কাঁচ উৎপাদন:-
সজ্ঞা:- সিলিকা বা কোয়ার্টজের(SiO2) সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3) এবং সোডিয়াম কার্বোনেট (Na2CO3) অথবা পটাশিয়াম কার্বোনেট (K2CO3) কে মিশিয়ে মিশ্রণ কে সম্পূর্ণভাবে গলিয়ে শীতল করা হলে যে শক্ত, অনিয়তাকার স্বচ্ছ বা প্রায় স্বচ্ছ ও ভঙ্গুর কঠিন পদার্থ পাওয়া যায় তাকে কাঁচ বলে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:-
* কাঁচ কোন সুনির্দিষ্ট বা বিশেষ কোন যৌগ নয় ।
* কাঁচ মূলত বিভিন্ন ধাতব সিলিকেটের মিশ্রণ।
* বাসায়নিক দৃষ্টিকোন থেকে কাঁচ মূলত সোডিয়াম সিলিকেট (Na2SiO3) এবং ক্যালসিয়াম সিলিকেটের (CaSiO3) মিশ্রন।
* কাঁচ কোন সুনির্দিষ্ট যৌগ না হওয়ায় কাঁচের কোন নির্দিষ্ট সংকেত নেই। তবে কাঁচকে সাধারণত নিম্নোক্ত সাধারন সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
xNa2O অথাবা xK2O . yMO . 6SiO2
এখানে, x ও y হলো অক্সাইড অণুর সংখ্যা এবং M হলো দ্বিযোজী ধাতু (Mg, Ca, Ba এবংZn ইত্যাদি)।
কাঁচ শিল্পোৎপাদনে ব্যাবহৃত কাঁচামাল:-
(i) বালি বা সিলিকা (SiO2): SiO2 অবশ্যই আয়রনমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
(ii) সোডিয়াম অক্সাইড (Na2O): Na2O এর উৎস হলো Na2CO3 , Na2O বিগালক হিসাবে কাজ করে।
(iii) লাইম (CaO): CaO এর উৎস হলো CaCO3 , CaO বিগালক কাঁচের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
(iv) কিউলেট : ভাঙ্গা কাঁচের টুকরা। এগুলোও বিগালক হিসাবে কাজ করে।
(v) রঞ্জক পদার্থ : হলুদ বর্ণের জন্য ফেরিক লবন, সবুজ বর্ণের জন্য ফেরাস বা ক্রোমিয়াম লবন, বেগুনী বর্ণের জন্য ম্যাঙ্গিানিজ ডাই অক্সাইড।
কাঁচ উৎপাদনের মূলনীতি:-
সিলিকাকে (SiO2) সোডা অ্যাশ (Na2CO3) এর সাথে উত্তপ্ত করা হলে, সোডিয়াম সিলিকেট (Na2SiO3) উৎপন্ন হয়।
সোডিয়াম সিলিকেট (Na2SiO3) শীতল করা হলে এটি কঠিন কাচ সদৃশ বস্তুতে পরিণত হয়। এটি পানি কাচ (পানিতে দ্রাব্য) নামে অভিহিত ।
অপরদিকে, সিলিকাকে (SiO2) ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3) এর সাথে উত্তপ্ত করা হলে, ক্যালসিয়াম সিলিকেট (CaSiO3) উৎপন্ন হয়।
কিন্তু সোডা অ্যাশ (Na2CO3) এবং ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3) মিশ্রনের সাথে সিলিকাকে (SiO2) উত্তপ্ত করা হলে সোডিয়াম ক্যালসিয়াম সিলিকেট উৎপন্ন হয়। শীতলীকরণের পর এটি কাচ সদৃশ স্তরে পরিণত হয়, যা পানি ও এসিডে অদ্রাব্য।
কাঁচকে অতিশীতলকৃত তরল বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর ।
কাঁচ উচ্চ সান্দ্রতা বিশিষ্ট স্বচ্ছ, অস্ফটিকাকার অজৈব কঠিন পদার্থ । পরীক্ষা থেকে দেখা যায় কাঁচের মধ্যস্থ অণুসমূহ যে জালিকা কাঠামো সৃষ্টি করে, তা প্রতিসম বা পর্যায়বৃত্তিক নয়। এগুলো অনেকটা তরলের ন্যায় অগোছানো। এ কারণেই কাঁচ কে অতিশীতলকৃত তরল বলা হয়।
উৎপাদন প্রক্রিয়া:-
১. বিগলন: সাধারণত বিভিন্ন কাঁচামাল অর্থাৎ সোডা অ্যাশ (Na2CO3), চুনাপাথর(CaCO3), ডলোমাইড [CaMg(CO3)2], ফেল্সপার এবং বালি (SiO2)এর অনুপাতিক মিশ্রণ কে ওজন করে নিয়ে চুল্লিতে ১০-১২ ঘন্টা 1400 তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে Glass metal তৈরি করা হয়।
২. আকৃতি প্রদান: এ Glass metal কে যন্ত্রে বা হাতে বিভিন্ন বস্তুর Shap বা আকৃতি দেওয়া হয়।
৩. অ্যানিলিং বা Tempering বা পাইন বা পান: Shap বা আকৃতি দেওয়া দ্রব্যকে অর্থাৎ কাঁচকে অঘাত ও তাপমাত্রা সহনীয় করা জন্য অ্যানিলিং কারা হয়। অ্যানিলিং না করা হলে কাঁচ তাপমাত্রার পরিবর্তন এমনকি আঘাত সহ্য করেতে পারে না। প্রতিটি কাচের গলনাঙ্কের নিচে একটি সংকট তাপমাত্রা থাকে। কাঁচকে উত্তপ্ত করে তার সংকট তাপমাত্রার উপরে বেশ কিছুক্ষন রেখে ধীরে ধীরে শীতল করা হয়। ফলে কাঁচের অ্যানিলিং সম্পন্ন হয়। অ্যানিলিং করার পর কাঁচ সুষম হয়। ফলে কাচ তাপমাত্রসহ, ঘাতসহ এবং টেকসই হয়।
ফিনিশিং: সবশেষে কাঁচকে ধুয়ে পরিষ্কার করে, গ্রেডিং, পলিশকরণ, কর্তন এবং গ্লেজিং করে সংরক্ষন করা হয়।
প্রবহি চিত্র:
কাঁচ রিসাইক্লিন প্রণালী:-
কাঁচ পঁচনশীল নয় এবং এর ক্ষয় হয় না বললেই চলে। তাই কাঁচ কে বার রার রিসাইক্লিন করে ব্যবহার করা যায়। কাঁচের রিসাইক্লিন নিম্নরুপ:-
(i) বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যবহৃত ও ভাঙ্গ কাঁচ সংগ্রহ করে কাঁচ উৎপাদনকারী কোম্পানীতে স্থনান্তর করা হয়।
(iii) কোম্পানী বর্ণ ও মানের ভিত্তিতে কাঁচকে শ্রেণিবিন্যাস করে, ধৌত করে ময়লা ও ভেজাল অপসারণ করে।
(iv) শ্রেণিবিন্যাসকৃত কাঁচ কে মেশিনের সাহায্য চূর্ণবিচূর্ণ করে তরলে পরিণত করে প্রয়োজনীয় উপাদান মিশ্রিত করে ছাঁচে ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির কাঁচ সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।
প্রবহি চিত্র: