জৈব যৌগের সংখ্যা প্রায় এক কোটিরও উপরে । এ অসংখ্য জৈব  যৌগের প্রত্যেটির ভৌত ধর্ম,প্রকৃতি এবং গঠন পৃথক পৃথকভাবে জানা মোটেও সম্ভবপর নয়। তাই ধর্ম ও গঠনের উপর ভিত্তি করে জৈব যৌগকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত কার হয়েছে। জৈব যৌগের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরুপ:

১। মুক্ত শিকল জৈব যৌগ (Open Chain Organic Compound) : যে সকল জৈব যৌগ এর দুই প্রাতের পরমাণু পরস্পর যুক্ত থাকে না বরং মুক্ত অবস্থায় থাকে তাদেরকে মুক্ত শিকল জৈব যৌগ বলে।

যেমন : CH3 – CH2 – CH3            CH3 – CH2 – CH2 – CH3

n-প্রোপেন                            n-বিউটেন

এ সব হাইড্রোকার্বন স্বাভাবিক অবস্থায় তৈলাক্ত চর্বি জাতীয় পদার্থের মধ্যে পাওয়া যায় বলে এদের অ্যালিফেটিক শিকল জৈব যৌগ বলে। মুক্ত শিকল জৈব যৌগ দুই প্রকার। যেমন :

(ক) সরল শিকল জৈব যৌগ এবং    (খ) শাখায়িত শিকল জৈব যৌগ।

() সরল শিকল জৈব যৌগ (Simple Chain Organic Compound) : যে সকল জৈব যৌগ-এ বিদ্যমান কাবর্ন পরমাণুগুলো সর্বোচ্চ দুটি কার্বনের সাথে সংযুক্ত থাকে অর্থাৎ যৌগে কোনো পার্শ্ব শিকল থাকে না তাদেরকে সরল শিকল জৈব যৌগ বলে। যেমন :

CH3 – CH2 – CH2 – CH2 – CH3                                    CH3 – CH2 – CH2 – CH2 – CH2 – CH3

n-পেন্টেন                                                                       n-হেক্সেন ।

() শাখায়িত শিকল জৈব যৌগ (Branched Chain Organic Compound) : যে সকল জৈব যৌগ এর যে  কোনো একটি বা একের অধিক চারটি যোজনীর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি যোজনী অপর তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে পূরণ হয় তাদেরকে শাখায়িত শিকল জৈব যৌগ বলে। যেমন :

মুক্ত শিকল বা অ্যালিফেটিক জৈব যৌগকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

(ক) সম্পৃক্ত জৈব যৌগ (Saturated Organic Compound, (খ) অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ(Unsaturated Organic Compound) ।

() সম্পৃক্ত জৈব যৌগ বা অ্যালকেন : যে সকল জৈব যৌগে কার্বন পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে সমযোজী একক বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা পূর্ণ হয়, তাদেরকে সম্পৃক্ত জৈব যৌগ বা অ্যালকেন বলে।

যেমন : n-প্রোপেন (CH3 – CH2 – CH3),  n-বিউটেন (CH3 – CH2 – CH2  – CH3) এবং মিথেন (CH3–CH3) ইত্যাদি সম্পৃক্ত জৈব যৌগ ।

() অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ : যে সকল জৈব যৌগের কার্বন পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে সমমোজী দ্বি-বন্ধন বা ত্রি বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা পূর্ণ হয় তাদেরকে অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ বলে।

যেমন :CH3 – CH = CH – CH2 – CH2 – CH3 ,            CH ≡ C – CH3

হেক্সিন-2                                       প্রোপাইন-1

অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (১) অ্যালকিন (Alkene), (২) অ্যালকাইন(Alkyne) ।

অ্যালকিন (Alkene): যে সকল জৈব যৌগের কার্বন পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে সমমোজী দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা পূর্ণ হয় তাদেরকে অ্যালকিন  জৈব যৌগ বলে।

যেমন : CH3 – CH = CH – CH2 – CH3 ,             CH2 = C – CH3

পেন্টিন-2                                     প্রোপিন-1

 

অ্যালকাইন(Alkyne): যে সকল জৈব যৌগের কার্বন পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে সমমোজী ত্রি বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা পূর্ণ হয় তাদেরকে অ্যালকাইন জৈব যৌগ বলে।

যেমন :CH3 – CH– CH  CH2 – CH2 – CH3,                       CH ≡ C – CH3

হেক্সিন-3                                                  প্রোপাইন-1

বদ্ধ শিকল বা সাইক্লিক জৈব যৌগ (Cyclic Organic Compound) : যে সকল জৈব যৌগের দুই প্রান্তের কার্বন পরমাণু বা অক্সিজেন বা N. S. P পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে চক্র গঠন করে তাদেরকে সাইক্লিক জৈব যৌগ বলে। বদ্ধ শিকল বা সাইক্লিক জৈব যৌগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন :

(ক) হোমোসাইক্লিক জৈব যৌগ (Homo-cyclic Organic Compound) : যে সব সাইক্লিক যৌগের চক্রটি শুধুমাত্র কার্বন পরমাণুর সংযোগে গঠিত হয় তাদেরকে হোমোসাইক্লিক জৈব যৌগ বলে।

যেমন :

আবার হোমোসাইক্লিক জৈব যৌগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় : (i) অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ (Aromatic Organic Compound),  (ii) অ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ (Alicyclic Organic Compound)।

(i) অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ (Aromatic Organic Compound) : যে সকল চক্রিয় জৈব যৌগে একান্তরিত (4n+ 2) সংখ্যক পাই  ইলেকট্রন সঞ্চারণশীল অবস্থায় থাকে তাদেরকে অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ বলে। যেমন :

(i) অ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ (Alicyclic Organic Compound) : যে সব সাইক্লিক হাইড্রোকার্বন পরস্পর

একক বন্ধন দ্বারা/কখনো কখনো দ্বি-বন্ধন গঠিত এবং যাদের আকৃতি সাইক্লিক যৌগের মত হলেও তারা অ্যারোমেটিক যৌগের মত আচরণ করে না, তাদেরকে অ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ বলে। যেমন:

(খ) হেটারোসাইক্লিক জৈব যৌগ (Heterocyclic Organic Compound) : যে সব সাইক্লিক জৈব যৌগের বলয় কার্বন পরমাণু ছাড়াও অন্য মৌলের পরমাণুর (যেমন : অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার) সংযোগে গঠিত হয় তাদেরকে হেটারোসাইক্লিক জৈব যৌগ বলে। হেটারোসাইক্লি জৈব যৌগকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা

(১) হেটারোঅ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ (Heteroalicyclic compound), (২) হেটারোঅ্যারোমেটিক জৈব যৌগ (Heteroaromatic compound) ।

(১) হেটারোঅ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ (Heteroalicyclic Organic Compound) : যে সব হেটারোঅ্যাসাইকি জৈব যৌগের ধর্ম অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বনের মত, তাদেরকে হেটারো অ্যালিসাইক্লিক জৈব যৌগ বলে। যেমন:

(২) হেটারোঅ্যারোমেটিক জৈব যৌগ (Heteroaromatic Organic Compound) : যে সব হেটারো জৈব যৌগের ধর্ম অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ বা বেনজিন ও বেনজিনের জাতকের মত তাদেরকে হেটারঅ্যারোমেটিক জৈব যৌগ বলে। যেমন: ফিউরান, থায়োফিন, পিরিডিন ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!