প্রশ্ন: চর্বি বা লিপিড জাতীয় পদার্থের পচন প্রক্রিয়া কৌশল ব্যাখ্যা করো?
কৌশলটি নিম্নরূপ:
১ম ধাপ: এ ধাপে চর্বি বা লিপিড অণুটি অক্সিজেনের উপস্থিতিতে C- H বন্ধনের সুষম বিভাজন ঘটে এবং লিপিড ও পারঅক্সিহাইড্রোজেন ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন হয়।
L – H + O2 → L. + H – O – O. [ L. = যে কোন অসম্পৃক্ত জৈব এসিড]
২য় ধাপ: এ ধাপে ফ্রি-রেডিক্যাল দ্রুতবেগে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পার অক্সিলিপিড ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন করে।
L. + O2 → L – O – O.
৩য় ধাপ: এ ধাপে পার অক্সিলিপিড ফ্রি-রেডিক্যাল খাদ্যের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের সাথে পুনরায় বিক্রিয়া করে অস্থায়ী হাইড্রো পারঅক্সাইড অণু এবং লিপিড ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন করে। সবশেষে অস্থায়ী হাইড্রো পারঅক্সাইড অণু পুনরাই প্রাথমিক অতীব সক্রিয় ফ্রি-রেডিক্যাল তৈরি করে চেইন বিক্রিয়ায় আবার অংশগ্রহণ করে।
L – O – O. + L – H → L-O-O-H + L.
L-O-O-H → H- O – O. + L.
এই চেইন বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের পচন ঘটে এবং খাদ্যবস্তুতে কালো দাগ ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: খাদ্যের পচন রোধ করার ক্রিয়া কৌশল ব্যাখ্যা করো?
খাদ্যের পচন রোধ করার কৌশল: খাদ্য মূলত: জারণ এবং পরবর্তীতে শিকল বিক্রিয়ার মাধ্যমে পচন ঘটে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। সুতরাং এই জারণ ও শিকল বিক্রিয়া বন্ধ করতে পারলে খাদ্যের পচনরোধ সম্ভব। চর্বি বা লিপিড অণুর জারণে অংশগ্রহণকারী O2 ও শিকল বিক্রিয়ায় যে ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন হয় তা শোষণ করে, ক্রিয়া ক্ষমতা বন্ধ করার জন্য এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বলে। অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলা খাদ্যের ফ্যাটি এসিড হতে উৎপন্ন ফ্রি-রেডিক্যালের সাথে বিক্রিয়া করে কম সক্রিয় ও অধিক স্থায়ী ফ্রি-রেডিক্যাল গঠন করে। ফলে ফ্রি-রেডিক্যাল বিক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলো খাদ্যের জারণ ক্রিয়া রোধ করে খাদ্যকে সতেজ রাখে।
L. + A-H → L – H + A. ( কম সক্রিয় এবং অধিক স্থায়ী মূলক)
প্রশ্ন: চিনি এবং খাবার লবণ দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণের কৌশল ব্যাখ্যা করো
চিনি ও লবণ: চিনি ও লবণ উভয়ই অণুজীবের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। খাদ্য সংরক্ষণে 15% এর উপরে NaCl ব্যবহার করা হয় । NaCl দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণ করাকে কিউরিং বলে। চিনির ঘনত্ব যত বেশি হবে (সাধারণত 40 – 60%) খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে এটি তত বেশি কার্যকর হবে । জ্যাম, আচার, জেলিতে চিনির ঘনমাত্রা 65-70% । চিনির গাঢ় দ্রবণ অণুজীবের জন্য বিষের মত কাজ করে।
চিনি এবং খাবার লবণ দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণের কৌশল: চিনি এবং লবণ দ্বারা কোনো খাদ্য সংরক্ষণে এরা খাদ্য থেকে মুক্ত পানি শোষণ করে দ্রবণে পরিণত করে। ফলে আর্দ্রতার অনুপস্থিতিতে খাদ্যে অণুজীব জন্মাতে বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে তাই খাদ্যের পচন ঘটে না। চিনি এবং লবণ উভয়ই ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে অভিস্রবনীয় (Osmotic Pressure) চাপ সৃষ্টি করে কোষ প্রাচীরের ক্ষতি করে বা ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে অণুজীবের বেঁচে থাকা বা বংশ বিস্তার কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া চিনি এবং লবণ একত্রে কাজ করে খাদ্যের স্বাদ এবং গুণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। এরা কিছু উপকারী অণুজীব সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। মদে ঈস্ট দ্বারা চিনি ইথানলে পরিণত হয় এবং ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা চিনি উপকারী জৈব এসিডে পরিণত হয়। লবণ মোল্ড এবং ঈস্টের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জ্যাম, জেলি, আচার, মোরব্বা, বিভিন্ন আচার এ ব্যবহৃত চিনি খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে।
জলা মসলা অণুজীব ধ্বংস করতে পারে না। তবে অণুজীব ধ্বংসকারী পদার্থকে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। বিভিন্ন মসলা জাতীয় বস্তু যেমন- হলুদ, লবঙ্গ, রসুন, সরিষার তেল, হলুদ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা পচন কাজে বাধা দেয়। সরিষার তেল ব্যাকটেরিয়াকে খাদ্যবস্তুর সংস্পর্শে আসতে দেয় না।