প্রশ্ন:- তড়িৎবিশ্লেষ্য KOH দ্রবণ ব্যবহার করে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের গঠন ও সংঘটিত বিক্রিয়া আলোচনা।

হাইড্রোজেন ফুয়েল গঠন : এ জাতীয় ফুয়েল সেলের নাম হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল হলেও মূলত এটি হাইড্রোজেন  অক্সিজেন ফুয়েল সেল বা জ্বালানি কোষ বা বেকোন কোষ (Becon Cell) নামে পরিচিত। এ সেলের নাম থেকেই স্পষ্ট হয় এর জ্বালানি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। এ সেলের ক্যাথোড বা ধনাত্মক তড়িৎদ্বার তৈরি করা হয় গ্রাফাইডের সাহায্যে, তবে এর উপর Ni ধাতুর আস্তরণ থাকে। আর অ্যানোড বা ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার ও তৈরি করা একই গ্রাফাইডের সাহায্যে তবে এর আস্তরণ করা হয় Ni ও NiO দ্বারা। এক্ষেত্রে Ni ও NiO প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। এ উভয় তড়িৎদ্বারকে তড়িৎবিশ্লেষ্য KOH দ্রবণের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়।

বিক্রিয়াকৌশল:- হাইড্রোজেন গ্যাসকে (H2) 50 atm চাপে অ্যানোড তথা ঋণাত্মক তড়িদদ্বারে চালনা করা হয় তখন H2 গ্রাফাইডের সংস্পর্শে এসে ভেঙ্গে যায় এবং দ্রবণের OH এর সাথে যুক্ত হয়ে H2O উৎপন্ন করে করে।

অ্যানোড বা ঋণাত্মক তড়িদদ্বারে বিক্রিয়া :

ক্যাথোড বা ধনাত্মক তড়িৎদ্বারে O2 গ্যাসকে একই 50 atm চাপ সরবরাহ করা হয়। অক্সিজেন গ্রাফাইডের উপরিস্তরে KOH দ্রবণের পানি ও আগত ইলেকট্রনের সাথে যুক্ত হয়ে OH আয়ন উৎপন্ন করে।

ক্যাথোডে বিক্রিয়া :

ফুয়েলের জারণ বিক্রিয়ার শক্তি সরাসরি তড়িৎ শক্তি হিসেবে পরিবর্তিত হয়। এ কোষের তাপমাত্রা 100°C বিধায় উৎপন্ন। পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এ বাষ্পকে সংগ্রহ করে ঘনীভূত করে পুনরায় তরল পানিতে পরিণত করে একে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এ কোষের তড়িৎ দক্ষতা প্রায় 98% এবং এটিকে প্রায় 1000 ঘণ্টা যাবৎ ব্যবহার করা যায়।

প্রশ্ন:- ইলেকট্রোলাইট বা তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে বিশুদ্ধ পলিমার মেমব্রেন ব্যবহার করে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের গঠন ও সংঘটিত বিক্রিয়া আলোচনা। অথবা প্রোটিন এক্সচেঞ্জ মেমব্রেন ফুয়েল সেলের গঠন ও সংঘটিত বিক্রিয়া আলোচনা।

প্রোটিন এক্সচেঞ্জ মেমব্রেন ফুয়েল সেলের গঠন :- প্রোটিন এক্সচেঞ্জ মেমব্রেন ফুয়েল সেল হচ্ছে একটি নিম্ন তাপমাত্রার (0 – 200°) ফুয়েল সেল। এ সেলে প্রোটন অ্যানোড থেকে মেমব্রেনের ভেতর দিয়ে ক্যাথোডে ব্যাপিত হয় বলে এ সেলের নাম প্রোটিন বিনিময় মেমব্রেন কোষ বলে। এ কোষে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে বিশুদ্ধ পলিমার মেমব্রেন (যেমন: পলিটেট্রাফ্লোরো সালফোনিক এসিড) এবং অ্যানোড ও ক্যাথোড হিসেবে নিষ্ক্রিয় ধাতুর পাত (যেমন- প্লাটিনাম পাত) ব্যবহার করা হয় । জ্বালানি হিসেবে H2 গ্যাস ব্যবহার করা হয়। পলিমার অ্যানোড ইলেকট্রোলাইট মেমব্রেন দ্বারা অ্যানোড ও ক্যাথোডকে আলাদা রাখা হয়।

বিক্রিয়াকৌশল : অ্যানোডে হাইড্রোজেন ইলেকট্রন ত্যাগ করে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে। ত্যাগকৃত ইলেকট্রন অত্র বহিঃবর্তনীর মাধ্যমে ক্যাথোডে গমন করে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। অপরদিকে পলিমার ইলেকট্রোলাইট মেমবে দিয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ক্যাথোডে পৌছে। অ্যানোড থেকে প্রাপ্ত হাইড্রোজেন আয়ন ক্যাথোডে সরবরাহকৃত জ্বালানি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পানি উৎপন্ন করে।

ফুয়েল সেলের কর্ম দক্ষতা :-

সাধারণভাবে যে কোনো তড়িৎ রাসায়নিক কোষের কর্মদক্ষতা থাকে 60 – 70% । তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্ম দক্ষতার মানও। প্রায় 60 – 70% এর মত হয়। কিন্তু ফুয়েল সেলের কর্মদক্ষতার মান যথেষ্ট বেশি। এ মান প্রায় ৪0 – 85% হয়।

হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের সুবিধা এবং অসুবিধা:

হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল পরিবেশ বান্ধব কেন ?

অথবা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের সুবিধা গুলো লিখ ।

১. হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকে নির্গত পানি বিশুদ্ধ হওয়ায় পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না ।

২. যদি ফুয়েল সেলে ব্যবহৃত H2 গ্যাস নবায়নযোগ্য  শক্তির উৎস হতে তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায় তবে তা 100% ভেজাল মুক্ত ।

৩. সাধারনত জ্বালানী ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টে 1000KW-h বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য  25 পাউন্ড দূষক নির্গত হলেও হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলে মাত্র এক আউন্স দূষক নির্গত হয় ।

৪. হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল হালকা, এতে  পৃথক কোন যন্ত্রাংশ সংযোজনের প্রয়োজন হয় না, তাই এটি সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায় । তাই মহাশুন্যযানেও ইহা ব্যবহার করা হয় ।

৫. এতে কোন শব্দ দূষণ ও তাপীয় দূষণ ঘটে না এবং রিচার্জ করার কোন ঝামেলা নেই ।

৬. বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার করে  বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেখানে প্রচুর  SO2, NOx উদ্বায়ী জৈব যৌগ এবং CO2 গ্যাস এর মত বায়ু দূষক উৎপন্ন হয় । হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের ক্ষেত্রে এরুপ ঘটে না ।

৭. এটি উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন সেল । এ সেলে ব্যবহৃত জ্বালানীর প্রায় 75%  রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয় । অথচ একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে এ রাসায়নিক শক্তির সবোর্চ্চ   45% তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয় ।

হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের অসুবিধা গুলো লিখ

১. হাইড্রোজেন গ্যাস সরবরাহের জন্য রিফুয়েলিং স্টেশন খুব বেশি গড়ে ওঠেনি  । তাই যানবাহনে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের ব্যবহার এখনো সীমিত ।

২. তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে H2 গ্যাস উৎপাদন একটি অদক্ষ পদ্ধতি ।

৩. যদিও পৃথিবীতে একটি H2 প্রাচুর্যতম মৌল, তবুও এটি অন্য পদার্থের  সাথে মিশে থাকে । যেমন – জলীয় বাষ্প ।

৪. মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, ও বিউটেন হতে রিফর্মিং পদ্ধতিতে H2 গ্যাস পাওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য এবং পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব নয় ।

৫. যানবাহনের ব্যাটারির আকারের চেয়ে H2 ফুয়েল সেলের আকার তুলনামূলকভাবে বড়। H2 ফুয়েল সেলের প্রযুক্তি  এখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নতি হয়নি ।

৬. H2 ফুয়েল সেলে অত্যন্ত দামী ধাতু  (যেমন : Pt) ব্যবহার করা হয় ।

ফুয়েল সেল ব্যাটারির মধ্যে তুলনা:

ফুয়েল সেল ও গ্যালভানিক সেল বা সাধারণ ব্যাটারির মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

সাদৃশ্য : (i) উভয় সেলে দুটি ইলেকট্রোড থাকে। একটি হলো অ্যানোড বা ঋণাত্মক তড়িদ্বার এবং অপরটি হলো কা ধনাত্মক তড়িৎদ্বার।

ii. ইলেকট্রোড দুটিতে জারণবিজারণ বিক্রিয়া দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

iii. উভয় সেলে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার জন্য একটি বিজারক এবং একটি জারক পদার্থ থাকে।

বৈসাদৃশ্য :

One thought to “হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের গঠন ও সংঘটিত বিক্রিয়া(তড়িৎবিশ্লেষ্য KOH দ্রবণ এবংবিশুদ্ধ পলিমার মেমব্রেন ব্যবহার করে)”

  • Tafhim Hasan Sahib

    অসাধার। অনেক গুছিয়ে সহজ ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে।

    Reply

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *