ভৌত ধর্ম : বেনজিন একটি বর্ণহীন, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ। এর স্ফুটনাংক 80°C এবং গলনাংক 5.4°C পানিতে অদ্রবণীয় তবে অ্যালকোহল, ইথার, ক্লোরোফরম, পেট্রোল ইত্যাদি দ্রাবকে যে কোন অনুপাতে দ্রবণীয় বেনজিন আপেক্ষিক গুরুত্ব 0.874। এটি পানির তুলনায় হালকা।
এটি বিভিন্ন জৈব ও অজৈব যৌগ যেমন- চর্বি, মোম, রেজিন, সালফার, আয়োডিন ইত্যাদির উৎকৃষ্ট দ্রাবক । বেনজিন হয় দাহ্য, তাই শিখা সহকারে জ্বলতে থাকে। বেনজিন বাষ্প খুবই বিষাক্ত। এটি শরীরে প্রবেশ করলে চেতনানাশ, রক্তে লোহিত ও শ্বেত কণিকা ধ্বংসসহ অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে।
রাসায়নিক ধর্ম : বেনজিন একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। এটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের সংযোজন বিক্রিয়া প্রদর্শন হা বিশেষ ধরনের অসম্পৃক্ততার কারণে এটি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের মত প্রতিস্থাপন বিক্রিয়াও দেখায়।
বেনজিনের বিক্রিয়াগুলো হল : (ক) সংযোজন বিক্রিয়া (খ) জারণ (গ) ইলেকট্রনাকর্ষী প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া।
নিচে বেনজিন বিক্রিয়াগুলো আলোচনা করা হল:
বেনজিন প্রস্তুতি (preparation of benzene) :
(i) সোডিয়াম বেনজোয়েট হতে : বেনজোয়িক এসিড বা তার সোডিয়াম লবণকে সোডিয়াম বেনজোয়েট সোডা লাইম (NaOH + CaO) সহযোগে উত্তপ্ত করলে ডিকার্বক্সিলেশন (Decarboxylation) বিক্রিয়া ঘটে। বিক্রিয়ায় বেনজোয়িক এসিড বা তার লবণ হতে কার্বক্সিলিক মূলকটি (-COOH), CO2 রূপে অপসারিত হওয়ার ফলে বেনজিন উৎপন্ন হয়।

(ii) ফেনল হতে : ফেনলকে দস্তা চূর্ণের সাথে পাতন করলে ফেনল জিঙ্ক দ্বারা বিজারিত হয়ে বেনজিন বাষ্প তৈরি করে। উৎপন্ন বাষ্পকে শীতল করে তরল বেনজিন সংগ্রহ করা হয়।

(iii) ইথাইন হতে : ইথাইন গ্যাসকে 450 -500
তাপমাত্রায় উত্তপ্ত একটি লৌহ নলের মধ্যে দিয়ে চালনা করলে ইথাইনের বহু যোজনায়ন বা পলিমারকরণ ঘটার ফলে বেনজিন প্রস্তুত হয়। এখানে পলিমার হল বেনজিন এবং ইথাইন হল মনোমার। তাই বেনজিন হল ইথাইনের একটি পলিমার।

(iv) বেনজিন সালফোনিক এসিড হতে : বেনজিন সালফোনিক এসিড স্ফুটন তাপমাত্রা ও উপযুক্ত চাপে লঘু নির এসিডের উপস্থিতিতে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট হয়ে বেনজিনে রূপান্তরিত হয়। বিক্রিয়ায় সালফোনিক এসিড মূলকের (-SO3H) অপসারণ ঘটে বলে একে ডিসালফোনেশন (desulphonation) বলে ।

(v) গ্রিগনার্ড বিকারক হতে : গ্রিগনার্ড বিকারক যেমন, ফিনাইল ম্যাগনেসিয়াম ব্রোমাইড পানির সাথে বিক্রিয়ায় বেনজিন উৎপন্ন করে।

(vi) ক্লোরোবেনজিন হতে : ক্লোরোবেনজিনকে Ni,Al এবং NaOH এর উপস্থিতিতে H2 সহ তাপ দিলে বেনজিন পাওয়া যায়।

(v) বেনজিন ডায়াজোনিয়াম ক্লোরাইডকে হতে : বেনজিন ডায়াজোনিয়াম ক্লোরাইডকে Cu+ এর উপস্থিতিতে H3PO2 সহ আর্দ্রবিশ্লেষণ

পরীক্ষাগারে বেনজিন প্রস্তুতি (Laboratory methods of preparation of benzene)
মূলনীতি: বেনজোয়িক এসিড বা তার সোডিয়াম লবণকে সোডিয়াম বেনজোয়েট সোডা লাইম (NaOH + CaO) সহযোগে উত্তপ্ত করলে ডিকার্বক্সিলেশন (Decarboxylation) বিক্রিয়া ঘটে। বিক্রিয়ায় বেনজোয়িক এসিড বা তার লবণ হতে কার্বক্সিলিক মূলকটি (-COOH), CO2 রূপে অপসারিত হওয়ার ফলে বেনজিন উৎপন্ন হয়।

পদ্ধতির বর্ণনা : লম্বা কাচের নলযুক্ত একটি শক্ত কাচের রিটর্টে বা বকযন্ত্রে বেনজয়িক এসিড অথবা তার লবণ সোডিয়াম বেনজোয়েট ও সোডালাইমের মিশ্রণ 1:3 অনুপাতে নিয়ে রিটটটিকে একটি বালির বাথের উপর ক্ল্যাম্পের সাহায্যে আটকানো হয় । রিটর্টের লম্বা নলটি বরফ শীতল পানিপূর্ণ ট্রাফে ভাসিয়ে রাখা একটি গ্রাহক ফ্রাঙ্কে ঢুকানো হয়। এখন রিটউটিকে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করলে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বেনজিন বাষ্প রিটর্টের লম্বা নলে ঘনীভূত হয়ে পাতিত তরল রূপে গ্রাহক ফ্লাঙ্কে জমা হয়।
(খ) জারণ (Oxidation) :
(i) বেনজিন খুবই সুস্থিত যৌগ, সাধারণ জারক দ্বারা বেনজিন জারিত হয় না। তবে শক্তিশালী জারক যেমন- KMnO4 ক্রোমিক এসিড উচ্চ তাপমাত্রায় বেনজিনকে জারিত করে CO2 ও পানি উৎপন্ন করে ।

(ii) বাষ্পীয় দশায় জারণ (Vapour phase oxidation) : বাষ্পীয় অবস্থায় বেনজিন ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইডের
উপস্থিতিতে 450°C তাপমাত্রায় বায়ু অথবা অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে ম্যালিক অ্যানহাইড্রাইড উৎপন্ন করে।
