লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির গঠনঃ–
অ্যানোড বা ঋনাত্মাক তড়িৎদ্বার : লিথয়াম সস্পৃক্ত গ্রাফাইট (LiC6) অ্যানোড হিসাবে কাজ করে ।
ক্যাথোড বা ধনাত্মাক তড়িৎদ্বার : লিথিয়ামের মেটাল অক্সাইড যেমন: লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড (LiCoO2) লিথিয়াম আয়রন ফসফেট (LiFePO4) লিথিয়াম ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (LiMn2O4) এর যে কোন একটি ব্যবহার করা হয় ।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য বা ইলেকট্রোলাইট : জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত লিথিয়ামের লবণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য রুপে ব্যবহৃত হয় । যেমন : জৈব দ্রাবক ডাইমিথাইল কার্বনেট [(CH3)2CO3] ও ইথাইল মিথাইল কার্বনেট মিশ্রনে লিথিয়াম হেক্সাফ্লোরো ফসফেট (LiPF6) এর 1M দ্রবণ ।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ডিসচার্জের সময় মূলত গ্যালভানিক কোষের ন্যায় এবং রিচার্জের সময় এটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের মত আচারন করে।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির কার্যপ্রণালী :-
ডিসচার্জিং প্রক্রিয়া : ডিসচার্জ কালে সক্রিয় Li পরমাণু ইলেকট্রন দান করে Li+ আয়নে পরিণত হলে সলভেটেড লিথিয়াম আয়ন [Li+(soln)] যখন কোষের ভিতর দিয়ে অ্যানোড থেকে ক্যাথোডের দিকে যায় তখন বহিঃবর্তনী দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় । এ ক্ষেত্রে কোষটি গ্যালভানিক কোষের ন্যায় ক্রিয়া করে। ডিসচার্জ কালে সংঘঠিত বিক্রিয়া নিম্নরুপ ।
রিচার্জিং প্রক্রিয়া : রিচাজিংকালে ক্যাথোড তড়িৎদ্বার LiCoO2 হতে Li+ আয়ন মুক্ত হয়ে সলভেটেড লিথিয়াম [Li+(soln)] আয়নরুপে ক্যাথোড হতে অ্যানোডের দিকে যায় । তখন বহিঃবর্তনী দিয়ে ইলেকট্রন অ্যানোডের দিকে প্রবাহিত হয়। এ ক্ষেত্রে কোষটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের ন্যায় ক্রিয়া করে। রিচাজিং কালে সংঘঠিত বিক্রিয়া নিম্নরুপ ।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা (Advantages & Disadvantages of Lithium ion Battery):
বর্তমান চলমান বিশ্বে প্রযুক্তিগত সকল কাজে বিশেষ করে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইফোন ইত্যাদিতে যে ব্যাটারি চার্জার হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা সবই হচ্ছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। বাংলদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প বাতি হিসেবে যে চার্জার লাইট এবং ফ্যান ব্যবহার করা হয় তার প্রতিটিতে বিদ্যুৎ শক্তির যে উৎস সবই হলো এই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এই ব্যাটারি ব্যবহারের যেমন অনেক সুবিধা আছে তেমনি এর ব্যবহারে কিছু অসুবিধাও আছে। নিচে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ ও কতিপয় অসুবিধা উল্লেখ করা হলো :
সুবিধাসমূহঃ
১। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি অধিক শক্তি ঘনত্বসম্পন্ন।
২। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ওজনে হালকা বলে সহজে বহনযোগ্য।
৩. অন্য যে কোনো রিচার্জেবল ব্যাটারির তুলনায় অধিক বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে।
৪. এতে কোনো ক্ষতিকর তরল ব্যবহৃত হয় না বলে দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই।
৫. অতি দ্রূত চার্জিত ও চার্জক্ষরণ হয়, এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
৬. উৎপাদনসমূহ পরিবেশগতভাবে নিরাপদ।
৭। বিভিন্ন ধরনের আকার ও আকৃতি বিশিষ্ট।
অসুবিধাসমূহ :
১. অন্যান্য সমতুল ব্যাটারির তুলনায় অপেক্ষাকৃত দামি।
২. লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নির্দিষ্ট কোনো সাইজের হয় না বিধায় এটি সব জায়গায় কাজে ব্যবহার করা যায় না।
৩.লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে তা আর স্বাভাবিক চার্জে চার্জিত করা যায় না।
৪.বড় ধরনের চার্জক্ষরণে শর্টসার্কিটের আশঙ্কা থাকে।
৫.অতিমাত্রায় চার্জিত হওয়া এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এর ক্ষমতাহ্রাস পায়।
৬. তড়িৎদ্বার ও তড়িৎবিশ্লেষ্যের স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন ঘটে।