খরপানি (Hard Water) :-

মিঠা পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্বিধনাত্মক ক্যাটায়ন যেমন Ca2+, Mg2+ ও Fe2+ আয়ন দ্রবীভূত থাকলে ঐ পানিকে খর পানি (hard water) বলা হয়। এ খর পানির সব আয়ন সাবানের জৈব অ্যানায়নের সাথে যুক্ত হয়ে পানিতে অদ্রবণীয় ভাসমান পদার্থ (soap scum) তৈরি করে। এতে সাবানের অপচয় ঘটে।  যেমন:-

CaCl2 + 2C17H35COONa → (2C17H35COO)2Ca  +  2NaCl

পানির খরতা (Hardness of Water) :-

পানিতে অধিক পরিমাণে দ্বিধনাত্মক ক্যাটায়ন যেমন, Ca2+ আয়ন, Mg2+ আয়ন ও Fe2+ আয়নের উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট পানির বিশেষ ধর্মকে পানির খরতা ধর্ম বলে। পানির খরতা ধর্মের কারণে খর পানিতে সাবানের অপচয় ঘটে।

পানির খরতা দুপ্রকার :-

ক)স্থায়ী খরতা ও

খ)অস্থায়ী খরতা

ক)স্থায়ী খরতা :-   পানিতে Ca2+, Mg2+ ও Fe2+ আয়নের ক্লোরাইড ও সালফেট অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত থাকলে তখন পানিতে স্থায়ী খরতা হয়। পানিকে ফুটিয়ে স্থায়ী খরতা দূর করা যায় না। আয়ন এক্সচেঞ্জ পদ্ধতিতে এবং কাপড় কাচা সোডা পদ্ধতিতে দূর করা হয়।

স্থায়ী খরতা দূরীকরণ : নিচের পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে পানির স্থায়ী খরতা দূর করা যায়।

(i) কাপড় কাচা সোডা পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে পানি কাপড় কাচা সোডা বা সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3.[10H2O]) যোগ করে পানিতে উপস্থিত Ca2+ এবং Mg2+ আয়নকে অদ্রবণীয় কার্বনেট লবণরূপে অধঃক্ষিপ্ত করা হয়।

CaCl2 + Na2CO3  → CaCO3+ 2NaCl

MgSO4 + Na2CO3       MgCO3  +  Na2SO4

 খ) অস্থায়ী খরতা:–  পানিতে Ca2+, Mg2+ ও Fe2+ আয়নের বাইকার্বনেট লবণ অধিক দ্রবীভূত থাকার কারণে সৃষ্ট খরতাকে অস্থায়ী খরতা বলে। অস্থায়ী খরতার পানিকে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে বাইকার্বনেট লবণ তাপে বিয়োজিত হয়ে অদ্রবণীয় কার্বনেটরূপে অধঃক্ষিপ্ত হয়। তখন অস্থায়ী খর পানি মৃদু পানিতে পরিণত হয়,খরতা দূর হয়।

অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ : নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে পানির অস্থায়ী খরতা দূর করা যায়।

(i) স্কুটন পদ্ধতি : অস্থায়ী খর পানিকে তাপ দিলে পানিতে উপস্থিত Ca ও Mg এর বাইকার্বনেট লবণগুলো অদ্রবণীয় কার্বনেট লবণে পরিণত হয়ে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

Ca(HCO3)2  → CaCO3 + CO2  + H2O

Mg(HCO3)2  →  MgCO3 + CO2  + H2O

MgCO3 পানিতে স্বল্প দ্রবণীয় তাই ফুটনের সাহায্যে Mg(HCO3)2  ঘটিত অস্থায়ী খরতা সম্পূর্ণরূপে দুর যায় না।

(ii) ক্লার্ক পদ্ধতি : এই পদ্ধতি অস্থায়ী খর পানি গণনার সাহায্যে নির্ণীত উপযুক্ত পরিমাণ কলিচুন Ca(OH) 2 মিশিয়ে আলোড়িত করা হয়। ফলে দ্রবণীয় বাইকার্বনেট লবণগুরো অদ্রবণীয় কার্বনেট লবণে পরিণত হয়ে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

Ca(HCO3)2  + Ca(OH)2  → 2CaCO3 + 2H2O

Mg(HCO3)2  + Ca(OH)2  →  MgCO3 + CaCO3+ 2 H2O

Mg(HCO3)2  পানিতে কিছুটা দ্রবণীয় হওয়ায় এটি আবার Ca(OH) 2 এর সাথে বিক্রিয়া করে Mg(OH)2  রূপে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

MgCO3 + Ca(OH) 2  →  Mg(OH)2  + CaCO3

কলিচুনের [Ca(OH)2 ] পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে Mg ঘটিত খরতা সম্পূর্ণরূপে দূর হয় না। কারণ 1 mol Mg(HCO3)2 এর জন্য 2 mol Ca(OH)2  প্রয়োজন হয়। আবার, কলিচুনের পরিমাণ বেশি হলে Ca2+ আয়নের উপস্থিতির জন্য কৃত্রিম খরতার সৃষ্টি হয়। তাই ক্লার্ক পদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিমাণ কলিচুন ব্যবহার করা দরকার।

স্থায়ী ও অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ : কারখানায় ব্যবহৃত সারফেস ওয়াটারের স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় খরতা  করতে পারমুটিট পদ্ধতি বা আয়ন এক্সচেঞ্জ (ion exchange) পদ্ধতিতে দ্বিযোজী ক্যাটায়নগুলো দূর করা হয়। খর পানিকে সোডিয়াম সালফাইট আয়ন SO3Na+ যুক্ত রেজিন (R- SO3Na+) এর মধ্যে চালনা করা হয়।

2 R- SO3Na+ (s) + Ca2+(aq)   →  (R SO3)2Ca2+ (s) + 2Na+ (aq)

নিষ্ক্রিয় আয়ন-বিনিময় রেজিনকে KCI দ্রবণ দ্বারা সক্রিয় করা যায়।

খর পানির সুবিধা :

(i) শক্ত হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম লবণের প্রয়োজন বলে খর পানি শিশুদের দেহ গঠনে বিশেষ সহায়ক। মৃদু পানির তুলনায় খর পানিতে সিসা খুব কম পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। কাজেই সিসা নির্মিত নলের ভেতর দিয়ে খর পানি সরবরাহ করা নিরাপদ। কারণ এতে সিসার বিষক্রিয়ার ভয় কম থাকে।

(ii) খর পানি, তথা খনিজ পানি চর্মরোগ, বাতরোগ, বদহজম প্রভৃতির ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

খর পানির অসুবিধা :

(i) কাপড় ধোয়া বা লন্ড্রির কাজে খর পানি ব্যবহার করলে সাবানের অপচয় ঘটে।

(ii) বয়লারে খর পানি ব্যবহার করলে এর ভেতরে অদ্রবণীয় কঠিন ধাতব লবণের আস্তরণ সৃষ্টি হয়। এরূপ আস্তরণ তাপ কুপরিবাহী বলে জ্বালানির খরচ বেড়ে যায়।

(iii) কাগজ, কৃত্রিম সিল্ক ও রঞ্জন শিল্পে খর পানি ব্যবহার করা যায় না। খর পানিতে দ্রবণীয় ফেরাস লবণ থাকলে কাগজ ও কৃত্রিম সিল্কের ওপর বাদামি বর্ণের দাগ পড়ে। কাপড় বা সুতার রঙের কাজে ব্যবহৃত রঙের সাথে খর পানির বিক্রিয়ার ফলে অদ্রবণীয় পদার্থ সৃষ্টি হয়। ফলে রঙের অপচয় ঘটে।

(iv) খর পানিতে চাল, ডাল প্রভৃতি সহজে সিদ্ধ হয় না এবং তরকারির স্বাদও কম হয়ে থাকে। তরকারির রং কালচে হয়ে যায়। গ্লাস ও বাসনপত্রে বাদামি রংয়ের দাগ পড়ে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!