প্রশ্ন: ডাইপোল ও পোলারিটি কী?

ডাইপোল ও পোলারিটি : সমযোজী যৌগের সংশ্লিষ্ট দুই পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক 0.5 – 1.9 এর মধ্যে হলে তখন সমযোজী বন্ধনের ইলেকট্রন যুগল অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু দ্বারা বেশি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। ফলে অণুর দুই প্রান্তে দুটি আংশিক ভিন্ন চার্জের বা মেরুর সৃষ্টি হয়, উভয় মেরুকে একত্রে ডাইপোল বলা হয়। সমযোজী যৌগের অণুতে ডাইপোল সৃষ্টির ধর্মকে ঐ যৌগের পোলারিটি (polarity) বলা হয়। অণুর দুই প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক দুটি ভিন্ন মেরু সৃষ্টি হওয়ায় ঐ অণুকে পোলার যৌগ বলা হয়। HF, H2O হল পোলার যৌগ।

HF একটি সর্বাধিক পোলার অণু কারণ F ও H পরমাণুদ্বয়ের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য (4.0 – 2.1) = 1.9 | পোলার অণুসমূহের মধ্যে সর্বাধিক পোলারিটি প্রকাশ পায়। হ্যালোজেনসমূহের মধ্যে F সর্বাধিক তড়িৎ ঋer সর্বাধিক পোলার অণু। হাইড্রোজেন হ্যালাইডের অণুগুলোর মেরু প্রবণতা ক্রম হলো HF > HCI>HBr মূলকথা বন্ধনে আবদ্ধ পরমাণুদ্বয়ের ঋণাত্মকতার পার্থক্য যত বেশি হবে সমযোজী যৌগে আয়নিক বৈশিষ্ট্য তত বেশি হবে।

প্রশ্ন: HF পোলার যৌগ কেন? ব্যাখ্যা করো

উত্তর: HF যৌগে F এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 3.0 এবং H এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 2.1 । সুতরাং, তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য (4.0 – 2.1) =  1.9 অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক F পরমাণুর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে F পরমাণুর আংশিক ঋণাত্মক ও H পরমাণুতে আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয়। বিপরীত মেরুযুক্ত প্রান্ত সৃষ্টি হয় বলে HF পোলার যৌগ।

H- F → H+  + F

প্রশ্ন: H2O পোলার যৌগ কেন? ব্যাখ্যা করো

উত্তর: H2O যৌগে O এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 3.5 এবং H এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 2.1 । সুতরাং, তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য (3.5 – 2.1) =  1.9 অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক O পরমাণুর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে O পরমাণুর আংশিক ঋণাত্মক ও H পরমাণুতে আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয়। বিপরীত মেরুযুক্ত প্রান্ত সৃষ্টি হয় বলে H2O পোলার যৌগ।

প্রশ্ন: HCl পোলার যৌগ কেন? ব্যাখ্যা করো

উত্তর: HCl যৌগে Cl এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 3.0 এবং H এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা 2.1 । সুতরাং, তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য (3.0 – 2.1) =  0.9 অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক Cl পরমাণুর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে Cl পরমাণুর আংশিক ঋণাত্মক ও H পরমাণুতে আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয়। বিপরীত মেরুযুক্ত প্রান্ত সৃষ্টি হয় বলে H-Cl পোলার যৌগ।

H-Cl → H+  + Cl

জেনে রাখ; বাস্তবে 100% আয়নিক কোনো যৌগ নেই। দ্রুপ 100% সমযোজী যৌগ নেই । যৌগ প্রায় 80% আয়নিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচের সারণিতে পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য এবং তাদের দ্বারা সষ্ট যৌন বৈশিষ্ট্যের মোটামুটি শতকরা মাত্রা দেখানো হলো।

যেমন:

সমযোজী অণুতে আংশিক ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎ চার্জ সৃষ্টির কারণে ঐ সব যৌগে আংশিক আয়নিক যৌগের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়। H-পরমাণুযুক্ত পোলার অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন নামে নতুন আন্তঃআণবিক বল সৃষ্টি হয়। তখন এ সব যৌগের অণু সংবদ্ধ (associated) থাকে। H-বন্ধনের কারণে যৌগের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়। যেমন: ঐ সব যৌগে ভৌত অবস্থা, গলনাঙ্ক, ঘনত্ব ইত্যাদি ধর্মে আংশিক আয়নিক যৌগের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

গ্রুপ-16 (6A) এর অক্সিজেন ও সালফারের হাইড্রাইড হলো যথাক্রমে H2O ও HS । এক্ষেত্রে পোলার H2O তরল কিন্তু অপোলার HS হলো গ্যাস। HCl, H2SO4, HNO3 ইত্যাদি এসিড অণু হলো পোলার। এরা পানিতে H+ আয়ন দেয়, অম্লধর্ম প্রকাশ করে। NaCl এর জলীয় দ্রবণের মতো এ সব এসিডের জলীয় দ্রবণ বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়। জলীয় দ্রবণে আয়নিক যৌগের বিক্রিয়া যেমন খুব দ্রুত ঘটে। অনুরূপভাবে এসব পোলার সমযোজী যৌগ পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় দ্রুত চলত বিক্রিয়া করে থাকে। বিশুদ্ধ সমযোজী যৌগের মধ্যে বিক্রিয়া আয়নিক যৌগের বিক্রিয়ার তুলনায় ধীরে ঘটে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!