লেড স্টেরেজ ব্যাটারির গঠন ও কার্যপ্রণালি আলোচনা কর ।
লেড স্টেরেজ ব্যাটারি এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি হলে রিচার্জেবল ব্যাটারি । এদেরকে সেকেন্ডারী ব্যাটারি বা গৌণ কোষ বা সঞ্চয়ী কোষ বলে । সেকেন্ডারী ব্যাটারি ডিসচার্জের সময় মূলত গ্যালভানিক কোষের ন্যায় এবং রিচার্জের সময় এটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের মত আচারন করে। অথাৎ রিচার্জের সময় বাইরে থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করে অস্বতঃস্ফূর্ত বিক্রিয়াকে সংঘটিত করে বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিরুপে সঞ্চিত করা হয় । পরে ঐ সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তিকে কোষ বিক্রিয়ারূপে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূাপান্তিরিত করে ব্যবহার করা হয় । সুতরাং এক্ষেত্রে বিক্রিয়াটির উভমুখিতা অবস্থা নির্ভর হয়ে থাকে ।
কোষের গঠন : প্রতিটি কোষে ইলেকট্রোডরূপে দুটি লেড ধাতুর গ্রিড বা লেড ধাতুর ঝাঝাঁরি জালি থাকে । অ্যানোড রূপে ব্যবহৃত অধিক পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রযুক্ত স্পঞ্জি Pb ধাতুর গুাঁড়া এবং ক্যাথোডরূপে ব্যবহৃত অধিক পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রযুক্ত PbO2 গুাঁড়া Pb গ্রেডে যুক্ত থাকে । এসব গ্রেড গুলো তড়িৎ বিশ্লেষ্যরূপে ব্যবহৃত প্রায় 4.5M H2SO4 দ্রবণে নিমজ্জিত থাকে । গ্লাস ফাইবার শিট দ্বারা গ্রিড গুলো পৃথক ও অন্তরীত থাকে । তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির সময় অ্যানোডে লেড ধাতু জারিত হয়ে PbSO4 রূপে অ্যানোডে লেগে থাকে । উভয় ইলোকট্রোড H2SO4 এর দ্রবণে ডুবানো থাকে বলে এই কোষটির ডায়াগ্রাম বা কোষ সংকেত হল –
Pb(s), PbSO4 (s) / H2SO4 (জলীয়) / PbO2 (s), Pb(s)
কার্যপ্রণালী :–
ডিসচার্জিং (Discharching): কোষটি হতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার সময় বা ডিসচার্জের সময় গ্যালভানিক কোষ হিসাবে নিম্নরূপে অর্ধ কোষ বিক্রিয়া ও কোষ বিক্রিয়া ঘটে।
রিচার্জিং (Discharching): কোষটির রিচার্জের সময় ইলোকট্রোলাইটিক কোষের মতো বাহ্যিক একমূখি বিদ্যুৎ শক্তি কোষে প্রবাহিত করে অস্বতঃস্ফর্ত বিক্রিয়াটিকে সংঘটিত করা হয় । তখন ব্যাটারির ইলেকট্রোড দুইটিকে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে বিপরীত ক্রমে যুক্ত করা হয় । পূর্বের অ্যানোডে বিদ্যুৎ যোগান হওয়ায় এতে বিজারন ঘটে । তাই এটি হবে ঋনাত্মক ও ক্যাথোড । এ বিক্রিয়াটি গ্যালভানিক কোষে সংঘটিত বিক্রিয়ার বিপরীত। এ বিক্রিয়াটির সফলতার মূলে রয়েছে কঠিন উৎপাদ PbSO4 ইলেকট্রোডে লেগে থাকার কারণে । যেমন :-
লেড স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা(Advantanges & Disadvantages of Lead Storage Battery):-
লেড স্টোরেজ ব্যাটারির ব্যবহারে যেমন সুবিধা অনেক, তেমনি এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মাত ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। নিচে লেড স্টোরেজ ব্যাটারির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ দেখানো হয়েছে :
সুবিধাসমূহ:
১। লেড স্টোরেজ ব্যাটারি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কিছু করতে হয় না।
২। লেড স্টোরেজ ব্যাটারি খুবই স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় বলে সকলেই ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারে।
৩। লেড স্টোরেজ ব্যাটারির জীবনচক্র দীর্ঘ অর্থাৎ একবার ক্রয় করলে অনেক বছর চলে।
৪। লেড স্টোরেজ ব্যাটারি রিসাইকেলেবল অর্থাৎ এটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য।
৫। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে, টেলিকমিউনিকেশন, পাওয়ার সিস্টেম, মোটরযান UPS ও electric vehicles ইত্যাদিতে এর ব্যাপক ব্যবহার আছে।
৬। লেড স্টোরেজ ব্যাটারির উৎকর্ষতা যথেষ্ট ভালো এবং ওভারচার্জিংয়ের ফলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।
৭। ইলেকট্রোলাইট ছাড়া দীর্ঘকাল সংরক্ষণ করা যায়।
অসুবিধাসমূহ:
১। লেড স্টোরেজ ব্যাটারি চার্জবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন রাখা যায় না।
২। লেড স্টোরেজ ব্যাটারি কম শক্তি ঘনত্বসম্পন্ন।
৩। লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে পরিবেশ দূষণকারী লেড ব্যবহৃত হয় বলে এর দ্বারা পরিবেশদূষণের আশঙ্কা থাকে।
৪। লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
৫। লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে এসিড ব্যবহৃত হয় বলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।
৬। লেড স্টোরেজ ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের 64% H2O + 36% H2SO4 এবং ঘনত্ব 1.2-1.3 g/mL এ সংযুক্তি সর্বদা ঠিক রাখার প্রজন পড়ে।
৭। রিচার্জিংয়ের প্রাক্কালে H2 গ্যাস ব্যাটারি সেল থেকে উৎপন্ন হতে পারে, যা বিপজ্জনক।