তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কিত ফ্যারাডের সূত্র (Faraday’s Laws of Electrolysis) ।

ফ্যারাডের মত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বিশ্লেষণ ঘটে । তড়িৎ বিশ্লেষণকালে অ্যানোডে জারণ এবং ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে। এতে অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়ন চার্জমুক্ত হয়। আবার কখনো কখনো অ্যানোডে ধাতু দ্রবীভূত বা ক্যাথোডে ধাতু সঞ্চিত হয়। বিট্রিশ পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে 1834 সালে তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের পরিমাণের সঙ্গে অ্যানোডে দ্রবীভূত বা ক্যাথোডে সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন। উক্ত সম্পর্ক তিনি দুটি সত্রের সাহায্যে প্রকাশ করেন, যা ফ্যারাডের সূত্র নামে পরিচিত।

ফ্যারাডের প্রথম সূত্র : গলিত বা দ্রবীভূত কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে অ্যানোডে দ্রবীভূত বা ক্যাথোডে সঞ্চিত পদার্থের ভর, প্রবাহিত বিদ্যুৎ চার্জের সমানুপাতিক।

ব্যাখ্যা : মনে করি, গলিত বা দ্রবীভূত কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে Q কুলম্ব তড়িৎ প্রবাহিত করলে অ্যানোডে  দ্রবীভূত বা ক্যাথাডে সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণ W  g  ফ্যারাডের প্রথম সূত্রানুসারে,

W  ∝  Q

বা, W = ZQ  (Z= একটি ধ্রূবক সংখ্যা = তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক)

বা, W = Zit   ( ‘.’ Q = It)

Z তথা তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক পদার্থের একটি বৈশিষ্ট্যমূলক  ধ্রূবক রাশি। প্রত্যেক পদার্থের জন্য এর একটি নির্দিষ্ট মান আছে।

রাসায়নিক তুল্যাংক :-

ফ্যারাডের প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি,

W = ZIt

বা, W = Zit ………………….. (i)

i = 1 amp, t = 1sec হলে,

(i) নং সমীকরণ হতে পাই,

W = Zit

বা, W = Z×1×1

বা, W = Z

আবার,

W = ZQ ………………….. (ii)

Q= 1 কুলম্ব হলে

(ii) নং সমীকরণ হতে পাই,

W = Z×1

বা, W = Z

সুতারাং গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে 1.0 কুলম্ব তড়িৎ চার্জ প্রবাহিত করলে যত গ্রাম পদার্থ তড়িৎ দ্বারে দ্রবীভূত বা সঞ্চিত হয় তাকে ঐ পদার্থের তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক বলে।

AgNO3 এর জলীয় দ্রবণের মধ্য দিয়ে 1 কুলম্ব তড়িৎ চার্জ প্রবাহিত করলে দ্রবণ থেকে ক্যাথোডে 0.001118g Ag  জমা হয় তাই Ag এর তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক ZAg = 0.001118g ।

অনুরূপভাবে Cu এর তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক Zcu = 0.000329g ।

H2 এর তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক ZH2 = 0.00001045g ।

তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক গ্রাম তুল্য ভর পরিমাণ যে কোন বস্তু ইলোকট্রোডে সঞ্চিত বা ইলেকট্রোলাইটে দ্রবীভূত করতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন তাকে এক ফ্যারাডে বলে।

ফ্যারাডের সূত্রের প্রযোজ্যতা সীমাবদ্ধতা :

প্রয়োজ্যতা :

i) দ্রবণে বা বিগলিত উভয় তড়িৎ বিশ্লেষ্যের জন্য এটি সমভাবে প্রযোজ্য।

ii) ফ্যারাডের সূত্রের উপর তাপমাত্রা, চাপ, দ্রাবকের প্রকৃতি, দ্রবণের ঘনমাত্রা ইত্যাদির কোনো প্রভাব নেই।

iii) একই মৌলের বিভিন্ন জারণ সংখ্যার আয়নের ক্ষেত্রে এ সূত্র সফলভাবে প্রযোজ্য।

ফ্যারাডের সূত্রের সীমাবদ্ধতা :-

i) ইলেকট্রনীয় পরিবাহিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

ii) কোন কোষের শতভাগ তড়িৎ পরিবহন যদি ইলেকট্রোনাইটিক পদ্ধতিতে না ঘটে তাহলে এই সূত্র প্রযোজ্য নয়।

iii) যে সকল তড়িৎ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একধিক বিক্রিয়া তথা একাধিক জরণ বা বিজারণ বিক্রিয়া ঘটে তাদের ক্ষেত্রে এই সূত্র শতভাগ প্রযোজ্য নয়।

ফ্যারাডের সূত্রগুলোর তাৎপর্য (Significance of Faraday’s Law):

ফ্যারাডের সূত্রসমূহের ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক উভয় তাৎপর্য রয়েছে। পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ এবং এতে ” নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঋণাত্মক ইলেকট্রনের আবরণ থাকে, বিষয়টি ফ্যারাডের সূত্র হতে অবগত হওয়া যায়। যাখন একটি পরমাণু হতে একটি ইলেকট্রন অপসারিত হয় তখন তা একযোজী ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। আবার একটি পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন যুক্ত হলে তা একযাজী ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় প্রতিটি তড়িৎদ্বারে তুল্য পরিমাণ রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এই সূত্র থেকে জানা যায় এক মোল একযোজী আয়নের জন্য এক মোল ইলেকট্রন, এক মোল দ্বিযোজী আয়নের জন্য দুই মোল ইলেকট্রন প্রয়োজন। এক মোল ইলেকট্রন IF আধান বহন করে ।

ফ্যারাডের দ্বিতীয় সূত্র :-

“যদি গলিত বা দ্রবীভূত বিভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ চার্জ প্রবাহিত করা হয়, তবে বিভিন্ন তড়িৎদ্বারে দ্রবীভূত বা সঞ্চিত মৌলের ভর মৌলসমূহের নিজ নিজ রাসায়নিক তুল্যাংকের সমানুপাতিক।”

ব্যাখ্যা : যদি গলিত বা দ্রবীভূত বিভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ Q কুলম্ব বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয় এবং বিভিন্ন তড়িৎদ্বারে দ্রবীভূত বা সঞ্চিত মৌলের ভর W1, W2,………. ইত্যাদি এবং মৌলসমূহের রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক যথাক্রমে E1, E2, ইত্যাদি হয় তবে ফ্যারাডের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে,

W1  ∝  E1

বা, W1 = QE1 (এখানে Q = ধ্রূবক)

বা, W1 = itE1     ………………………..(i)

অনুরুপে,

W2 ∝ E2

বা, W2 = QE2

বা,  W2 = itE2    ………………………..(ii)

(i) ÷ (ii) করে পাই,

2 thoughts to “ফ্যারাডের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রের বিস্তারিত

  • Pobitro Roy

    Fine

    Reply
  • Shiraj

    Nice

    Reply

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *