তড়িৎ এক প্রকার শক্তি। এ শক্তি ইলেকট্রনের প্রবাহ ছাড়া আর কিছুই নয়।  মাধ্যাম ছাড়া যেমন কিছু প্রবাহিত হতে পারে না ঠিক তেমনি ইলেকট্রনও মাধ্যম ছাড়া প্রবাহিত হতে পারে না। কোনা বিশেষ মাধ্যমে তড়িৎ শক্তির তড়িৎ হওয়ার বিষয়কে তড়িৎ পরিবাহিতা বলে । তড়িৎ পরিবাহিতা সরাসরি ইলেকট্রন স্থানান্তর কিংবা আয়ন স্থানান্তরের মাধ্যমে সংঘটিত হয় । তড়িৎ প্রবাহ দ্বারা রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হতে পারে আবার নাও হতে পরে । আবার রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারাও তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে ।

রসায়নের যে শাখায় কোনো পদার্থ কর্তৃক তড়িৎ তথা বিদ্যুৎ শক্তির বহন, বিদ্যুৎ শক্তির রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তন, রাসায়নিক শক্তির বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিবর্তন, রাসায়নিক ক্রিয়ার উপর বিদ্যুতের প্রভাব ইত্যাদি আলোচনা করা হয় তাকে তড়িৎ রসায়ন (Electro Chemistry) বলে।

তড়িৎ পরিবাহী এর প্রকারভেদ (Electrical Conductor and its Classificati)

তড়িৎ পরিবাহী (Electrical Conductor)

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে সেগুলোকে তড়িৎ পরিবাহি বলে।

উদাহরণ :

*সাধারণত সকল ধাতু : যেমন : Ag, Cu, Fe ইত্যাদি। ব্যতিক্রম C তথা গ্রাফাইট (C অধাতু হওয়া সত্বেও বিদ্যুৎ পরিবাহি)।

*এসিড যেমন : HCl, H2SO4, CH3COOH ইত্যাদি।

*ক্ষারক (গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায়) যেমন : NaOH, KOH, NH4OH, CaO ইত্যাদি।

লবণ (গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায়) যেমন : NaCl, CaCl2, NH4CI ইত্যাদি।

তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়

  1. সুপরিবাহি (Good conductor)
  2. কুপরিবাহি (Bad conductor)

3. তড়িৎ অপরিবাহি (Electric nonconductor)

সুপরিবাহি :  যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে অনায়াসে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে সেগুলোকে সুপরিবাহি পদার্থ বলে ।

উদাহরণ : সাধারণত সকল ধাতু যেমন : Ag, Cu, Fe, Hg ইত্যাদি। সাধারণত সকল এসিড, ক্ষারক, লবণ ইত্যাদি।

কুপরিবাহি : যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে বাঁধার সংগে তড়িৎ প্রবাহিত হয় সেগুলােকে কুপরিবাহি পদার্থ বলে ।

উদাহরণ : Sn, Pb, Ge ইত্যাদি।

iii. তড়িৎ অপরিবাহি : যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে না, সেগুলোকে তড়িৎ অপরিবাহি পদার্থ বলে ।

উদাহরণ : সাধারণত অপোলার বা সমযোজী যৌগ । যেমন : ডিজেল, পেট্রোল, কাঠ, কাঁচ, বাঁশ, বেত, সালফার ইত্যাদি।

বি: দ্র: সম্পূর্ণরূপে তড়িৎ পরিবহনে অক্ষম এরূপ পদার্থ বাস্তবে দুর্লভ। প্রত্যেক পদার্থই কিছু না কিছু তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম।

তড়িৎ পরিবাহীর শ্রেণিবিভাগ (Classification of Conductors):

তড়িৎ পরিবহন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তড়িৎ পরিবাহিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয় :

১. ধাতব পরিবাহি বা ইলেকট্রনীয় পরিবাহি বা তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পরিবাহি।

২. অধাতব পরিবাহি

৩. ইলেকট্রোলাইটিক বা তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহি।

১. ধাতব পরিবাহি বা ইলেকট্রনীয় পরিবাহি (Metallic or Electronic Conductor) : যে সব সকল তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যৎ প্রবাহের সময় পদার্থের রসায়নিক পরিবর্তন হয়না তাদেরকে ধাতব পরিবাহি বলে ।

সাধারনত ইলেকট্রন প্রবাহের ফলে  তড়িৎ পরিবাহিত হয় বলে ধাতব পরিবাহিসমূহকে  ইলেকট্রনীয় পরিবাহিও বলা হয় ।

উদাহরণ : সাধারণত সকল ধাতু। যেমন : Ag, Cu, Fe ইত্যাদি । এছাড়া ধাতু সংকর (Na-Hg সংকর, Cu-Hg সংকর ইত্যাদি), কিছু কঠিন লবণ যেমন : NaCl এবং ধাতব অক্সাইডের মধ্য দিয়েও ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে।

বৈশিষ্ট্য :

* ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে।।

* এগুলো সাধারণত ধাতু, ব্যতিক্রম গ্রাফাইট।

* তড়িৎ পরিবহনকালে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না।।

* তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পরিবাহির তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস পায়।

* এ ধরনের পরিবাহি ওহমের সূত্র মেনে চলে।

. অধাতব পরিবাহি: যেসব অধাতু তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের সময় এদর রাসায়নিক ধর্মের কোন পরিবর্তন হয়না তাদেরকে অধাতব পরিবাহি বলে ।  যেমন : গ্রাফাইট (C) অধাতু।

তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহি : যে  সকল তড়িৎ পরিবাহীর পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যৎ প্রবাহিত করলে  পদার্থ সমূহ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত  হয়ে নতুন ধর্ম বিশিষ্ট অন্য পদার্থের পরিনত হয় তাদেরকে ইলেকট্রোলাইটিক বা তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহি বলে ।

এসব পদার্থ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় বিয়োজিত হয়ে আয়ন স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে সেগুলোকে ইলেকট্রালাইটিক বা তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহি বলে। তড়িৎ পরিবহনকালে এসব পদার্থ বিশ্লেষিত হয়ে যায় বলে এগুলোকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য বা ইলেকট্রোলাইট বলে।

উদাহরণ :

*সাধারণত সকল এসিড। যেমন : H2SO4, HCl, CH3COOH ইত্যাদি।

*সাধারণত সকল ক্ষারক। যেমন : NaOH, KOH, CaO ইত্যাদি।

*সাধারণত সকল লবণ। যেমন : NaCl, Na2SO4, CH3COONa ইত্যাদি।

ব্যাখ্যা : গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় NaCl আয়নিত অবস্থায় থাকে। এমতাবস্থায় এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে বিশ্লেষিত হয়ে Na+ এবং Cl  আয়নে পরিণত হয়। অতঃপর Na+  এবং Cl আয়ন স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে।

NaCl (গলিত বা দ্রবীভূত) বিয়োজন NaCl → Na+ + Cl

অ্যাণোডে বিক্রিয়া : 2Cl → Cl2(g) + 2e (জারণ)।

ক্যাথোডে বিক্রিয়া : 2Na+ + 2e  → Na(s) (বিজারণ)

বৈশিষ্ট্য :

* গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে।

* আয়ন স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে।

* তড়িৎ পরিবহনকালে বিশ্লেষিত হয়ে একাধিক নতুন পদার্থে পরিণত হয়।

* তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

* আয়নের প্রবাহের ইলেকট্রনের ভরের চেয়ে অনেক বেশি বলে আয়নিক গতিশীলতা (Ionic mobility) অনেক কম। তাই তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা ইলেকট্রনীয় পরিবাহির তুলনায় কম।

* ফ্যারাডের সূত্র অনুসরণ করে।

ধাতব পরিবাহি বা ইলেকট্রনীয় ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য বা ইলেকট্রোলাইটিক পরিবাহির মধ্যকার পার্থক্য :-

তড়িৎ বিশ্লেষ্যের প্রকারভেদ (Classification of Electrolytes):-

পদার্থের গঠনের সাথে সেই পদার্থ কর্তৃক বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে কিনা তা সম্পৃক্ত সাধারণত আয়নিক যৌগ এবং পোলার সমযোজী যৌগগুলো গলিত বা দ্রবণ অবস্থায় তাদের ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়ন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ পরিবহন করে। বিদ্যুৎ পরিবহনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ প্রধানত দু’প্রকার

১. তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Strong Electrolytes)

২. মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Weak Electrolytes)

১. তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে সম্পূর্ণরূপে বিশ্লেষিত হয়ে যায় এবং তড়িৎ পরিবহন করে সেগুলোকে তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে।

উদাহরণ : সকল তীব্র এসিড : সাধারণত অজৈব এসিড যেমন : HCl, H2SO4, HNO3 এসিড ইত্যাদি। ব্যতিক্রম : কার্বনিক এসিড H2CO3 হাইড্রোসালফিউরিক এসিড H2S(aq) এগুলো অজৈব এসিড হলেও মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য।

* সকল তীব্র ক্ষার :  IA শ্রেণিভুক্ত ধাতব হাইড্রোক্সাইড যেমন : LiOH, NaOH, KOH ইত্যাদি।

* সাধারণত সকল লবণ : যেমন NaCl, CaCl2, CH3COONa ইত্যাদি।

ব্যাখ্যা : HCl(aq)   সম্পূর্ণ বিয়োজন  →   H+ + Cl

অ্যানোডে বিক্রিয়া : 2Cl   →   Cl2(g) +  2e (জারণ)

ক্যাথোডে বিক্রিয়া : 2H+ + 2e → H2(g)  (বিজারণ)

HCl এসিডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে সম্পূর্ণরূপে বিশ্লেষিত হয়ে H+ এবং Cl আয়নে পরিণত হয় । অতঃপর Cl এবং H+  আয়ন যথাক্রমে অ্যানোডে ও ক্যাথোডে স্থানান্তরের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে যথাক্রমে জারিত ও বিজারিত হয়ে Cl2(g) এবং H2(g)  পরিণত হয়। l.

মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য : গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করলে আংশিকরূপে বিশ্লেষিত হয়, বাকী অংশ অবিযোজিত অণু হিসেবে থেকে যায় এবং খুব পরিমাণে তড়িৎ পরিবহন করে সেগুরোকে মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে।

উদাহরণ :

* সকল মৃদু এসিড : সাধারণত জৈব এসিড। যেমন : RCOOH, HCOOH, CH3COOH এসিড ইত্যাদি । ব্যতিক্রম : কার্বনিক এসিড H2CO3 হাইড্রোসালফিউরিক এসিড H2S(aq) এগুলো অজৈব এসিড হলেও মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য।

* সকল মৃদু ক্ষারক যেমন : Al(OH)3, Mg(OH)2, NH4OH ইত্যাদি।

ব্যাখ্যা : HCOOH এসিডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে তা আংশিকরূপে বিশ্লেষিত হয় এবং খুব সামানা পরিমাণে তড়িৎ পরিবহন করে HCOOH(aq)  ↔  H+ + HCOO

One thought to “তড়িৎ পরিবাহী এবং এর প্রকারভেদ”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!