অ্যারোমেটিক যৌগের বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
১. বিশেষ প্রকৃতির অসম্পৃক্ততা : অ্যারোমেটিক যৌগের অণু বিশেষ প্রকৃতির অসম্পৃক্ততা প্রদর্শন করে থাকে। বেনজিন আণুতে তিনটি দ্বিবন্ধন উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ইথিন (CH2 = CH2) অণুর মতো দ্রুত বিক্রিয়া প্রদর্শন করে না। বেনজিন যৌগটি H2, X2 ও O2 এর সাথে যুত যৌগ গঠন করলেও HCl, HBr, H2SO4, R – X প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুত যৌগ গঠন করে না কারন যুত বিক্রিয়ায় বেনজিন অণুর রেজনেন্স গঠন ভেঙে যায় । এমন কি জৈব যৌগের অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা, বেয়ার পরীক্ষা (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট KMnO₄ এর ক্ষারীয় দ্রবণের সাথে ইথিনের বিক্রিয়া) ও ব্রোমিন দ্রবণ (কার্বন টেট্রাক্লোরাইডে (CCl₄) দ্রবীভূত করে ব্রোমিনের 5% এর সাথে ইথিনের বিক্রিয়া) পরীক্ষা প্রদর্শন করে না।


২. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া : অ্যারোমেটিক যৌগের প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে রেজনেন্স গঠনের উপর কোনোই প্রভাব পড়ে না বিধায় এ ধরনের বিক্রিয়ায় চক্রের সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন বৈশিষ্ট তথা অ্যারোমেটিসিটি অক্ষুন্ন থাকে। এ জন্য বেনজিন অণু প্রতিস্থাপন তথা বিশেষ করে বেনজিন হ্যালোজেনেশন, নাইট্রেশন, সালফোনেশন ফ্রিডেল-ক্রাফ্ট অ্যালকাইলেশন, অ্যাসাইলেশন প্রভৃতি ইলেকট্রোফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া প্রদর্শন করে থাকে।

৩.অনুরণন বা রেজনেন্স : কোনো যৌগের অণুর ইলেকট্রনগুলোর পুনর্বিন্যাসের কারণে যৌগের অণুটির একাধিক গঠন সম্ভব হয়। এসব গঠনে α -বন্ধনযুক্ত মূল গঠন অবিকৃত থাকে। শুধু ত ইলেকট্রনগুলো বিভিন্নভাবে যুক্ত হওয়ার কারণে বিভিন্ন গঠন তৈরি হয়। এ ধরনের প্রতিটি গঠনকে রেজোনেটিং গঠন (resonating structure) বলা হয়।
রঞ্জন রশির বিশ্লেষণ পরীক্ষায় দেখা যায় যে, অ্যারোমেটিক যৌগের বেনজিন চক্রে কার্বন-কার্বন বন্ধন দৈর্ঘ্য 0.139 nm । যে মান অ্যালিফেটিক যৌগের কার্বন-কার্বন একক বন্ধন ও কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনের মান যথাক্রমে 0.154 nm ও 0.134 nm এর মাঝামাঝি। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, বেনজিন অনুরণন বা রেজনেন্স ধর্ম প্রদর্শন করে। এ ধর্মের কারণেই বেনজিন বলয়ের সাথে সরাসরিভাবে সংযুক্ত মূলকের বিক্রিয়া অ্যালিফেটিক কার্বন শিকলের সাথে সংযুক্ত একই মূলকের বিক্রিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্ম দেখা যায়। যেমন, অ্যারোমেটিক হাইড্রক্সি যৌগ ফেনল (C6H5 – OH) হলো অম্লধর্মী, যার জলীয় দ্রবণ কার্বলিক এসিড নামে পরিচিত। আর অ্যালিফেটিক হাইড্রক্সি যৌগ (R-OH), অ্যালকোহল শ্রেণি যৌগ এরা নিরপেক্ষ। যেমন মিথানল (CH3OH), ইথানল (CH3– CH2OH) ইত্যাদি নিরপেক্ষ।

৪. বেনজিনের রেজোন্যান্স কাঠামো বেনজিন বেনজিনের বিশেষ স্থিতিশীলতা ও পাই ইলেকট্রনের সঞ্চরণশীলতা: বেনজিন অণুর বিশেষ, প্রধান কারণ হলো অণুস্থ -ইলেকট্রনসমূহের স্থানিক বিন্যাস এবং সরণশীলতা (ডিলোকালাইজেশন) । অথাৎ ইলেকট্রনসমূহ দুটি পরমাণুর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সমস্ত অণুতে সঞ্চারণশীল থাকে।

অ্যারোমেটিক যৌগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্ম যেমন:
(i) বিশেষ প্রকৃতির অসম্পৃক্ততা, (ii) অনুরণন, (iii) সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন, (iv) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া ও (v) বিশেষ স্থায়িত্ব প্রভৃতিকে একত্রে অ্যারোমেটিসিটি বলা হয়ে থাকে। অ্যারোমেটিক ধর্মবিশিষ্ট জৈব যৌগগুলোকে অ্যারোমেটিক যৌগ বলা হয়। যে বিশেষ ধর্মগুলোর জন্য এ জাতীয় যৌগগুলো অ্যালিফেটিক যৌগের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হয় তাকে অ্যারোমেটিসিটি বলা হয়।