেন্টের মধ্যে পরিমাণ মতো পানি যোগ করলে, সিমেন্ট উপস্থিত ক্যালসিয়াম যৌগগুলো বিয়োজিত হয়ে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড  এবং পানি সংযোজিত ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেটের কেলাস সৃষ্টি করে। এ কেলাসগুলো ধীরে ধীরে একটি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করে একটি বিরাট সুদৃঢ় জালকের সৃষ্টি করে এবং দৃঢ়ভাবে জমাট বাঁধে। যেহেতু পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট পানির উপস্থিতিতে জমাট বাঁধে। তাই পোর্টল্যান্ড সিমেন্টকে হাইড্রোলিক সিমেন্ট বলা হয়।

প্রশ্ন->সিমেন্ট হার্ডেনিং বলতে কী বোঝ?

উত্তর: হাইড্রেশন প্রক্রিয়ায় পানির মাধ্যমে কনক্রিটের হার্ডেনিং ঘটে। হাইড্রেশন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া, যেখানে সিমেন্টের প্রধান যৌগসমূহ পানির অণুর সাথে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে। এই প্রক্রিয়ায় হাইড্রেটেড উৎপাদ গঠিত হয়। হাইড্রেটেড উৎপাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্যালসিয়াম সিলিকেট হাইড্রেট, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও অ্যাট্রিগাইট (Ca3A.3CaSO4.32H2O)।

সিমেন্ট হার্ডেনিং এর সাধারণ বিক্রিয়া: 2(3CaO.SiO2)  +  xH2O  →  3CaO.2SiO2.xH2O  +  3Ca(OH)2

প্রশ্ন->সিমেন্টের জমাট বাঁধনে পানির প্রযোজন হয় কেন?

উত্তর: সিমেন্ট পানির উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে জমাট বাধতে শুরু করে এবং শেষ পর্যায়ে একটি কঠিন বস্তুতে পরিণত হয় । সিমেন্টের মধ্যে পরিমাণ মতো পানি যোগ করলে সিমেন্টে উপস্থিত ক্যালসিয়াম যৌগগুলো বিযয়োজিত হয়ে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড এবং পানি সংযোজিত ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেটের কেলাস সৃষ্টি করে। এ কেলাসগুরো ধীরে ধীরে একটি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করে বিরাট সুদৃঢ় জালকের সৃষ্টি করে এবং দৃঢ়ভাবে জমাট বাধে।

প্রশ্ন->চামড়া ট্যানিং এ Cr2(SO4)3 ব্যবহার করা হয় কেন?

উত্তর: চামড়া ট্রানিং এ Cr2(SO4)3 এ ব্যবহার করলে চামড়ার কোলাজেনের পেপটাইড বন্ধন (-CONH-) এর সাথে Cr3+ আয়ন সন্নিবেশ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে এনজাইম ট্রিপসিনের আর্দবিশ্লেষণ  ক্রিয়া ঘটতে পারে না। ক্রোম টেনিং এরূপে চামড়াকে আর্দ্রবিশ্লেষণ দ্বারা পচন বিয়োজন থেকে মুক্ত রাখে।

প্রশ্ন->চামড়া ট্যানিং করা প্রয়োজন কেন ?

উত্তর: জীবিত পশুর শরীরের চামড়া সাধারণত নরম ও নমনীয় যা দৃঢ় ও টেকসই হয় । কিন্তু মৃত পশুর চামড়া আর্দ্র হলে পঁচে যায় এবং শুষ্ক হলে শক্ত ও ভঙ্গুর হয়। ট্যানিং প্রক্রিয়ায় চামড়াকে সুস্থিত করা এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পঁচনশীলতা রোধ করা যায়।

সুতরাং চামড়াকে পঁচনশীলতা ও ভঙ্গুরতার হাত থেকে রক্ষা করতে ট্যানিং করা প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন->ট্যানিং-এ Milk of lime কেন গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তর: Milk of lime বলতে মূলত সোডিয়াম সালফাইড, সায়ানাইড, স্যামিন ইত্যাদি যুক্ত চুনের পানিকে [Ca(OH)] বুঝায়। ট্যানিং প্রক্রিয়ায় সোকিং  ধাপ এর পর লাইমিং করা আবশ্যক। লাইমিং ধাপে, milk of  lime মূলত নিম্নলিখিত কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ –

(i) এটি চামড়ার পশম, নখ ও ক্যারাটাইনাস জাতীয় পদার্থ দূরীভূত করে।

(ii) কিছু দ্রবীভূত প্রোটিন, যেমন—মিউসিনকে বিমুক্ত করে।

(iii) চামড়ার আঁশ বা ফাইবারকে ভালোভাবে আলাদা করে মসৃণতর করে।

(iv) গ্রিজ জাতীয় পদার্থ ও ফ্যাট কে কিছু পরিমাণ নির্গত করে।

(v) কোলাজেন তৈরির মাধ্যমে ট্যানিং কার্যকরী করে।

প্রশ্ন->চামড়ার ট্যানিং এ লবণ যুক্ত করা হয় কেন?

উত্তর: চামড়া ট্যানিং এর সাহায্যে পশুর কাঁচা চামড়াকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। ট্যানিং-এর সময় চামড়াকে লবণযুক্ত করা হয় যাতে চামড়ায় বিদ্যমান প্রোটিন জাতীয় পদার্থ যেমন- কোলাজেন যাতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পচে না যায়। এছাড়া খাবার লবণ (NaCl) যোগ করার ফলে এটি কোলাজেনের pH মানকে বেশ নিচে নামিয়ে চামড়ায় খনিজ ট্যানিং পদার্থ প্রবেশে সাহায্য করে এবং চামড়ার pH নেমে গিয়ে যে ক্ষতি হতো তা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

প্রশ্ন->ইউট্রিফিকেশন কী এবং কেন ঘটে?

উত্তর: জলজ বাস্তুসংস্থানে বিভিন্ন পুষ্টিকারক পদার্থের (N, P) প্রভাবে। শৈবাল, কচুরিপানা, ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধির ঘটাকে। ইউটিফিকেশন বলে। কৃষিক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে সার ব্যবহারের ফলে, সেগুলো এসে জলাশয়ে পানি দূষণ ঘটায়। ডিটারজেন্ট থেকে সৃষ্ট ফসফেট ও নাইট্রেট জলীয় পরিবেশে ইউট্রিফিকেশন ঘটায়।

প্রশ্ন->তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ইটিপির কার্যক্রম মূলত জারণ – বিজারণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা।

উত্তর: তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অ্যানোড হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হলে, অ্যানোড ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয় ।

জারণ বিক্রিয়া : Al – 3e  → Al3+

ক্যাথোডে প্রোটন আকর্ষী হয় এবং ইলেকট্রন যুক্ত হয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস। উৎপন্ন হয় যা বিজারণ বিক্রিয়া । বিজারণ বিক্রিয়া : 2H+ + 2e  → H2

সুতরাং, তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ইটিপিতে জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়া  সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন->ETP বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: রাসায়নিক শিল্প কারখানার বর্জ্য পানি বা তরল পদার্থে জৈব ও অজৈব পদার্থ মিশ্রিত থাকে। এ বর্জ্য পানিকে Effluent বলা হয়। এরূপ শিল্প কারখানার Effluent থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থকে পৃথক করার প্রক্রিয়াকে Effluent Treatment Plant বা ETP বলে। কারখানার প্রকৃতিভেদে বর্জ্য পানিতে দূষকের বিভিন্ন প্রকৃতি হতে পারে। যেমন: ধাতব আয়ন, অজৈব পদার্থ এবং জৈব যৌগ হতে পারে।

এ বর্জ্যসমূহকে তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া, প্রভাবক প্রক্রিয়া অথবা জীব প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পৃথক করা হয়।

প্রশ্ন->ASP বলতে কী বুঝ ?

উত্তর: ASP এর পূর্ণরূপ Activated Sludge Process. ইটিপির কার্যপ্রণালীর ধাপসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কলকারখানা কিংবা গৃহস্থলী বর্জ্য পানিতে অবস্থানরত জৈব দৃষক পদার্থকে এই প্রক্রিয়াতে দূর করা হয় । সাধারণত অক্সিজেন এর উপস্থিতিতে জীবাণু, দূষক পদার্থকে জারিত করে থাকে। ফলশ্রুতিতে দূষিত পানিতে স্লাজ বা ফ্লক তৈরি হয়। এই স্লাজ বা ফ্লক স্তুপাকারে জমাট বাঁধা ময়লা পরবর্তীতে ছাঁকন প্রক্রিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়। একে কখনো কখনো ট্রিকলিং ফিল্টার পদ্ধতিও বলা হয়।

প্রশ্ন->রিসাইকেলিং বলতে কি বুঝ ?

উত্তর: পুনঃচক্ৰায়ন হচ্ছে কতিপয় ধাপ সংবলিত এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ব্যবহৃত বস্তুকে প্রক্রিয়াকরণ করে নতুন ব্যবহার্য পণ্যে রূপান্তর করা হয়। এ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তুর বর্জ্যে পরিণতকরণ রোধ, নতুন কাঁচামালের ব্যবহার হ্রাস, পণ্যের মূল্যহ্রাসসহ  সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

প্রশ্ন->কাগজের রিসাইকেল সবচেয়ে উত্তম কেন?

উত্তর: কাগজ উৎপাদনের জন্য গাছ, বাঁশ, আখের ছোবড়া প্রভৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। কাগজ উৎপাদন একদিকে যেমন ব্যয়বহুল। অন্যদিকে পরিবেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। নতুন কাগজ উৎপাদনের তুলনায় কাগজ রিসাইকেলে পানি দূষণ 30 – 40% এবং বায়ু দূষণ 70 – 75% কম হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও গ্রিন হাউস প্রভাব সংরক্ষনে ভূমিকা রাখে । এছাড়া  জ্বালানি  শক্তির সাশ্রয় ঘটে। এ কারণে কাগজ রিসাইকেল অন্যসব থেকে উত্তম।

প্রশ্ন->কাচ রিসাইকেল গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: কাচ পচনশীল নয় এবং পরিবেশে এরা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না । এছাড়া কাচ উৎপাদনে প্রায় 1500°C তাপমাত্রা প্রয়োজন পড়ে যাতে ব্যবহৃত জ্বালানি প্রচুর পরিমাণে দূষক পদার্থ তৈরি করে। অন্যদিকে কাচ 100% রিসাইকেল যোগ্য এবং রিসাইকেলে কম জ্বালানি প্রয়োজন হয়। সুতরাং, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে কাচের রিসাইকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন->ইটখোলার পাশের জমিতে ফসলের ফলন কম হয় কেন?

উত্তর: ইটখোলার বায়ুতে CO2, SO2  সহ সামান্য NO2 flu-গ্যাস হিসেবে বায়ুতে মিশে থাকে। বৃষ্টির পানির সাথে এসব গ্যাসের বিক্রিয়ায় এসিড উৎপন্ন হয় এবং বৃষ্টির পানিতে মিশে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয় । একে এসিড বৃষ্টি বলে। এই এসিড বৃষ্টির কারণে ইটখোলার পাশের জমির pH মান 4.5 এর নিচে নেমে যায়। অর্থাৎ জমির এসিডিট বৃদ্ধি পায় যা ফসলের জন্য ক্ষতিকর। তাই ইটখোলার পাশের জমিতে ফসলের ফলন কম হয়।

প্রশ্ন->CCS বলতে কী বুঝ ?

উত্তর: CCS এর পূর্ণরূপ Carbon Capture and Sequestration কয়লার দহনে উৎপন্ন CO2 গ্যাস বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই CCS প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডকে নির্গমন না করে বরং পৃথকীকরণ, কমপ্রেশন ও নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু এর ফলে উৎপন্ন শক্তির 30-40% ই কমে যায়। পরবর্তীতে 1 atm চাপের চেয়ে বেশি চাপের রিজার্ভের এ অথবা গভীর সমুদ্রের তলদেশে CO2 কে চাপ দেওয়া হয়। একেই কার্বন সিকুয়েসট্রেশন বা CCS প্রযুক্তি বলে।

প্রশ্ন->ENP বলতে কী বুঝ?

উত্তর: ENP এর পূর্ণরূপ হলো- Engineered Nano Particle বা বিশেষভাবে তৈরি ন্যানো পার্টিক্যাল। খাদ্য শিল্পে প্রিজারভেটিভস প্রস্তুতিতে ENP ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি এবং খাদ্যের এন্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ বাড়াতে ENP ন্যানো পার্টিক্যাল ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও চা, চকোলেট ইত্যাদির স্বাদ, গন্ধ

প্রশ্ন->অণুর আকৃতি কখন ন্যানো পার্টিক্যাল অপেক্ষা বড় হয়। ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সাধারণত অণুর আকৃতি (0.1-1nm) পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে ন্যানো পার্টিক্যাল এর আকৃতি (1–100nm) পর্যন্ত হয়। তবে কিছু কিছু বায়ো অণু আছে যাদের আকৃতি (10–100nm) পর্যন্ত হতে পারে। আবার ন্যানো পার্টিক্যাল মূলত পরমাণু বা অণুর মেঘ যা। (1-100nm) স্কেলে অবস্থান করে। তাই ক্ষেত্র বিশেষে অণুর আকৃতি ন্যানো পার্টিক্যাল অপেক্ষা বড় হয়।

প্রশ্ন->120 nm আকার বিশিষ্ট কণিকা ন্যানো কণা কি না? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর. ন্যানো কণার আকার সীমা হলো 1-100 nm । তাই 120 nm আকার বিশিষ্ট কণিকা ন্যানো কণা নয়।

প্রশ্ন->ন্যানো কণা গলনাংক স্থৃল কণার গলনাংকের চেয়ে কম কেন ?

উত্তর: বস্তুর গলনাংক তার আকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বস্তুর আকার যত কমতে থাকবে তার গলনাংক ততই কমবে। ন্যানো কণা বস্তুর স্বাভাবিক আকৃতির চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র। তাই ন্যানো কণার গলনাংক বস্তুর স্বাভাবিক গলনাংকের চেয়ে কম।

প্রশ্ন->50 nm দৈর্ঘ্যের তামার তারকে বাকানো যায় না কেন?

উত্তর:  50 nm দৈর্ঘ্যের তামার তার স্থৃল কপার কণার মত ঘাতসহ ও নমনীয় নয় বলে 50 nm দৈর্ঘ্যের তামার তারকে বাঁকানো যায় না।

প্রশ্ন->বিলেট বলতে কী বুঝ?

উত্তর:  বিলেট (Bluet) ধাতু নিষ্কাশন বা রিসাইক্লিং কালে গলিত ধাতকে বিশুদ্ধ অবস্থায় সংগ্রহ করার জন্য নির্গম ‘ট্যাপের সাহায্যে ঐ ধাতকে সিলিন্ডার আকারে ঠাণ্ডা করা হয়। এরপ আকারে কপার সিলিন্ডার রিসাইক্লিং কালে তৈরি করা হয়। এদের কপার বিলেট বলে।

প্রশ্ন->পরমাণু ও ন্যানো পার্টিক্যালের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তর: নিচে পরমাণু ও ন্যানো পার্টিক্যালের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো

প্রশ্ন->লেড ধাতু কীভাবে হিমোগ্লোবিন বিনষ্ট করে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে Pb শরীরে প্রবেশ করলে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ সাহায্যকারী এনজাইমকে নিষ্ক্রিয় করে হিমোগ্লোবিন  উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে অ্যানিমিয়ার সৃষ্টি হয়। অন্যান্য ভারী ধাতুর ন্যায় এর সালফারের প্রতি খুব বেশি আসক্তির কারণে এটি এনজাইমের – S – H বন্ধনকে ভেঙে দেয়।

লেড ধাতু রক্তে হেম সংশ্লেষণে বাধা প্রদান করে। ফলে হিমোগ্লোবিন বিনষ্ট হয়।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *