জারণ সংখ্যা [Oxidation Number]:-
সংজ্ঞা:- কোনো যৌগের মধ্যে উপাদান মৌলগুলি জারণ বিজারণের যে বিশেষ স্তরে অবস্থান করে, তা যে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়, সেই সংখ্যাকে জারণ সংখ্যা বলে । যেমন— Cu2+, Na1+, S2- ইত্যাদি আয়নগুলির জারণসংখ্যা হল যথাক্রমে +2, +1, -2 ইত্যাদি ।
জারন: [Oxidation]:-
সংজ্ঞা:- যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো অণু, পরমাণু বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে জারণ বলে । অথাৎ যখন কোন পরমানু ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে তখন সে ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিনত হয় আর এই ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন কেই ক্যাটায়ন বলে। যেমনঃ
Na – 1e– → Na+ (ক্যাটায়ন)
এখানে সোডিয়াম ১টি ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিনত হল –এই প্রক্রিয়াটিই হল জারন প্রক্রিয়া।যেহেতু সোডিয়াম ১টি ইলেক্ট্রন ত্যাগ করল তাই সোডিয়াম হল বিজারক।
জারণ :
১. e- এর অপসারণ
২. ধনাত্মক চার্জ ↑
৩. ঋণাত্মক চার্জ ↓
৪. যোজ্যতা বৃদ্ধি ↑
বিজারক পদার্থ [Reducing agents]:- রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যে পদার্থ অন্য পদার্থকে বিজারিত করে নিজে জারিত হয় তাকে বিজারক পদার্থ বলে । ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুযায়ী, বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অপরকে বিজারিত করে, তার ফলে বিজারক দ্রব্যের জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । যেমন— CuO এবং H2 -এর বিক্রিয়ায় বিজারক দ্রব্য H2 ; কারণ H2, CuO -কে বিজারিত করে ধাতব কপারে এবং নিজে জারিত হয় জলে ।
জারন – বিজারক – জারিত
১. ইলেকট্রন দান করে ধনাত্মক জারন মান বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি হল জারন ।
২.যে রাসানিক সত্ত্বা ইলেকট্রন দান করে নিজের ধনাত্মক জারন মান বৃদ্ধি করে তাকে বিজারক বলে ।
৩. বিজারক ইলেকট্রন দান করে নিজে জারিত হয়(ধনাত্মক জারন মান বৃদ্ধি করে) এবং অন্যকে বিজারিত করে (ধনাত্মক জারন মান হ্রাস করে)।
বিক্রিয়ায় জারকের যৌগ অবস্থা | বিক্রিয়ায় জারকের আয়ন অবস্থা | উৎপাদে জারকের আয়ন অবস্থা |
FeSO4 | Fe2+ | Fe3+ |
H2S | S2- | S |
H2O2 | O22- | O2 |
KI | 2I– | I2 |
H2C2O4 | C2O42- | 2CO2 |
Na2S2O3 | S2O32- | S4O62- |
CuSO4 | Cu2+ | Cu/ Cu+ |
জারন অর্ধবিক্রিয়া :
1. 2Fe2+ – 2e– → 2Fe3+
2. S2- – 2e– → S
3. O22- – 2e– → O2
4. 2I– – 2e– → I2
4. C2O42- – 2e– → 2CO2
4. Cu2+ – e– / 2e– → Cu+/ Cu
4. S2O32- – e– → S4O62-
বিজারণ [Reduction]:-
সংজ্ঞা:- যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো অণু, পরমাণু বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে বিজারণ বলে । অথাৎ বিজারনঃ যখন কোন পরমানু ইলেক্ট্রনতন গ্রহন করে তখন সে ঋনাত্বক চার্জযুক্ত আয়নে পরিনত হয় আর এই ঋনাত্বক চার্জযুক্ত আয়নকেই অ্যানায়ন বলে। যেমনঃ
Cl + 1e– = Cl– ( অ্যানায়ন)
এখানে ক্লোরিন ১টি ইলেক্ট্রন গ্রহন করে ঋনাত্বক চার্জযুক্ত আয়নে পরিনত হল –এই প্রক্রিয়াটিই হল বিজারন প্রক্রিয়া।যেহেতু ক্লোরিন ১টি ইলেক্ট্রন গ্রহন করল তাই ক্লোরিন হল জারক।
বিজারণ :
১. e- এর সংযোজন
২. ধনাত্মক চার্জ ↓
৩. ঋণাত্মক চার্জ ↑
৪. যোজ্যতা হ্রাস ↓
জারণ = ইলেক্ট্রন ত্যাগ জারক = ইলেক্ট্রন গ্রহণ বিজারণ = ইলেক্ট্রন গ্রহণ বিজারক = ইলেক্ট্রন ত্যাগ
জারক পদার্থ [Oxidising agents]:- যে পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়া কালে অন্য পদার্থকে জারিত করে নিজে বিজারিত হয় তাকে জারক পদার্থ বলে । ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুযায়ী জারক দ্রব্য ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় এবং অপরকে জারিত করে । বিক্রিয়ার ফলে জারক দ্রব্যের জারণ সংখ্যা হ্রাস পায় । যেমন— CuO এবং H2 -এর বিক্রিয়াটিতে জারক দ্রব্য CuO, কারণ CuO হাইড্রোজেনকে জলে জারিত করেছে এবং নিজে বিজারিত হচ্ছে ধাতব কপারে । CuO + H2 → Cu ↓+ H2O
বিজারন – জারক – বিজারিত
১. ইলেকট্রন গ্রহন করে ধনাত্মক জারন মান হ্রাসের প্রক্রিয়াটি হল বিজারন ।
২.যে রাসানিক সত্ত্বা ইলেকট্রন গ্রহন করে নিজের ধনাত্মক জারন মান হ্রাস করে তাকে জারক বলে ।
৩. বিজারক ইলেকট্রন গ্রহন করে নিজে বিজারিত হয়(ধনাত্মক জারন মান হ্রাস করে) এবং অন্যকে জারিত করে (ধনাত্মক জারন মান বৃদ্ধি করে)।
বিক্রিয়ায় জারকের যৌগ অবস্থা | বিক্রিয়ায় জারকের আয়ন অবস্থা | উৎপাদে জারকের আয়ন অবস্থা |
KMnO4 | MnO4– | Mn2+ |
K2Cr2O7 | Cr2O72- | 2Cr3+ |
বিজারন অর্ধবিক্রিয়া :
1. MnO4– + 5e– + 8H+ → Mn2+ + 4H2O
2. Cr2O72- + 6e– + 14H+ → 2Cr3+ + 7H2O
কিছু জারন বিজারন বিক্রিয়া:
2KMnO4 + 10FeSO4 + 8H2SO4 → K2SO4 + 2MnSO4 + 8H2O + 5Fe2(SO4)3
2KMnO4 + 5H2S + 3H2SO4 → K2SO4 + 2MnSO4 + 8H2O + 5S
2KMnO4 + 5H2O2 + 3H2SO4 → K2SO4 + 2MnSO4 + 8H2O + 5O2
2KMnO4 + 10KI + 8H2SO4 → 6K2SO4 + 2MnSO4 + 4H2O + 5I2
2KMnO4 + 5H2C2O4 + 3H2SO4 → K2SO4 + 2MnSO4 + 8H2O + 10CO2
K2Cr2O7 + 6FeSO4 + 7H2SO4 → K2SO4 + Cr2(SO4)3 + 7H2O + 3Fe2(SO4)3
K2Cr2O7 + 3H2S + 4H2SO4 → K2SO4 + Cr2(SO4)3 + 7H2O + 3S
K2Cr2O7 + 5H2O2 + 3H2SO4 → K2SO4 + Cr2(SO4)3 + 7H2O + 5O2
K2Cr2O7 + 6KI + 7H2SO4 → 3K2SO4 + Cr2(SO4)3 + 7H2O + 3I2
K2Cr2O7 + 3H2C2O4 + 4H2SO4 → K2SO4 + Cr2(SO4)3 + 7H2O + 6CO2
2CuSO4 + 4KI → CuSO4 + 2K2SO4 + Cu2I2 + I2
2Na2S2O3 + I2 → Na2S4O6 + 2NaI
জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের নিয়মাবলী :
যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
বিবরণ
১. মৌল
মৌলের পরমাণুর জারণ সংখ্যা শূণ্য। যেমন, ধাতু, H2, Cl2, Fe, Cu ইত্যাদি
২. এক পারমাণবিক আয়ন
জারণ সংখ্যা আয়নের আধানের সমান। Fe3+, Fe2+, Cl–, O2- আয়নের জারণ সংখ্যা যথাক্রমে +2, +3, -1, -2 । IA এবং IIA এবং IIIA গ্রুপসমূহের ধাতুর যৌগে ধাতুর পরমাণুর জারণ সংখ্যা এই ধাতুর গ্রুপ নম্বর।
৩. হ্যালোজেন
ক) সকল যৌগে F এর জারণ সংখ্যা -1
খ) হ্যালোজেন এবং O ব্যতীত অন্য যে কোন মৌলের পরমাণুর সাথে গঠিত দ্বিপারমাণবিক যৌগে হ্যালোজেন পরমাণুর জারণ সংখ্যা -1
গ) কোন হ্যালোজেন পরমাণুর সাথে উপরের পর্যায়ের হ্যালোজেন পরমাণুর জারণ সংখ্যা হবে +1
যেমন, ICl-এ I এর জারণ সংখ্যা +1 এবং Cl এর জারণ সংখ্যা -1
৪. অক্সিজেন
বেশির ভাগ যৌগে অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা -2, তবে পারঅক্সাইডে (যেমন H2O2) -O-O- বন্ধন থাকার ফলে O পরমাণুর জারণ সংখ্যা -1। এছাড়া F এর সাথে গঠিত যৌগে O এর জারণ সংখ্যা ধনাত্মক।
৫. হাইড্রোজেন
বেশির ভাগ যৌগে হাইড্রোজেনের জারণ সংখ্যা +1। তবে ধাতুর সাথে হাইড্রাইড গঠিত হলে (যেমন NaH) এর জারণ সংখ্যা হবে -1
৬. যৌগ ও যৌগমূলক
যৌগের কোন অণুতে বা সংকেত এককে সকল পরমাণুর জারণ সংখ্যার যোগফল শূণ্য হবে। তাই যৌগমূলকের ক্ষেত্রে এই যোগফল যৌগমূলকের আধানের সমান হবে। যৌগ মূলকের আধানকে তার জারণ সংখ্যা ধরা হয়।