চিকিৎসা ক্ষেত্রে IR রশ্মির কৌশল (Application of IR rays in medical field):
আমরা জানি, রোগের একটি প্রধান উপসর্গ হলো তাপমাত্রার পরিবর্তন। দেহের অভ্যন্তরে সংক্রমণ, শরীরবৃত্তায় কার্যকলাপ, প্রদাহ কিংবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হলে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। IR থার্মোগ্রাফির মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরে কোনো অঙ্গসংস্থানের পৃষ্ঠতলীয় তাপমাত্রার বণ্টন সক্ষভাবে রূপান্তর করা যায়। ফলে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের অস্বাভাবিকতা সহজেই নির্ণয় করা যায়। অণু কর্তক অবলোহিত রশির বিভিন্ন কম্পাঙ্ক শোষিত হলে শোষণকারী অণুর কম্পনীয় শক্তির পরিবর্তন সূচিত হয়। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অবলোহিত রশ্মির (তরাঙ্গ দৈর্ঘ্য 900 1400 nm) ব্যবহারকে মেডিক্যাল ক্ষেত্রে অবলোহিত থার্মোগ্রাফি (Infra Red Thermography) বলা হয়। এ পদ্ধতিতে বিশেষায়িত তাপীয় প্রতিচ্ছবি ক্যামেরা ব্যবহার করে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে বিকিরিত অবলোহিত রেডিয়েশন (তাপ) পরিমাপ করে একটি প্রতিচ্ছবিতে রূপান্তর করা হয়। যেমন:
আমাদের দেহে স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়ার ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা অবলোহিত রশি হিসেবে পরিবেশে বিকিরিত করে। কোনো কারণে উৎপন্ন তাপ সঠিকভাবে বিকিরণ না হলে, দেহের প্রোটিনকে ভেঙ্গে ফেলে। এতে করে দেহের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়, এতে বিকিরিত FIR এর পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রোটিন ধ্বংসের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। অপরদিকে, শরীরে কোথাও ক্যান্সার বা টিওমার সৃষ্টি হলে সেখানে অতিরিক্ত কোষের কারণে তাপ শোষিত হয়। এতে বিকিরিত FIR এর পরিমাণ স্বাভাবিক দেহের চেয়ে কমে যায়। আমাদের দেহে FIR এর পরিমাণ নির্ণয় করে কোন রোগ আছে কিনা তা নির্ণয় করা এবং FIR এর মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা Medical infrared thermography নামে পরিচিত।
IR এর আওতায় সাধারণভাবে IR রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 780nm থেকে 106nm এর আবার বেশ কতগুলো ভাগ আছে।
i. নিকটবর্তী IR [Near IR (NIR)] : এর আওতা হচ্ছে 780–1400nm. চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ব্যবহার ঘটে।
ii. তাপীয় IR [(Thermal IR(TIR)]) : 1400nm-3000nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অঞ্চলে কার্যকর এ পদ্ধতিতে তাপ দেয়া হয় বলে একে থার্মোগ্রাফি বলে। এটি ব্যবহার করে যে প্রতিচ্ছবি (image) পাওয়া যায় তকে থার্মোগ্রাফ বলে।
iii. মধ্য তরঙ্গ IR [Middle IR (MIR)] : এর আওতা 3000–8000 nm. জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক শনাক্ত করলে এটি ব্যবহৃত হয়।
iv. শরীর IR রশ্মি : এর আওতা হলো 8000nm-12000nm. এটি শরীরে রোগ নির্ণয়ে বা ফিজিওথেরাপিতে ব্যবহৃত হয়।v. দূরবর্তী IR [Far IR] : এর পরিসর 25000–106nm. চিকিৎসাক্ষেত্রে IR রশ্মির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
এর মধ্যে FIR (Far infrared) এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি বিধায় শক্তির দিক থেকে এটি দুর্বল। FIR মানুষের ত্বক ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে ধারে ধীরে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কো ক্ষতি না করে রক্ত চলাচল বৃদ্ধিসহ শরায় কার্যাবলীকে গতিশীল করে দেয়। শরীরে FIR এর মাত্রা বেশি হলে মানুষ সুস্থ থাকে, বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। FIR মাত্রা কম হলে মানুষ অসুস্থ বোধ করে। সদ্যপ্রসূত শিশুর মস্তিস্কের ক্ষত নিয়ে । স্ক্যানিং কাজে near-IR রশ্মি ব্যবহার করা হয়।